পরকীয়ার জেরে স্ত্রীকে হত্যায় স্বামীর যাবজ্জীবন
জেলা প্রতিনিধি প্রকাশ: ২০২১-১২-১৩ ১৬:০৮:১৫
লক্ষ্মীপুরে পরকীয়া নিয়ে ঝগড়ার পর স্ত্রী জ্যোৎস্না আক্তারকে হত্যার দায়ে স্বামী ইসমাইল হোসেন সুজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ সময় তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও এক বছর কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয়া হয়।
সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন।
লক্ষ্মীপুর জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) জসিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, স্ত্রীকে হত্যার দায়ে সুজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। রায়ের সময় সুজন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মামলার বাদী বাহার উদ্দিন বলেন, আমার মেয়েকে হত্যা করে সুজন হাসপাতালে ফেলে রেখে যায়। খবর পেয়ে হাসপাতাল ছুটে গিয়ে মেয়ের মৃতদেহ পাই। সুজনের যাবজ্জীবনে আমি সন্তুষ্ট।
এজাহার সূত্র জানা যায়, ২০১১ সালে সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের পেয়ারাপুর গ্রামের মমিন উল্যা পাটওয়ারীর ছেলে সুজনের সঙ্গে জ্যোৎস্নার বিয়ে হয়। তাদের সংসারে সৌরভ ও সুরভী নামে দুটি সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকে সুজনসহ তার পরিবারের লোকজন জ্যোৎস্নার ওপর মানসিক অত্যাচার চালায়।
শিশু দুটি কথা চিন্তা করে একাধিকবার সালিশের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা হয়। এর মধ্যে সুজন একটি মেয়ের সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে তোলে।
২০১৮ সালের ১৮ এপ্রিল পরকীয়ার ঘটনা নিয়ে সুজনের সঙ্গে তার ঝগড়া হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ২০ এপ্রিল স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন জ্যোৎস্নাকে বেদম মারধর করে।
খবর পেয়ে তার বাবা বাহার ওই বাড়িতে গিয়ে মেয়ের শরীরের বিভিন্ন অংশে জখমে চিহ্ন দেখে। ওই দিন ঘটনার মীমাংসা করে চলে এলেও পরদিন সকালে বাহারের কাছে খবর যায় তার মেয়েকে অচেতন অবস্থায় সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তাৎক্ষণিক গিয়ে বাহারসহ পরিবারের লোকজন হাসপাতালের বারান্দায় মেয়ের মরদেহ দেখতে পান। এ সময় সুজন ও তার পরিবারের কেউ-ই ছিল না।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, মৃত অবস্থায় জ্যোৎস্নাকে নিয়ে আসা হয়েছে। তার গলাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে জখমের চিহ্ন দেখা যায়। স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। ঘটনাটি ভিন্ন দিকে প্রভাবিত করতে স্থানীয়ভাবে জ্যোৎস্না গলায় ফাঁস দিয়েছে বলে রটানো হয়।
মেয়েকে হত্যার ঘটনায় বাবা বাহার উদ্দিন বাদী হয়ে ২২ এপ্রিল সুজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত তিনজনকে আসামি করে সদর মডেল থানায় মামলা করেন। বাহার লক্ষ্মীপুর পৌরসভার দক্ষিণ বাঞ্চানগর এলাকার বাসিন্দা।
মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ২২ এপ্রিল এলাকা থেকে সুজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে হত্যার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ১৬৪ ধারায় আদালতে সুজন জবানবন্দি দেয়। তদন্ত শেষে একই বছর ২৬ সেপ্টেম্বর সুজনের বিরুদ্ধে সদর থানা পুলিশ আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। গ্রেফতারের পর থেকে সুজন কারাগারেই ছিল। ১৫ সাক্ষীর সাক্ষ্য ও দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত সুজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।
সানবিডি/ এন/আই