পোশাকের অতিরিক্ত ক্রয়াদেশ সরবরাহ নিয়ে সংশয়ে মালিকরা

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২২-০১-১১ ১৯:৪১:১৫


মহামারি করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন ছাড়াও আরো বেশকিছু কারণে ক্রয়াদেশ নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে পোশাক শিল্প-কারখানার মালিকদের মধ্যে। এর অন্যতম হলো ক্রেতার পক্ষ থেকে যথাযথ প্রয়োজন নিরূপণ ছাড়াই অতিরিক্ত ক্রয়াদেশ প্রদান। এদিকে কভিডের প্রভাবে দীর্ঘ বিরতির পর উৎপাদন সক্ষমতার বেশি ক্রয়াদেশ নিয়েছেন কারখানা মালিকরা। আবার অনেক ছোট কারখানা বন্ধ হওয়ায় সাব-কন্ট্রাক্টের সুযোগ কমে গেছে। পাশাপাশি কারখানা বন্ধ, কর্মচ্যুতি ও কভিডের প্রভাবে পেশা পরিবর্তনের কারণে রয়েছে কর্মী সংকট। সব মিলিয়ে বিপুল পরিমাণ ক্রয়াদেশ পেলেও তা সরবরাহ নিয়ে সংশয় প্রকাশ শুরু করেছেন পোশাক শিল্পোদ্যোক্তারা।

এ বিষয়ে পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, আমাদের প্রচুর ক্রয়াদেশ আছে। পাশাপাশি চ্যালেঞ্জও আছে। নানা কারণে সরবরাহ দেয়াটা কঠিন হয়ে পড়ছে। সবাইকে বলছি ক্রয়াদেশ দেখে বুঝে নিতে। দাম বাড়িয়ে নিতে বলছি। ক্রয়াদেশের বিপরীতে সরবরাহের সক্ষমতাও থাকতে হবে।

নারায়ণগঞ্জের পোশাক কারখানা ফতুল্লা অ্যাপারেলস। ইউরোপে নিয়মিত পোশাক রফতানিকারক এ প্রতিষ্ঠানকে বছরে চারবার ক্রয়াদেশ দেয় ফ্রান্সের ক্রেতা ফোপেম। প্রতিবারই ১৮-২০ হাজার পিস সরবরাহের ক্রয়াদেশে ফোপেম আমদানি করে মহিলাদের প্যান্ট, টি-শার্ট ও নাইট ড্রেস। এ অর্থবছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত যে ক্রয়াদেশ এসেছে, তাতে চাওয়া হচ্ছে ৩৫ হাজার পিসের সরবরাহ। এ অতিরিক্ত পণ্য সব বিক্রি হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

নিট পোশাক প্রস্তুতকারকরা বলছেন, বর্তমানে বিপুল পরিমাণ ক্রয়াদেশ নিয়ে ভীতির কারণ রয়েছে। দেখা গেছে, একটা বিরতির পর ক্রেতারা বিপুল পরিমাণ ক্রয়াদেশ দেন। তাদের লক্ষ্য থাকে সব বিক্রির। কিন্তু বাস্তবে তা পূরণ হয় না। অতিরিক্ত ক্রয়াদেশ দেয়ার পরবর্তী প্রভাব হিসেবে পণ্য মজুদ হয়ে যায়, বিক্রি হয় না। ফলে পরের মৌসুমে ক্রয়াদেশ কম দেন ক্রেতারা। বর্তমান প্রেক্ষাপটেও ভয় সেখানেই। বিপুল পরিমাণ ক্রয়াদেশ ক্রেতারা দিয়েছেন, কারখানা মালিকও গ্রহণ করেছেন। এখন এসব পণ্য মজুদ হতে পারে এমন শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এদিকে ইউরোপের বৃহৎ ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারাও ক্রয়াদেশ সরবরাহ নিয়ে সংশয়ের বিষয়টিতে একমত পোষণ করেছেন। ওমিক্রনের প্রেক্ষাপটে ক্রেতাদের ধীরে চলো নীতির বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে তারা বলছেন কারখানা মালিকরা উৎপাদন সক্ষমতার বিষয়টি আমলে না নিয়েই বিপুল পরিমাণ ক্রয়াদেশ গ্রহণ করেছেন। যার মাশুল দিতে হতে পারে।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পোশাক রফতানি প্রবৃদ্ধি হয় যথাক্রমে ১১ দশমিক ৫৬, ৪১ দশমিক ৬৬, ৫৩ দশমিক ২৮, ৩২ দশমিক ৩৪ এবং ৫২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির এ ধারায় গড়ে প্রতি মাসে পৌনে ৩ বিলিয়ন ডলারের রফতানি সক্ষমতার পোশাক খাত এক মাসে ৪ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি পোশাক রফতানি করেছে। মালিক সংগঠন প্রতিনিধিদের পক্ষ হতে প্রতি মাসে ৮ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানির লক্ষ্যের বিষয়েও বলা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে স্থানীয় ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় অতিরিক্ত ক্রয়াদেশ সরবরাহ নিয়ে সংশয়ের জানান দিচ্ছেন তারা।

সানবিডি/এনজে