পদ্মা ব্যাংকের একীভূত হওয়ার প্রস্তাব নাকচ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের
নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২১-১০-১০ ১৬:৩৯:৫৮
সরকারি যেকোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে সরকারকে দেওয়া পদ্মা ব্যাংকের প্রস্তাবে সায় দেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, একীভূত হওয়ার পরিবর্তে ব্যাংকটির জন্য বিদেশি বিনিয়োগ এনে মূলধন ঘাটতি পূরণ করাই ভালো হবে।
গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে এই মতামত জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। এর আগে গত জুলাই মাসে সরকারের কাছে একীভূত হওয়ার বিষয়ে আবেদন করে পদ্মা ব্যাংক।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘তারা দুটি প্রস্তাব দিয়েছিল- যার মধ্যে ছিল একীভূত হওয়া ও দেশের বাইরে থেকে বিনিয়োগ আনা। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে আমরা তাদের বাইরে থেকে বিনিয়োগ আনার প্রস্তাবে রাজি হয়েছি। এ বিনিয়োগ এলে দেশের জন্য, দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো হবে। বাইরের বিনিয়োগ এলে আমরা অনুমতি দিয়ে দেবো।’
আগে ব্যাংকটির নাম ছিল ফারমার্স ব্যাংক। নানা অনিয়ম আর ঋণ কেলেঙ্কারির মুখে চেয়ারম্যানের পদ ছাড়েন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দীন খান আলমগীর। অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় ব্যাংকটি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন ঘটে ২০১৭ সালে। এর পরের বছর ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান হন কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত।
নাজুক অবস্থা থেকে পদ্মা ব্যাংককে উদ্ধার করতে ৭১৫ কোটি টাকার মূলধন জোগায় রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচটি ব্যাংক। যা মোট মূলধনের ৬৬ শতাংশ। পদ্মা ব্যাংক অর্থের অভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হিমশিম খাওয়ায় গত জুলাই মাসে সরকারের কাছে নতুন আবেদন করে। আবেদনে সরকারি ব্যাংকের আমানতের বিপরীতে শেয়ার ইস্যু করার অনুমতি চায় বা সরকারি কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার প্রস্তাব দেয় ব্যাংকটি।
পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. এহসান খসরুর পাঠানো ওই প্রস্তাব পর্যালোচনার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়েছিল।
এর মধ্যেই গত ২৯ সেপ্টেম্বর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, “ব্যাংক যেগুলো মার্জার করা দরকার, সেগুলো মার্জার হবে। সেটার আইন (ব্যাংক কোম্পানি) ড্রাফট হয়ে গেছে। আমরা এগুলোকে সংসদে নিয়ে আসব। সেখান থেকে অনুমোদিত হয়ে যাওয়ার পর মার্জার কার্যক্রম শুরু হবে।”
কিন্তু ৫ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের মতামত জানিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে যে চিঠি দিয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে, পদ্মা ব্যাংক সরকারি ব্যাংকের আমানতের বিপরীতে শেয়ার ইস্যু করার যে প্রস্তাব দিয়েছে সেটা ব্যাংক কোম্পানি আইনের সাথে ‘সমঞ্জস্যপূর্ণ নয়’।
আর সরকারি কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার যে প্রস্তাব পদ্মা ব্যাংক দিয়েছিল, তাতেও সাড়া দেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক।
চিঠিতে বলা হয়েছে, সরকারের অনুমোদন ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে একীভূতকরণের সুযোগ বিদ্যমান ব্যাংক কোম্পানি আইনে আছে। দুর্দশাগ্রস্ত ব্যাংককে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক অন্য কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণ বা অবসায়নের ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে নিশ্চিত হতে হয় যে, একীভূত হলে তা তাদের পাওনাদার, শেয়ারহোল্ডার বা আমানতকারীরা সমানভাবে লাভবান হবে।
সেজন্য পক্ষগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রত্যয়ন নিয়ে হাই কোর্টে আবেদন করতে হবে। সেখানে বলতে হবে, একীভূত হলে তা পাওনাদার, শেয়ারহোল্ডার বা আমানতকারীদের ক্ষতির কারণ হবে না।
হাই কোর্টে আবেদন করতে হলে সেই ব্যাংক এবং একীভূত করে নিতে রাজি হওয়া অন্য ব্যাংকের দায় এবং সম্পদের মূল্য ও প্রকৃত অবস্থা নিরূপণে বিশেষ নিরীক্ষা করতে হবে।
এসব নিয়ম তুলে ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, “তাছাড়া সরকারি ব্যাংকগুলো নিজেরাই অধিক মাত্রায় খেলাপী ঋণ, মূলধন ঘাটতি ও অন্যান্য আর্থিক সূচকসহ, ব্যাংক পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে রয়েছে।”
পদ্মা ব্যাংকের দুই প্রস্তাব নাকচ করে ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে ওই প্রস্তাব দেওয়ার আগেই পদ্মা ব্যাংক যুক্তরাষ্ট্রের ডেলমর্গান অ্যান্ড কোম্পানির কাছে মূলধন চেয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক গত ২ অগাস্ট এ ব্যাপারে নীতিগত অনুমোদনও দিয়েছে।
“বর্ণিত প্রেক্ষাপটে এ পর্যায়ে ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে পদ্মা ব্যাংক কর্তৃক বৈদেশিক মূলধন আনা সম্ভব হলে তা করাই শ্রেয় হবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে।”
এএ