মেলায় রপ্তানি আদেশ ২৩৫ কোটি বিক্রি ১২১ কোটি টাকা

প্রকাশ: ২০১৬-০১-৩১ ২২:২৮:৫২


DSC_4মাস ব্যাপী বাণিজ্য ও বিনোদনের উৎসব ভাংলো। ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা-২০১৬ ৩১ দিনের জমজমাট এ মেলা শুরু হয়েছিল বছরের প্রথম দিন শুক্রবার। শেষ হলো রবিবার সন্ধ্যায়। বাণিজ্যমেলার ইতিহাসে এবারের মেলায় সর্বচ্চো উপস্থিতি ছিলো বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। এ মেলা ‘জাতীয় বাণিজ্য উৎসবে’ পরিণত হয়েছে বলেও তিনি মনে করছেন।
রবিবার বিকেলে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে মেলামাঠেই আয়োজিত সমাপনী অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী আরো জানান, এই মেলায় ২৩৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা বা ৩০ দশমিক ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের রফতানি আদেশ বা অর্ডার পাওয়া গেছে। মাসব্যাপী এই মেলায় ১২১ কোটি ৪৭ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করেছেন ব্যবসায়ীরা। এর বিপরীতে মূসক আদায় হয়েছে প্রায় দুই কোটি টাকার। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সর্ম্পকিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম চৌধুরী এমপি, ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন-এফবিসিসিআই সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন ও ইপিবি ভাইস চেয়ারম্যান বেগম মাফরূহা সুলতানা।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এমপি বলেন, দেশ-বিদেশে বাণিজ্য মেলা দারুন সমাদ্রিত হয়েছে। ঢাকাবাসীসহ দেশের মানুষ মেলা উপভোগ করেছে। মেলা জাতীয় বাণিজ্য উৎসবে পরিত হয়েছে। তার মতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ব্যবসা বান্ধব সরকার। আর ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতির চালিকা শক্তি ব্যবসায়ীরা।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) মাকিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ১৬ শতাংশ রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের অনেক বাধা আছে। তবে কোন বাধাই বাংলাদেশের অগ্রগতি থামাতে পারবে না। কারণ- বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪৫তম অর্থনৈতিক দেশ। ক্রয়ক্ষমতার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ৩৩তম।

আব্দুল মাতলুব আহমাদ বলেন, এই বাণিজ্য মেলা নতুন বাজার সৃষ্টি ও দেশিয় বাজারে পণ্যের চাহিদা পূরণে কাজ করছে। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের চেষ্টাও রয়েছে। তাই সরকারের কাছে আমার দুটি প্রস্তাব হলো- ইপিবির সঙ্গে এফবিসিসিআইর এক হয়ে মেলার আয়োজন করতে পারে কি-না, এবং সব বিভাগীয় শহরে একযোগে মেলার আয়োজন করা। প্রস্তাব দুটি বিবেচনা করার জন্য তিনি সবার প্রতি অনুরোধ জানান।

এদিকে অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কৃত করা হয় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে। এর মধ্যে বড়ো দুটি ক্যাটাগরিতেই প্রথম হয়েছে দেশের শীর্ষ ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স, অটোমোবাইলস ও গৃহস্থালী পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন হাইটেক ইন্ড্রাস্ট্রি। এগুলো হলো সেরা প্রিমিয়ার প্যাভেলিয়ন ও সেরা মূসক দাতা। প্যাভিলিয়নের আধুনিক ও পরিবেশ বান্ধব নির্মাণশৈলী, দৃষ্টিনন্দন ডিজাইন, দর্শক-ক্রেতার পছন্দ, বাংলাদেশে তৈরি বিশ্বমানের ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক্যাল পণ্যের বিক্রয় এবং প্রদর্শণ, সবচেয়ে বেশি বিক্রি ইত্যাদি বিবেচনায় ওয়ালটন প্যাভিলিয়নকে সেরা হিসেবে নির্বাচিত করে মেলা কর্তৃপক্ষ। এছাড়া প্রিমিয়ার প্যাভেলিয়ন ক্যাটাগরিতে দ্বিতীয় হয়েছে হাতিল এবং তৃতীয় আখতার ফার্ণিচার, অলিম্পিক ও আবুল খায়ের। অন্যদিকে মূসক আদায়ে সেরা ওয়ালটন দিয়েছে শনিবার পর্যন্ত ৩০ দিনে সর্বোচ্চ ১৭ লাখ ৫৭ হাজার ৭৮৪ টাকা। এ ক্যাটগরীতে ১৬ লাখ ২১ হাজার ৬০৬ টাকা ভ্যাট দিয়ে ২য় পুরষ্কার পেয়েছে হাতিল কমপ্লেক্স লিমিটেড। আর ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা ভ্যাট দিয়ে তৃতীয় হয়েছে র‌্যাগস ইলেক্সনিক্স।

