খালেদার প্রতি প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতা নজিরবিহীন : তথ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২১-১১-১৮ ১৯:৫৬:৫১
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, খালেদা জিয়ার প্রতি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে মহানুভবতা দেখিয়েছেন সেটি নজিরবিহীন। সেটি আমি ব্যক্তি হিসেবে কখনো দেখাতে পারতাম না, অন্য কেউও পারত না। খালেদা জিয়া নিজেও পারতেন কি না সেই প্রশ্নটাও করা উচিত।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া আদালত কর্তৃক খালাস পাননি, জামিনও পাননি। এর পরও তাকে কারাগারের বাইরে রাখা হয়েছে। তিনি যখন কারাগারে ছিলেন, তখন তার সঙ্গে একজন গৃহপরিচারিকাকে থাকতে দেওয়া হয়েছিল। এই উপমহাদেশে ব্রিটিশ আমলে এমন হয়েছে কি না আমি জানি না, তবে দেশ বিভাগের পর পাকিস্তান কিংবা বাংলাদেশ আমলে হয়নি। এসব সম্ভব হয়েছে একমাত্র বঙ্গবন্ধুকন্যার মহানুভবতার কারণে।
বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে ৫৬তম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. শিরীন আখতার। প্রক্টর ড. রবিউল হোসেন ভুঁইয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর বেনু কুমার দে, সাবেক উপাচার্য আনওয়ারুল আজিম আরিফ, ড. এম বদিউল আলম, অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাবেক মুখ্যসচিব ড. আবদুল করিম, সেক্রেটারি মাহাবুবুল আলম, চাকসুর সাবেক ভিপি মাজহারুল হক শাহ, চাকসুর ভিপি নাজিম উদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এস এম মনিরুল হাসান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলা বিভাগের প্রফেসর ড. মহিবুল আজিজ।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, খালেদা জিয়া আবার সেই ব্যক্তি, যিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন একুশে আগস্টে গ্রেনেড হামলা হয়েছে তার পুত্রের পরিচালনায়। সেই গ্রেনেড হামলার পর তিনি পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে হাস্যরস করে বলেছিলেন আমাদের নেত্রী নাকি ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিল।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া সেই ব্যক্তি, যার দুয়ারে দেশের প্রধানমন্ত্রী গিয়ে ২০-২৫ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিল তার পুত্রের মৃত্যুতে সমবেদনা জানানোর জন্য। কিন্তু তিনি দরজা খোলেননি। তিনি সেই ব্যক্তি, যাকে ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী দাওয়াত দিয়েছিলেন, অশোভন আচরণ করে তিনি সেদিন প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তিনি সেই মানুষ, যিনি নিজের জন্মের তারিখটা বদলে দিয়ে ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডকে উপহাস করার জন্য সেদিন ভুয়া জন্মদিনের কেক কাটেন।
সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে সারা দেশে নৈরাজ্য চালাচ্ছে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বিবৃতির বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, মানুষের ওপর পেট্রলবোমা নিক্ষেপের রাজনীতি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবরাই করেছেন। মানুষকে দিনের পর দিন অবরুদ্ধ করে রাখার রাজনীতি, স্কুলছাত্রের ওপর বোমা নিক্ষেপ, বিশ্ব ইজতেমা ফেরত মুসল্লির ওপর বোমা নিক্ষেপ, মসজিদের মধ্যে মোয়াজ্জিনের ওপর হামলা এ সব কিছুই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবরাই করেছেন। মানুষের ওপর হামলা ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর হামলার রাজনীতি তারাই করেন, আমাদের দল এই রাজনীতির চর্চা করে না। তারা দেশে যে কী পরিমাণ নৈরাজ্য বিভিন্ন সময় চালিয়েছে, সেটি দেশের মানুষ ভুলে যায়নি।
এর আগে ৫৬তম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের অনুষ্ঠানে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, গত ৫৫ বছরের পথ চলায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দেশ ও জাতি গঠন, মানব সম্পদ উন্নয়ন, দক্ষ জনগোষ্ঠী সৃষ্টি এবং দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে অনবদ্য ভূমিকা রেখেছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু ছাত্র-ছাত্রী সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছে, যারা মেধার স্বাক্ষর রেখেছে। অনেকে রাজনীতিতেও তাদের অবস্থান সুসংহত করেছে। অনেক গবেষক গবেষণার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শুধু পাঠদান ও সার্টিফিকেট প্রদানের জন্য নয়, সেখানে পাঠদান হবে, ডিগ্রি প্রদান করা হবে, একই সঙ্গে সেখানে জ্ঞানের চর্চা হবে, সংস্কৃতি, মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তমতের চর্চা হবে। আমরা একটা জ্ঞান ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমরা একটি বহুমাত্রিক সমাজে বসবাস করি। জ্ঞানভিত্তিক, ন্যায়ভিত্তিক বহুমাত্রিক সমাজব্যবস্থা ব্যতিরেকে গণতন্ত্র সুসংহত হয় না। যেখানে জ্ঞান এবং বিজ্ঞানের চর্চা হয় না, যেখানে নিয়ম এবং নীতির ব্যত্যয় ঘটে, যেখানে মুক্তবুদ্ধির চর্চা হয় না, যেখানে মুক্তমতের অবদমন করা হয়, সেখানে সমাজ এগোয় না।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে অনেক অম্লমধুর স্মৃতি রয়েছে উল্লেখ করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, চাকসু ভবনের সামনে থেকে ১৯৮৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর আমাকে অপহরণ করে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছিল। তখন চট্টগ্রাম শহরে খবর রটেছিল আমাকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমার শরীরে এখনো বহু নির্যাতনের দাগ আছে। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার দাগ যেমন আছে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন ছাত্ররাজনীতির নেতৃত্ব দিতে গিয়ে বহু নির্যাতনের দাগ এখনো আমার শরীরে আছে। আবার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলের বিতর্ক টিমের ক্যাপ্টেন হিসেবে তখন জাতীয় টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় নেতৃত্ব দিয়েছিলাম।
তিনি বলেন, আজকে এই জায়গায় এসে কথা বলার ক্ষেত্রে, আমার জীবনকে এই পর্যায়ে নিয়ে যাবার ক্ষেত্রে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু অবদান আছে। প্রগতিশীল ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব যে সাহস এবং শক্তি আমাকে জুগিয়েছে, পরবর্তীতে তা রাজনীতির বন্ধুর পথপরিক্রমার ক্ষেত্রে জীবনকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
এএ