৮০০ বস্তা চালসহ খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২২-০১-০৭ ১৭:২৮:৪৫


বরিশালের বাবুগঞ্জে খাদ্য গুদামের ভেতরে বসে সরকারি চালের বস্তা ভেঙে কালোবাজারির উদ্দেশ্যে প্লাস্টিকের বস্তায় প্যাকেট করার সময় ৮০০ বস্তা চালসহ হাতেনাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) ফরিদা খাতুন (৩২)। একইসঙ্গে তার অপকর্মের সহযোগী মোফাজ্জেল খানকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এসময় তাদের কাছ থেকে ২০ মে. টন সরকারি চাল ছাড়াও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সিলযুক্ত ৫০৭ টি সরকারি চালের খালি বস্তা এবং জোড়া কবুতর ও ডলফিন মার্কার ১ হাজার পিস মিনিকেট চালের খালি বস্তা উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় শুক্রবার উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রুবিনা পারভীন বাদী হয়ে ওসিএলএসডি ফরিদা খাতুন, তার সহযোগী মোফাজ্জেল খান এবং স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রসুল জমাদ্দারসহ পাঁচজনকে আসামি করে বাবুগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, খাদ্য বিভাগের উপ-পরিদর্শক ফরিদা খাতুন বাবুগঞ্জ উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) হিসেবে যোগ দেওয়ার পর তার স্বামী কবির হোসেনকে ভোলা থেকে নিয়ে আসেন। স্বামীর মাধ্যমে দীর্ঘ প্রায় ২ বছর ধরে তিনি উপজেলা খাদ্য গুদামের সরকারি চাল রাতের আঁধারে বস্তা বদল করে দেশের বিভিন্ন স্থানে চালের বড় আড়তে নিয়ে বিক্রি করতেন। ভিজিডি, টিআর, কাবিখাসহ বিভিন্ন প্রকল্পের বিপরীতে সরকারি বরাদ্দের চালের ডিও তিনি চেয়ারম্যান-মেম্বার এবং প্রকল্প সভাপতিদের কাছ থেকে কিনে সরকারি ৩নং খাদ্য গুদামে রাখতেন এবং সরকারি সিলযুক্ত ওই পাটের বস্তার চাল রাতের আঁধারে বিভিন্ন নামিদামি কোম্পানির প্লাস্টিকের বস্তায় প্যাকেটজাত করে ট্রাকে পাচার করতেন। এছাড়াও সরকারি ধান ক্রয় কর্মসূচিতে তিনি বাবুগঞ্জের কৃষকদের কাছ থেকে ধান না কিনে স্বামীর মাধ্যমে উত্তরাঞ্চল থেকে কম দামে নিম্নমানের ধান সংগ্রহ করে সরকারি অর্থ লোপাট করতেন। নির্বিগ্নে এসব অপকর্ম চালাতে তিনি স্থানীয় ৮-১০ জন দালালকে সঙ্গে নিয়ে বাবুগঞ্জে একটি শক্তিশালী চোরাই সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন।

বরিশাল জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ডিসি ফুড) মো. তাজুল ইসলাম জানান, বাবুগঞ্জের ওসিএলএসডি ফরিদা খাতুনের বিরুদ্ধে গুরুতর অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে তাকে হাতেনাতে ধরার পরিকল্পনা করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। সে অনুযায়ী সোর্সের মাধ্যমে গোপন সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাতে বাবুগঞ্জের ইউএনও এবং থানার ওসিকে নিয়ে উপজেলা খাদ্য গুদামে যৌথ অভিযান চালানো হয়।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আরও জানান, ওসিএলএসডি ফরিদা খাতুন ও তার সহযোগী মোফাজ্জেল খানকে হাতেনাতে আটক করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে দিয়ে থানায় একটি নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়।

বাবুগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আমীনুল ইসলাম জানান, গুদাম থেকে পাচারের উদ্দেশ্যে সাজিয়ে রাখা ৮০০ বস্তায় প্রায় ২০ মে. টন সরকারি চাল উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সিলযুক্ত ৫০৭টি খালি চটের বস্তা এবং বাজারের সেরা মিনিকেট চাল লেখা ১ হাজার পিস প্লাস্টিকের খালি বস্তা খাদ্য গুদাম থেকে একইসঙ্গে উদ্ধার করা হয়। ডিসি ফুড ও এসি ল্যান্ডকে নিয়ে ওই গুদামটি সিলগালা করা হয়েছে।

বাবুগঞ্জ থানার ওসি মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, খাদ্য গুদাম থেকে হাতনাতে ওসিএলএসডি ফরিদা খাতুন ও তার সহযোগী মোফাজ্জেল খানকে আটক করা হয় এবং ৮০০ বস্তা চালসহ অপরাধের বিভিন্ন আলামত জব্দ করা হয়।

তিনি আরও বলেন, খাদ্য অধিদপ্তরের পক্ষে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রুবিনা পারভীনের লিখিত অভিযোগ পেয়ে ৫ জন নামীয় এবং ২-৩ জন অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে ৭ শুক্রবার বাবুগঞ্জ থানার ২ নং মামলা রুজ্জু করা হয়। গ্রেপ্তার ২ আসামিকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হবে।

এএ