১৭৩৪৮ কোটি টাকায় ১৫ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন
নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০২১-১২-২০ ১৭:৫৫:২৬
সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ১৫টি ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ১৭৩৪৮ কোটি টাকা।
সোমবার (২০ ডিসেম্বর) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় প্রস্তাবগুলোতে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সভায় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা কমিটির অতিরিক্ত সচিব মো. সামসুল আরেফিন।
সভা শেষে অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ৪১তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য ১৫টি প্রস্তাব উপত্থাপন করা হয়। ক্রয় কমিটির অনুমোদিত ১৫টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ১৭,৩৪৮ কোটি ৩৬ লাখ ৯৯ হাজার ৪৯২ টাকা। অনুমোদিত প্রস্তাবগুলো বিস্তারিত তথ্য জানাবেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সামসুল আরেফিন।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, ২০২২ সালের জন্য অপরিশোধিত জ্বালানি তেল (ক্রুড অয়েল) আমদানির অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল)-এ ২০২২ পঞ্জিকাবর্ষে প্রক্রিয়াকরণের জন্য প্রতি বছরের মত চুক্তি অনুযায়ী আবুধাবী এবং সৌদি আরব থেকে ১৬ লাখ মে.টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বিপিসির প্রস্তাবে ২০২২ সালে জিটুজি চুক্তির ভিত্তিতে সৌদি আরব থেকে ৭ লাখ মেট্রিক টন এএলসি ৩ হাজার ২১০ কোটি ৭১ লাখ টাকায় এবং আবুধাবী থেকে ৯ লাখ মেট্রিক টন মারবান ৪ হাজার ২৫৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকায়, সর্বমোট ১৬ লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল (ক্রুড অয়েল) আমদানি করবে। এতে মোট ব্যয় হবে ৮৬৯.৭৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭ হাজার ৪৬৭ কোটি ৬ লাখ টাকা। প্রতি ব্যারেল এএলসি ৭২.৬৯ মার্কিন ডলার এবং প্রতি ব্যারেল মারবানের দাম ৭২.০১ মার্কিন ডলার।
তিনি বলেন, সভায় ২০২২ সালের (জানুয়ারি থেকে জুন) সময়ে আন্তর্জাতিক কোটেশনের মাধ্যমে পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ৫টি প্যাকেজে তিনটি প্রতিষ্ঠান এই জ্বালানি তেল সরবরাহ করবে। টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান (১) প্যাকেজ-এ’তে পেট্রোচায়না ইন্টারন্যাশনাল, সিঙ্গাপুর (২) প্যাকেজ-বি, ডি ও ই’তে ইউনিপেগ সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড এবং (৩) প্যাকেজ-সি’তে ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড, সিঙ্গাপুর সর্বমোট ১২ লাখ ৯০ হাজার মে.টন জ্বালানি তেল সরবরাহ করবে। এতে মোট ব্যয় হবে ৮৮ কোটি ৮৪ লাখ ১৪ হাজার ৭২০ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭ হাজার ৬২৭ কোটি ৪ লাখ টাকা। প্রতি ব্যারেল: গ্যাস অয়েল ৩.১০ মা.ডলার, জেটএ-১: ৪.২৪ মা.ডলার, ফার্নেস অয়েল ২৮.৬৫ মা.ডলার, মোগ্যাস ৫.৫৮ মা.ডলার এবং মেরিন ফুয়েল ৩৫.৩৩ মা.ডলার। প্রস্তাবে গ্যাস অয়েল ১০ লাখ ৩০ হাজার মে.টন, জেট-এ-১: ১ লাখ ১০ হাজার মে.টন, ফার্নেস অয়েল ৪০ হাজার মে.টন, মোগ্যাস ৮০ হাজার মে.টন এবং মেরিন ফুয়েল ৩০ হাজার মে.টন আমদানি করা হবে।