প্রেমিকের ফেসবুক হ্যাক করে হাতিয়ে নিলেন তরুণীর সাড়ে ৭ লাখ টাকা

জেলা প্রতিনিধি প্রকাশ: ২০২১-১০-১৩ ১৬:৩৮:২৩


রাজশাহীতে এক তরুণীর (২৮) প্রেমিকের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে প্রেমিক সেজে সাড়ে সাত লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এম ওয়াদুদ জিয়া (৩০) ওরফে জুয়েল নামের এক প্রতারক।

প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে মামলা করেন ভুক্তভোগী তরুণী। ওই মামলায় বুধবার (১৩ অক্টোবর) জুয়েলকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশের একটি টিম। নগরীর মকবুল হালদার মোড় এলাকা থেকে তাকে (৩০) গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার জুয়েল (৩০) দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ থানার বাঘাডুবিভবানীপুর গ্রামের মো. জাকারিয়া আনসারীর ছেলে। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে বিবিএ ও এমবিএ করেছেন। অর্থের প্রলোভনে তিনি এ প্রতারণায় জড়িয়ে পড়েন।

আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) পুলিশ কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিক।

ঘটনার বিবরণে পুলিশ কমিশনার বলেন, ২০১৯ সালের দিকে সিমা (ভুক্তভোগীর ছদ্মনাম) সঙ্গে আমিনুল রহমান নামের এক যুবকের ফেসবুকে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মেসেঞ্জারে যোগাযোগ হলেও তাদের সাক্ষাত হয়নি। আসামি জুয়েল আমিনুলের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে নিজেই প্রেমিক সেজে সিমার সঙ্গে প্রেমের অভিনয় শুরু করেন। কিছুদিন পরে জুয়েল আরও একটি ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে নিজেকে সিমার প্রেমিকের ঘনিষ্ঠ বন্ধু পরিচয় দেন। পরেন প্রেমিকের সঙ্গে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে সিমার বাসায় যান। সেখানে নিজের ল্যাপটপ হারানোর অজুহাত দেখিয়ে সিমার মায়ের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকার চেক নেয় জুয়েল।

পরে জুয়েল আরেকটি আইডি থেকে সিমাকে মেসেঞ্জারে বলেন, তোমার প্রেমিক ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা ব্যয় হচ্ছে। এ কথা বলে তার কাছ থেকে তিন লাখ টাকা নেন।

এদিকে সিমা ও তার পরিবার আমিনুলের সঙ্গে দেখা করার জন্য ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলে জুয়েল সিমাকে বলেন, ‘আমিনুল মারা গেছেন। আসার প্রয়োজন নেই। আমরা মরদেহ নিয়ে আমিনুলের গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি।’

এর কিছুদিন পরে জুয়েল আরও একটি ভুয়া আইডি খুলে আমিনুলের বোন পরিচয় দিয়ে সিমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তার ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য তিন লক্ষ টাকা ব্যয় করায় তাকে ধন্যবাদ জানান এবং টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর থেকে জুয়েল আমিনুলের বোন পরিচয়ে সিমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকেন এবং একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা বলেন।

জুয়েল চাকরির জন্য সাত লাখ টাকার প্রয়োজন বলে সিমাকে জানান। তিন লাখ টাকা আমিনুলের পরিবার দেবে, বাকি চার লাখ টাকা সিমাকে দিতে বলেন। তার কথামতো সিমা চাকরির আশায় চার লাখ টাকা দেন জুয়েলকে। টাকা নেওয়ার পরে জুয়েল তার ব্যবহৃত ভুয়া তিনটি আইডি বন্ধ করে সিমার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। আসামির ব্যবহৃত তিনটি আইডি আলাদা আলাদা নামে হলেও তিনি নিজেই তিনটি চরিত্রে অভিনয় করে সিমার সঙ্গে বিভিন্নভাবে প্রতারণা করে সাত লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন।

আরএমপি কমিশনার বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আসামি ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সত্যতা স্বীকার করেছেন। তার নয়টি ভুয়া ফেসবুক আইডি আছে বলেও স্বীকার করেন। সিমার (ভুক্তভোগীর ছদ্মনাম) কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া টাকা দিয়ে তিনি নিজ গ্রামে একটি গরুর খামার ও বাকি টাকা দিয়ে জমি কিনেছেন বলে স্বীকার করেছেন প্রতারক জুয়েল।

সানবিডি/ এন/আই