গতবছরের রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে অনুষ্ঠিত বাণিজ্যমেলার সময় বাড়ানো হলেও অপূর্ণতার আক্ষেপ নিয়ে শেষ হয়েছিল। এবার সম্পূর্ণ অনুকুল পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলো মেলা। ফলে আগে থেকেই ব্যবসায়ীদের আগ্রহ অনেক বেশি ছিল। অংশগ্রহণও গতবারের চেয়ে অনেক বেশি ছিল। তাছাড়া এবার মেলা শুরু শুক্রবার হওয়ায় পাঁচটি শুক্রবার ও পাঁচটি শনিবার পড়েছিল মেলায়। এতে ৩১ দিনের মেলায় ১০ দিনই ছিল সাপ্তাহিক ছুটি। ফলে শুরু থেকেই ক্রেতা-বিক্রেতার মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল এ মেলা। সর্বশেষ গত শুক্রবার ও শনিবার মানুষের যে ভিড় হয়েছিল তা মেলার ইতিহাসে সর্বোচ্চ বলে মন্তব্য করেছেন ব্যবসায়ী ও আয়োজকরা। গতকাল মেলার শেষ দিনও উপচেড়া ভিড়ে গোটা মেলা জনসমুদ্রে পরিণত হয়।

আরো যারা পুরস্কার পেল: সাধারন প্যাভিলিয়নে প্রথম হয়েছে কারুপণ্য রংপুর, দ্বিতীয় স্কয়ার ফুড, তৃতীয় শরীফ মেলামাইন। সাধারণ সংরক্ষিত প্যাভিলিয়নে পুরস্কার পেয়েছে জয়িতা ফাউন্ডেশন। প্রিমিয়ার মিনি প্যাভিলিয়নে প্রথম রহিম আফরোজ, দ্বিতীয় দুটি প্রতিষ্ঠান ইনসেপ্টা ও ওয়াশ আউট, তৃতীয় ম্যাক্স মটর, সাধারণ মিনি প্যাভিলিয়নে প্রথম কেএটি ইন্টারন্যাশনাল, দ্বিতীয় বেঙ্গল বিস্কুট, তৃতীয় গ্রামীন ডিস্ট্রিবিউশন এবং সংরক্ষিত মিনি প্যাভিলিয়নে প্রথম মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, দ্বিতীয় জনতা ব্যাংক, তৃতীয় হয়েছে মিল্ক ভিটা ও ডাচ্বাংলা ব্যাংক। প্রিমিয়ার স্টলে প্রথম হয়েছে হেলাল অ্যান্ড ব্রাদার্স, দ্বিতীয় সিঙ্গার বাংলাদেশ, তৃতীয় প্রাণ ডেইরী, ফুড স্টলে প্রথম কুটুম বাড়ি, দ্বিতীয় গোল্ডেন হারভেস্ট, সাধারন স্টলে প্রথম অ্যাগ্রো অর্গানিক, দ্বিতীয় ইউরো স্টার হোম অ্যাপ¬ায়েন্স ও তৃতীয় হয়েছে স্মার্টসক্স। নারী উদ্যোক্তায় প্রথম হয়েছে টোটাল প্যাকেজিং, দ্বিতীয় পশরা ও তৃতীয় কুষ্টিয়া হস্ত শিল্প।

এছাড়া মেলায় বিশেষ ভাবে আয়োজনের জন্য পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ, প্রতিবন্ধীদের নিয়ে তৈরি সারিকা ফ্যান্টাসি এমাজিং ওয়ার্ল্ড গিুপার্ক ও স্বাস্থ্য সেবার জন্য নভো নরডিকসহ ২৭ প্রতিষ্ঠানকে ক্রেস্ট দিয়ে সম্মাননা দেয়া হয়।