সেচ পানির মূল্য গত মৌসুমের দ্বিগুন, বিপাকে কৃষক

প্রকাশ: ২০১৬-০২-০১ ১৮:৪৮:২৭


naogaon deep tubewel picসারাদেশের মতো উত্তরাঞ্চলের খাদ্য ধান সমৃদ্ধ জেলা নওগাঁয় বোরো চাষের ভরা মৌসুম চলছে। কিন্তু সেচ পানির উচ্চমূল্যের কারণে বোরো আবাদে পানি সেচ দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন জেলার কৃষকেরা। ধানের দাম না বাড়লেও সেচ খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন বোরো চাষিরা।

বরেন্দ্র বহুমুখী প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত গভীর নলকূপের (ডিপ টিউবওয়েল) অপারেটর ও ব্যক্তি মালিকানাধীন পাম্প মালিকদের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে সেচ পানির দাম বাড়ানোর অভিযোগ করেছেন বোরো চাষিরা। এ অবস্থায় যাঁদের নিজের সেচ যন্ত্র নেই তাঁদের বাড়তি খরচ জোগাতে কম দামে আগাম ধান বিক্রি করতে হচ্ছে।

জেলার বিভিন্ন এলাকার ৩০-৪০ জন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বোরো আবাদে গত মৌসুমে এক বিঘা জমিতে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্পের গভীর নলকূপ (ডিপ টিউবওয়েল) থেকে সেচ দিতে কৃষকের খরচ হয়েছে সর্বোচ্চ ১ হাজার ২০০ টাকা। এ বছর একই পরিমাণ জমিতে ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার টাকা চুক্তিতে সেচ পানি বিক্রি করা হচ্ছে। কৃষকদের অভিযোগ, ডিপ টিউবওয়েলের অপারেটররা তাঁদের কাছে ঘন্টাভিত্তিক পানি বিক্রি না করে বিঘা প্রতি চুক্তিভিত্তিক পানি কিনতে বাধ্য করছেন। এতে তাঁদের বেশি খরচ হচ্ছে। ব্যক্তি মালিকানাধীন পানির পাম্প থেকে বিঘা প্রতি জমিতে পানি দিতে গত বছর খরচ হয়েছে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫০০ টাকা। এ বছর একই পরিমাণ নেওয়া হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত। প্রতি বিঘা জমিতে সেচ খরচ ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। অথচ সেচ পানির দাম বাড়লেও বাড়েনি ধানের দাম বরং কমেছে। এতে পানির পেছনে এই বাড়তি খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন বোরো চাষিরা।

সদর উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের চক জাফরাবাদ গ্রামের কৃষক কামাল মন্ডল বলেন, “গতবার পাম্প মালিকের কাছ থেকে বিঘা প্রতি ১২০০ টাকা করে পানি কিনেছিলাম। এবার ১৬০০ টাকা রেটে পানি কিনতে হচ্ছে। পানির দাম বাড়িয়েছে ৪০০-৫০০ করে, কিন্তু ধানের দামতো বাড়ে নাই। উল্টা গতবারের চেয়ে এবার ধানের দাম আরও কম। হামাগের মতো ছোটো খাট কৃষকদের উভয় দিকে মরণ। কষ্ট করে ফসল আবাদ করে কোনো লাভ নাই।”

নিয়ামতপুর উপজেলার চনন্দনগর উপজেলার বুধুরিয়া গ্রামের কৃষক নবির মন্ডল বলেন, ‘গত বোরো মৌসুমে ডিপ টিউবওয়েল থেকে পানি কিনতে খরচ হইছে এক হাজার টাকা। জমি তৈয়ার করা, পানি, সার, ও কীটনাশক দিতে প্রতি বিঘায় খরচ পড়ছিল চার হাজার টাকা। ধান বেঁচেছিলাম ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায়। এবার বাজারে ধানের দাম ৫৩০ থেকে ৫৭০ টাকা। অথচ সেচের পানির দাম বাড়ানো হয়েছে বিঘা প্রতি ৫০০ টাকা করে।’ পানির দাম জোগাতে কম দামে বাধ্য হয়ে আগাম ধান বিক্রি করতে হচ্ছে বলে জানান কৃষক নবির মন্ডল।

মান্দা উপজেলার গনেশপুর ইউনিয়নের গনেশপুর গ্রামের কৃষক কাজী আবুল কাসেম বলেন, ‘কি আর হবে কাগজত লেকা, হামার এখানে ৪ডিপেই (ডিপটিউবয়েল) জমি আছে গত বছর বিঘা প্রতি ১হাজার ৫০০ টাকা করে দিছি, এবার ২হাজার টাকা করে নিচ্ছে, এ্যার ১ ট্যাকা বাকি থুইয়া পানি দিবেনা।’

নওগাঁ বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মালেক বলেন, কৃষকদের কাছ থেকে ঘন্টা প্রতি ১১৫ টাকা করে নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কৃষকদের বাধ্য করে চুক্তিভিত্তিক পানি বিক্রি করা নিয়মবহির্ভূত।

তবে অপারেটররা কৃষকদের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে চুক্তিভিত্তিক গ্রহণযোগ্য হারে সেচ পানি বিক্রি করে থাকে। সেক্ষেত্রে আমরা বাধা দেই না। তবে কৃষকদের কাছ থেকে অন্যায্যভাবে সেচ পানি বিক্রির অভিযোগ পেলে সেক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নওগাঁয় চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৯৮ হাজার ৪৬৩ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের ১২ হাজার ৪৩৬ হেক্টর এবং উন্নত ফলনশীল (উফশী) জাতের ১ লাখ ৮৬ হাজার ২৭ হেক্টর। এ জন্য জেলায় ৯ হাজার ৯২৩ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে।

সানবিডি/ঢাকা/রাআ