বন্ধ নয়, আইনি কাঠামোর মধ্যে চালু হোক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২১-১০-০৫ ১১:০৯:২৯


বিশ্লেষকরা বলছেন, ইকমার্স ও সোশ্যাল মিডিয়া তথা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে পণ্য বিক্রয়কারী এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষ প্রতারিত হয়েছেন। প্রতারণার সেই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পুরো খাতে।

পুলিশ, র‌্যাব, গ্রাহক ও মালিকপক্ষের দাবি অনুযায়ী, চারটি প্রতিষ্ঠানের কাছে গ্রাহক ও সরবরাহকারীদের তিন হাজার ১২১ কোটি টাকা পাওনার তথ্য পাওয়া গেছে।

এর মধ্যে ইভ্যালির ৯৫০ কোটি, ই-অরেঞ্জের এক হাজার ১০০ কোটি, ধামাকার ৮০৩ কোটি ও এসপিসি ওয়ার্ল্ডের ২৬৮ কোটি টাকা দেনার তথ্য রয়েছে তারা বলছেন, অনলাইন কেনাকাটায় মানুষের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে।

দেশে ই-বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমসহ বিভিন্ন লেখনীতে অনলাইনভিত্তিক ‘প্রতারণার’ এমন বাণিজ্য একেবারে বন্ধ করতে জোরালো বক্তব্য রাখছেন।

তবে আইনজ্ঞরা বলছেন, ই-কমার্স বন্ধ করে দেওয়া কোনো সমাধান নয়। তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সগৌরবে ডিজিটাল বাণিজ্য পরিচালিত হচ্ছে। আমাদেরও একই পথে হাঁটতে হবে। বন্ধ নয়, ই- কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে একটি আইনি কাঠামোর মধ্যে আনতে হবে। গ্রাহকদের প্রতারণার হাত থেকে বাঁচাতে একটি রেগুলেটরি অথরিটি গঠন করে এ খাতকে সুশৃঙ্খল করতে হবে। একই সঙ্গে কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ই-কমার্স খাতকে আইনি কাঠামোর মধ্যে আনতে গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, গ্রাহককে প্রতারণার হাত থেকে বাঁচাতে ই-কমার্সকে অবশ্যই আইনি কাঠামোর মধ্যে আনতে হবে। পৃথিবীর সব দেশেই অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে এ ব্যবসা চলছে। আমাদের দেশে কেন এর ব্যত্যয় হবে?

এটিকে আইনি কাঠামোর মধ্যে আনতে হবে। আমি মনে করি যারা এ ধরনের ব্যবসা করবেন, ব্যবসার আকার বুঝে নির্দিষ্ট পরিমাণ জামানত সংরক্ষণের মাধ্যমে তাদের লাইসেন্স দিতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি যদি কোনো ধরনের প্রতারণার শিকার হন, তাহলে ওই জামানত থেকে ক্ষতিগ্রস্তকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া যেতে পারে। আর কেউ প্রতারিত হলে তিনি দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা করতে পারেন।

‘যদিও আমাদের দেশে অনলাইন ব্যবসার ধরনটি নতুন। কতিপয় ব্যক্তি তাদের অসাধু কার্যকলাপের জন্য এ খাতকে পেছনের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। অথচ এ খাতে অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছিল।’

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, সরকারের উচিত ছিল আইনি কাঠামো তৈরির পর ই-বাণিজ্যের সুযোগ দেওয়া। কোনো আইনি কাঠামো না থাকায় গ্রাহকরা সহজেই প্রতারণার শিকার হলেন। এটি সরকারের ব্যর্থতা। এ খাতে আস্থা ফেরাতে এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে যুগোপযোগী ও শক্তিশালী একটি আইনি কাঠামো এখন সময়ের দাবি।

প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকদের হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আদৌ কি টাকা উদ্ধার সম্ভব, হলে কীভাবে এবং এ থেকে উত্তরণের উপায় কী— জানতে চাওয়া হয় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান আইনজীবী খুরশীদ আলম বলেন, ই-কমার্স বা এমএলএম (মাল্টিলেভেল মার্কেটিং) পদ্ধতির ব্যবসার মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বিপুল অঙ্কের টাকা। প্রতারণার মাধ্যমেই এমনটি করা হয়েছে বলে মনে করি। এখন হারানো অর্থ ফিরে পাওয়ার আইনি প্রক্রিয়াটি খুবই জটিল। এজন্য সময় লাগবে।

ক্ষতিগ্রস্তরা নিশ্চিত যে টাকা পাবেন, সেটিও এ মুহূর্তে বলা মুশকিল। এখানে আইনি প্রক্রিয়াগুলো আপনাকে দেখতে হবে। দুদক তদন্ত করছে, সরকার আইন বানাচ্ছে। সবকিছু প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। এখন হুট করে বলা যাবে না যে কালই গ্রাহক টাকা পাবেন।

আইনি কাঠামোতে যারা প্রতারণা করেছেন, তাদের হয়তো বিচারের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু টাকা ফিরে পাওয়ার বিষয়টি সময়সাপেক্ষ। কারণ, আইনে তো আসলে কিছুই স্পষ্ট করে বলা নাই।

এখন পর্যন্ত ১২টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পণ্য ও টাকা না দেওয়ার নানা অভিযোগ উঠেছে। মামলাও হয়েছে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, ধামাকা, কিউকম, নিরাপদ ডটকম, এসপিসি ওয়ার্ল্ড, সিরাজগঞ্জ শপ, আলেশা মার্ট, দালাল প্লাস, আদিয়ান মার্ট, আলাদিনের প্রদীপ ও প্রিয় শপ।

ওই ১২টি প্রতিষ্ঠানের কাছে সবমিলিয়ে গ্রাহক ও সরবরাহকারীদের পাওনা কত, তার সঠিক কোনো হিসাব নেই। তবে পুলিশ, র‌্যাব, গ্রাহক ও মালিকপক্ষের দাবি অনুযায়ী, চারটি প্রতিষ্ঠানের কাছে গ্রাহক ও সরবরাহকারীদের তিন হাজার ১২১ কোটি টাকা পাওনার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ইভ্যালির ৯৫০ কোটি, ই-অরেঞ্জের এক হাজার ১০০ কোটি, ধামাকার ৮০৩ কোটি ও এসপিসি ওয়ার্ল্ডের ২৬৮ কোটি টাকা দেনার তথ্য রয়েছে। এরই মধ্যে, রিং আইডির তিনটি ব্যাংক হিসাবের ১৫০ কোটি টাকা জব্দ করেছে সিআইডি।

সানবিডি/ এন/আই