আ’লীগের সংসদীয় কমিটির ঘটনাস্থল পরিদর্শন
কুমিল্লার ঘটনায় আটক ৪৩, তদন্ত কমিটি
জেলা প্রতিনিধি প্রকাশ: ২০২১-১০-১৪ ২১:০৮:৪১
কুমিল্লা নগরীর নানুয়া দীঘির উত্তর পাড়ে রাস্তায় নির্মিত একটি পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরীফ রেখে অবমাননার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। বুধবার রাতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসানের নির্দেশে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: সায়েদুল আরেফিনকে প্রধান করে এ কমিটি গঠন করা হয়।
ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়িত সন্দেহে ৪৩ জনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বর্তমান পরিস্থিতি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ দিকে বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে আওয়ামী লীগের সংসদীয় কমিটি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গঠিত তদন্ত কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম তানভীর আহমেদ ও আদর্শ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকিয়া আফরিন। কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে এ বিষয়ে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
এ দিকে বৃহস্পতিবারও নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পুলিশের পাশাপাশি ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিজিবির টহল অব্যাহত রয়েছে।
অপর দিকে সহিংস ঘটনার কারণ জানতে আওয়ামী লীগের একটি সংসদীয় টিম বৃহস্পতিবার সকালে কুমিল্লায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের সাথে কথা বলেছেন। ওই টিমের নেতৃত্ব দেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন।
একই সময়ে ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো: আনোয়ার হোসেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর আওয়ামী লীগের নেতারা কুমিল্লা সার্কিট হাউজে দলীয় ও হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করেন। পরিদর্শনকালে হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে একটি গোষ্ঠী সহিংস এ ঘটনা ঘটিয়েছে। যারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।’
অপর দিকে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো: আনোয়ার হোসেন বলেন, সহিংসতার পর এ পর্যন্ত ফয়েজ আহাম্মদ নামের প্রধান সন্দেহভাজনসহ ৪৩ জনকে আটক করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ঘটনার শুরু থেকে নগরীতে ঘটে যাওয়া প্রতিটি ঘটনারই মামলা হবে ও জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।
আওয়ামী লীগের সংসদীয় কমিটির নেতাদের সাথে স্থানীয় প্রশাসনের বিকেলে পৃথক একটি বৈঠক করার কথা রয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
বুধবার কী ঘটেছিল?
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বুধবার সকালে কুমিল্লা মহানগরীর নানুয়া দীঘির উত্তরপাড়ে রাস্তার ওপর নির্মিত একটি পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন দেখতে পান। বিষয়টি দেখে ৯৯৯-এ পুলিশকে মোবাইল ফোনে কল করেন এক ব্যক্তি। এমন খবর পেয়ে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে গিয়ে পবিত্র কোরআন শরীফখানা সরিয়ে নেয়। এরপর ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
এ দিকে ধর্মগ্রন্থ অবমাননার এ বিষয়টি মুহূর্তের মধ্যে লোকজনের মুখে মুখে জানাজানি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধরা সেখানে জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা সেখানে যান ও বিক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান। কিন্তু এতেও পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হতে থাকলে পুলিশ টিয়ার শেল ও ফাঁকা গুলি চালায়। এ সময় জনতার সাথে পুলিশের সহিংসতায় আহত হয় পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন। পরে বিক্ষোভকারীরা নগরীর কয়েকটি স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নগরীতে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়।
এএ