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘খুলনা পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং এসএন-২ এর আওতায় নির্মাণকাজ ক্রয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। কারিগরিভাবে রেসপন্সিভ ৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান চায়না জিও ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এজন্য ব্যয় হবে ৮৩০ কোটি ৩২ লাখ ৪৩ হাজার ৫৬১ টাকা।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পে পরামর্শক সেবা কাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে যৌথভাবে (১) নিপ্পন কোই.কোং লিমিটেড জাপান (২) ওরিয়েন্টাল কনসালট্যান্টস গ্লোবাল কো.লিমিটেড, জাপান (৩) সিপিজি কনসালট্যান্ট প্রাইভেট লিমিটেড প্রাইভেট লিমিটেড, সিঙ্গাপুর এবং (৪) ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালট্যান্টস লিমিটেড, বাংলাদেশ এর সঙ্গে ৫৭০ কোটি ৭৯ লাখ ৭৪ হাজার ২৫৬ টাকায় ২০২২ সালের ১৮ আগস্ট তারিখ পর্যন্ত ৬১ মাসের জন্য নিয়োগের চুক্তি করা হয়। প্রকল্পের কাজ চলা অবস্থায় মাঠ পর্যায়ে কাজের পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৫ এপ্রিল পর্যন্ত ৩২ মাস বৃদ্ধির জন্য ভেরিয়েশন বাবদ ২০০ কোটি ৯২ লাখ ২৩ হাজার ২০১ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সামসুল আরেফিন বলেন, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের গ্রীন সিটি আবাসিক কমপ্লেক্স-এ সাপ্লাইং ফিটিং অ্যান্ড ফিক্সিং অব ফার্নিচার সরবরাহ কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ দরদাতা প্রতিষ্ঠান ব্রাদার্স ফার্নিচার লিমিটেডকে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৯ কোটি ৯৯ লাখ ১ হাজার ২৪৫ টাকা।
সভায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের গ্রীন সিটি আবাসিক কমপ্লেক্স-এ সাপ্লাইং ফিটিং অ্যান্ড ফিক্সিং অব কারটেন অ্যান্ড এক্সেসরিজ সরবরারের একটি প্রস্তাকে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ইউরোশিয়া ফেল্ট ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেডকে এই কাজে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ব্যয় হবে ৪ কোটি ৬৩ লাখ ২৪ হাজার ৪২৪ টাকা।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের গ্রীন সিটি আবাসিক কমপ্লেক্স-এ হোম অ্যাপ্লয়েন্স সরবরাহ কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স জে.এ.পি ট্রেডিং প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ৫ কোটি ৭৯ লাখ ৯৬ হাজার ৫৭৪ টাকা।
তিনি বলেন, সভায় জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২১ প্রকল্পের আওতায় ট্যাবলেট ফর সিএপিআই ফর মেইন সেন্সাস ক্রয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়নি। প্রকল্পের আওতায় ৩ লাখ ৯৫ হাজার ট্যাবলেট সংগ্রহ করা হবে। প্রস্তবাটি সংশোধন করে পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে।
এছাড়াও সভায় খাগড়াছড়ি এবং রাঙ্গামাটি জেলার বিদ্যালয় বহির্ভুত শিশুদের শিখন কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য ইমপ্লিমেন্টেশন সাপোর্ট এজেন্সি (আইএসএ) এর সেবা ক্রয়ের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ‘চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪)’ প্রকল্পের আওতায় খাগড়াছড়ি জেলার ৭টি উপজেলা এবং রাঙ্গামাটি জেলার ৬টি উপজেলার বিদ্যালয় বহির্ভূত শিশুদের শিখন কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য আগ্রহ পত্র আহ্বান করা হয়। এতে সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত খাগড়াছড়ির জন্য ৬টি এবং রাঙ্গামাটির জন্য ৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে খাগড়াছড়ির জন্য ৪টি এবং রাঙ্গামাটির জন্য ৫টি আগ্রহ পত্র জমা পড়ে। সবগুলো প্রস্তাবই রেসপনসিভ হয়। সব প্রক্রিয়া শেষে পিইসি কর্তৃক নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সুপারিশকৃত সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান (১) খাগড়াছড়ি জেলার জন্য প্রগ্রেসিভ শিরোনামের প্রতিষ্ঠানকে ২২ কোটি ৩৭ লাখ ৩৩ হাজার টাকায় এবং (২) রাঙ্গামাটি জেলার জন্য আশ্রয় অঙ্গন শিরোনামের প্রতিষ্ঠানকে ১৯ কোটি ১৭ লাখ ৭০ হাজার টাকাসহ প্রকল্পে সর্বমোট ব্যয় হবে ৪১ কোটি ৫৫ লাখ ৩ হাজার টাকা।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য মিটারগেজ এবং ব্রডগেজ প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ সংগ্রহ’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং জিডি-১ এর ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পের আওতায় ২০০টি মিটারগেজ কোচ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইন্দোনেশিয়ার মেসার্স পিটি ইন্ডাষ্ট্রিজ কেরেটা এপিআই-এর কাছ থেকে ৫৭৯ কোটি ৩৮ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭০ টাকায় ক্রয়ের চুক্তি করা হয়। সে অনুসারে বর্ণিত মালামাল ও সেবা পাওয়া যায়। কিন্তু, চুক্তিপত্রের স্পেশিফিকেশনের বাইরে কিছু নতুন আইটেম যোগ হওয়ায় ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ৯ কোটি ৯৭ লাখ ৭৬ হাজার ৩৫৮ টাকা ব্যয় বেড়ে যায়। কমিটি এতে অনুমোদন দিয়েছে।
সভায় ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য মিটারগেজ এবং ব্রডগেজ প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ সংগ্রহ’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং জিডি-২ এর ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্যাকেজের আওতায় ৫০টি ব্রডগেজ কোচ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইন্দোনেশিয়ার মেসার্স পিটি ইন্ডাষ্ট্রিজ কেরেটা এপিআই-এর কাছ থেকে ২১২ কোটি ৮৭ লাখ ১৫ হাজার ১০৫ টাকায় ক্রয়ের চুক্তি করা হয়। চুক্তির স্পেশিফিকেশনের বাইরেও কিছু নতুন আইটেম যুক্ত হওয়ায় ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ৪ কোটি ৮০ লাখ ৪৮ হাজার ১৯ টাকা ব্যয় হয়েছে যাতে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
তিনি বলেন, ‘পাঁচদোনা-ডাঙ্গা-ঘোড়াশাল জেলা মহাসড়কে একস্তর নিচু দিয়ে উভয় পাশে পৃথক সার্ভিস লেনসহ ৪-লেনে উন্নীতরণ (ডাঙ্গা বাজার-ইসলামপুর লিংকসহ)’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং-পিডব্লিউ-২ এর পূর্ত কাজ ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ২৭৫ কোটি টাকা।
তিনি জানান, ‘পাঁচদোনা-ডাঙ্গা-ঘোড়াশাল জেলা মহাসড়কে একস্তর নিচু দিয়ে উভয় পাশে পৃথক সার্ভিস লেনসহ ৪-লেনে উন্নীতহকরণ (ডাঙ্গা বাজার-ইসলামপুর লিংকসহ)’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং-পিডব্লিউ-৩ এর পূর্ত কাজ ক্রয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে ক্রয় কমিটি। সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মাসুদ হাইটেক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ১৪৩ কোটি ৭৭ লাখ ৭৯ হাজার ২১৬ টাকা।
এছাড়াও সভায় পৃথক তিনটি প্রস্তাবে ৯০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে কাফকোসহ বিভিন্ন দেশ থেকে তিনটি লটে এসব সার আমদানি করা হবে। এজন্য ব্যয় হবে ৭২৭ কোটি ৪৯ লাখ ৩ হাজার ৮৯৪ টাকা।
এএ