ভারতে পদ্মশ্রী পেলেন সত্তরোর্ধ্ব নারী তুলসী গৌড়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশ: ২০২১-১১-১১ ১১:৪৪:১২


ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ভারতরত্ন। এরপর রয়েছে পদ্মবিভূষণ, পদ্মভূষণ ও পদ্মশ্রী। এ বছর পদ্মশ্রী পাওয়াদের মধ্যে বিশেষভাবে নজর কেড়েছেন এক নারী।

সোমবার ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনের লাল কার্পেটে ওই নারীকে দেখা যায় প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে খালি পায়ে হেঁটে আসতে। শুধু তাই নয় সত্তরোর্ধ্ব নারীর পরনেও ছিল খাটো শাড়ি। ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ উপস্থিত বিশিষ্টদের ভিড়ে সহজেই নজর কেড়ে নিয়েছেন এই বৃদ্ধা।

দেখতে একেবারে সাদামাটা এই নারী বিনয়ের সঙ্গে সকলকে প্রণাম জানিয়ে গ্রহণ করেন পদ্মশ্রী পুরস্কার। এ বছর মোট ১০২ জনকে পদ্মশী পুরস্কার দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলেন এই নারী।

এই নারী হলেন তুলসী গৌড়া। অন্যরকম তুলসীর পুরস্কার নেওয়ার অন্যরকম ছবি দেখে মানুষ যে আপ্লুত হয়েছেন, ফেসবুক-টুইটারেই তার প্রমাণ রয়েছে। ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোভিন্দ তার হাতে সর্বোচ্চ এই নাগরিক পুরস্কার তুলে দেন।

একেবারে সাদামাটাভাবেই মানুষের মন জয় করে নিয়েছেন তিনি। আদিবাসী শাড়ি পরিহিত তুলসীর নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সৌজন্য বিনিময়ের ছবিটিও ভাইরাল হয়েছে। মোদি নিজেও টুইট করেছেন ছবিটি।

কলকাতার সংবাদমাধ্যম এই সময় লিখেছে, তুলসী গৌড়াকে ‘অরণ্যের এনসাইক্লোপিডিয়া’ বলা হয়ে থাকে। কারণ, বিশ্বের প্রতিটি গাছ সম্পর্কে জ্ঞান রয়েছে তুলসীর। গাছের গুণাগুণ থেকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, সবটাই তার নখদর্পণে।

কর্ণাটকের হালাক্কি সম্প্রদায়ভুক্ত ৭২ বছরের বৃদ্ধা বরাবরই প্রকৃতিপ্রেমী। মাত্র ১২ বছর বয়স থেকেই তিনি বৃক্ষরোপণ করতে শুরু করেছিলেন। পরবর্তীতে বন দফতরের ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন তুলসী। বন সংরক্ষণের প্রতি তার ঝোঁক মুগ্ধ করেছিল ওই দফতরের কর্মকর্তাদের। সেই কারণেই পরবর্তীতে তুলসী ওই দফতরে চাকরি পেয়েছিলেন। পাশাপাশি, নিজের মায়ের নার্সারিতেও কাজ করতেন তিনি।

বন সংরক্ষণের কাজে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন তুলসী। নিজের হাতে রোপণ করেছেন ৩০ হাজারেরও বেশি গাছ। সেসব উদ্ভিদকে লালন করেছেন পরম যত্নে। ৭২ বছর বয়সেও তিনি যুব সম্প্রদায়কে বন সংরক্ষণের কাজে উদ্বুদ্ধ করছেন।

তুলসীর পুরস্কার পাওয়ায় ভারতের একজন শিল্পপতি আনন্দ মাহিন্দ্র টুইটে লিখেছেন, পদ্মশ্রী পুরস্কারের ধারা বদলে গিয়েছে। সমাজের ভেতর থেকে যারা সমাজকে অনন্য করে তুলছেন, তাদের পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করা হচ্ছে দেখে খুবই ভালো লাগছে। তাদের অবদান দেখে মনে হয়, এখনও অনেক কিছু করা বাকি রয়েছে। নিজেকে যোগ্য বলে মনেই হয় না।

আনন্দবাজার তাদের প্রতিবেদনে বলছে, স্কুল-কলেজের ধারে-কাছে যাওয়ার সুযোগ পাননি তুলসী। প্রথাগতভাবে পড়াশোনা না করলেও তার জ্ঞানের পরিধির কাছে বহু পণ্ডিতই মাথা নত করেছেন। স্কুল-কলেজের কাগুজে ডিগ্রি ছাড়াই গাছগাছালির খুঁটিনাটি নিজের আয়ত্তে নিয়েছেন ৭২ বছরের এই পরিবেশবিদ।

সোমবার নিজের কাজের জন্য সরকারি স্বীকৃতি পেলেন তিনি। তবে এমন স্বীকৃতির বহু আগে থেকেই অবশ্য নিজের কাজ দিয়েই নজর কেড়েছেন কর্নাটকের এই পরিবেশবিদ। অনেকেই কাছেই তিনি ‘জীবন্ত অভিধান’। গাছগাছালির নানা প্রজাতির সম্পর্কে তুলসীর মতো ওয়াকিবহাল মানুষ কমই দেখা যায়।

তুলসী যা করে যাচ্ছেন তার শুরুটা এতটা সহজ ছিল না। হতদরিদ্র পরিবারের তুলসী বাবাকে হারিয়েছিলেন মাত্র দু’বছর বয়সে। কম বয়সেই মায়ের হাত ধরে স্থানীয় একটি নার্সারিতে কাজে লেগে পড়েছিলেন। প্রকৃতির মাঝে থাকতে থাকতেই গাছগাছালির প্রতি টান জন্মেছিল। তা রক্ষায়ও মন দিয়েছিলেন ছোট থেকেই।

কর্নাটকের হালাক্কি জনজাতির কন্যা তুলসী পরিবেশ নিয়ে ভাবনা-চিন্তার শুরু হয়েছিল কিশোরীবেলায়। কিশোরী অবস্থাতেই বিয়ে, ঘরসংসার পাতা। তবে সংসার সামলেও পরিবেশ রক্ষার কাজে লেগে থেকেছেন তিনি।

আসলে তুলস যা করে যাচ্ছেন তার কোনো সীমানা নেই। গোটা বিশ্বের জন্য নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তিনি। আবার এমন এক সময়ে তিনি এই সম্মান পেলেন বিশ্ব যখন জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে চিন্তিত, গ্লাসগোয় বিশ্বের শীর্ষ নেতারা বসছেন একের পর এক বৈঠকে।

এ বছর ভারত যাদের পুরস্কৃত করল তার মধ্যে চার বাংলাদেশিও রয়েছেন। এদের মধ্যে এক বাংলাদেশি পেয়েছেন ‘পদ্মভূষণ’ আর বাকি তিনজন পেয়েছেন ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কার।

‘পদ্মভূষণ’ ও ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কার পাওয়া চার বাংলাদেশি হলেন : প্রয়াত রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী (পদ্মভূষণ), লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী সাজ্জাদ আলী জহির (অব.) (পদ্মশ্রী), প্রত্নতত্ত্বের জন্য অধ্যাপক এনামুল হক (পদ্মশ্রী) ও শিল্পকলার জন্য সানজিদা খাতুন (পদ্মশ্রী)।

সানবিডি/ এন/আই