রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে
আপডেট: ২০১৬-০২-০৮ ২০:৩৬:২৩
স্থিতিশীল হচ্ছে রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি। অর্থবছরের প্রথমার্ধে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আয় না হলেও দ্বিতীয়ার্ধে তা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। প্রথম ছয় মাসে এ খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল সাত দশমিক ৮৪ শতাংশ। সাত মাস শেষে তা দাঁড়িয়েছে আট দশমিক ২৬ শতাংশে। যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় দুই শতাংশ বেশি। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
রফতানিকারকগণ এটিকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন। তবে টাকার বিপরীতে কয়েকটি মূদ্রার দরপতন, সংস্কার কার্যক্রমসহ বেশ কিছু কারণে দেশে উত্পাদন খরচ বৃদ্ধি না হলে এবং গ্যাস-বিদ্যুতের সঙ্কট না থাকলে এই প্রবৃদ্ধি দ্বিগুণ হতো বলেই তারা মনে করছেন। তবে সংস্কার কার্যক্রমের ফলে আপাতত কম প্রবৃদ্ধি হলেও ভবিষ্যতে টেকসই শিল্প হিসেবে এটি দাঁড়াতে যাচ্ছে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ইপিবির পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় তিন হাজার ৩৫০ কোটি ডলার রফতানি আয়ের। আর গত সাত মাসের কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮৮৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এই লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে এ সময় আয় হয়েছে ১৯২৬ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। গত বছর এ সময় আয় হয়েছিল ১৭৭৯ কোটি ৯৩ লাখ ডলার। অর্থাত্ প্রবৃদ্ধি হয়েছে আট দশমিক ২৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ রফতানিকারক সমিতির সভাপতি ও বিজিএমইএ’র প্রাক্তন সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, রফতানি আয় বাড়ছে এটি ইতিবাচক। তবে কিছু সঙ্কট এখনো রয়ে গেছে। এগুলোর সমাধান করতে পারলে এই প্রবৃদ্ধি আরো বাড়তো। তিনি বলেন, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরপরেও গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে জ্বালানি তেলের দাম বিশ্ববাজারে কমলেও আমাদের দেশে কমছে না। পাশাপাশি ডলারসহ বিভিন্ন মূদ্রার দাম টাকার বিপরীতে কমে গেছে। এরফলে আমাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমে গেছে। তিনি বলেন, বড় কারখানাগুলোর উত্পাদন বাড়ছে বলেই প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। কিন্তু ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের কারখানা অনেকগুলোই বন্ধ হয়ে গেছে। স্থানান্তর করতে হবে অনেক কারখানা। এ ব্যাপারে আমরা সরকারের কাছে স্বল্প সুদে ঋণের দাবি জানিয়েছি। এই কারখানাগুলো আবার সচল হলে এই প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি হবে বলেও তিনি মনে করেন।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, পোশাকর খাতের মধ্যে নিট পোশাক রফতানিতে গত সাত মাসের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৪৮ কোটি ২১ লাখ ডলার আয়ের। বিপরীতে আয় হয়েছে ৭৬০ কোটি ১৭ লাখ ডলার। অর্থাত্ লক্ষ্যমাত্রা থেকে এ সময় এক দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি আয় হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল ৭১৭ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। অর্থাত্ সমাপ্ত ছয় মাসে প্রবৃদ্ধি হয়েছে পাঁচ দশমিক ৯১ শতাংশ।
আর ওভেন পোশাকে এ সাত মাসে ৭৯৫ কোটি ৫৪ লাখ ডলার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয় হয়েছে ৮১৫ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। অর্থাত্ লক্ষ্যমাত্রা থেকে এ সময় দুই দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি আয় হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল ৭২৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার। অর্থাত্ এ ছয় মাসে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ২৯ শতাংশ।
একক মাস হিসেবে গত জানুয়ারি মাসেও ভালো আয় হয়েছে রফতানিতে। ৩০৯ কোটি ২০ লাখ ডলারের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয় হয়েছে ৩১৮ কোটি ৫৬ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ বেশি। আর গত অর্থবছরের ডিসেম্বর মাসে রফতানি আয় হয়েছিল ২৮৮ কোটি ৫১ লাখ ডলার। পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে এ মাসে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৪১ শতাংশ।
গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারির তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে হিমায়িত খাদ্য রপ্তানি আয় ১৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ কমেছে। এছাড়া কৃষি পণ্য রপ্তানি ১৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ, প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি ১৪ দশমিক ০৭ শতাংশ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি ১ দশমিক ২২ শতাংশ, পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি ১ দশমিক ০৪ শতাংশ এবং হোম টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি ৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে।
গত অর্থবছরের প্রথম ৭ তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে পেট্রোলিয়াম বায়ো প্রোডাক্ট রপ্তানি আয় ৫৭৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া রাবার ও রাবার পণ্য রপ্তানিতে ৩৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য রপ্তানি ২৪ শতাংশ, কাঠ ও কাঠজাত পণ্য রপ্তানিতে ৫৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ, কেমিক্যাল পণ্য রপ্তানিতে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং হোম ওভেন গার্মেন্টস রপ্তানি আয় ১২ দশমিক ২৯ শতাংশ বেড়েছে।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস