নতুন ৮ কোম্পানির লাইফ ফান্ড ঋণাত্মক
আপডেট: ২০১৬-০২-১২ ১১:৫৬:৪৬
নতুন ব্যবসা শুরু করা ৮টি জীবন বীমা কোম্পানির লাইফ ফান্ড ঋণাত্মক অবস্থায় রয়েছে। অর্থাৎ কোম্পানিগুলোর বর্তমানে যে সম্পদ রয়েছে তার থেকে দায়ের পরিমাণ বেশি। আয়ের তুলনায় মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় করায় এবং নবায়ন প্রিমিয়াম আয় কম হওয়ায় লাইফ ফান্ডের ঋণাত্মক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। কোম্পানিগুলো হলো- এনআরবি গ্লোবাল লাইফ, বেস্ট লাইফ, চাটার্ড লাইফ, প্রোটেক্টিভ লাইফ, স্বদেশ লাইফ, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ, জেনিথ ইসলামী লাইফ এবং যমুনা লাইফ।
বীমা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী বছরের মধ্যে কোম্পানিগুলোর লাইফ ফান্ড ধনাত্মক না হলে বীমা পলিসি গ্রাহকদের অর্থ ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে। তবে প্রতিষ্ঠানগুলোর লাইফ ফান্ডের চিত্রে দেখা যাচ্ছে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে লাইফ ফান্ডের ঋণাত্মকের পরিমাণও বাড়ছে।
তবে নতুন বীমা কোম্পানিগুলোর মূখ্য নির্বাহীরা বলছেন, কোম্পানিগুলো ব্যবসা করছে মাত্র ৩ বছর হলো। ব্যবসা শুরুর প্রথম বছরগুলোতে লাইফ ফান্ডের এমন চিত্র অস্বাভাবিক নয়। আগামী বছরের মধ্যে কোম্পানিগুলোর প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয়ের পাশাপাশি নবায়ন প্রিমিয়াম সংগ্রহ বাড়বে। ফলে লাইফ ফান্ডের এ ঋনাত্মক অবস্থা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে যমুনা লাইফের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজীৎ কুমার মণ্ডল বলেন, আমাদের লাইফ ফান্ড ঋনাত্মক অবস্থায় থাকলেও তা গ্রাহকের দাবি পরিশোধে কোনো সমস্যা হবে না। গত বছর আমরা ৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা প্রিমিয়াম আয় করেছি। আগামী বছরের মধ্যে ৪০ শতাংশ নবায়ন প্রিমিয়াম আয় হবে বলে আশা করছি। এতে লাইফ ফান্ডের এ ঋণাত্মক অবস্থা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।
তবে ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি আইডিআরএ’র কাছে যে প্রতিবেদন দিয়েছে তার তথ্য অনুযায়ী বছরটিতে নবায়ন প্রিমিয়াম আয় হয়েছে মাত্র ১০ শতাংশ। ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠানটির প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয় ছিল ১০ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এরমধ্যে ২০১৫ সালে নবায়ন প্রিমিয়াম বাবদ আদায় হয়েছে মাত্র ১ কোটি ৬ লাখ টাকা।
জেনিথ ইসলামী লাইফের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন বলেন, নতুন একটি জীবন বীমা কোম্পানির শুরুতে খরচ অনেক বেশি হয়। তবে লাইফ ফান্ড ঋণাত্মক অবস্থায় থাকা মানেই কোম্পানিটি দাবি পরিশোধে অক্ষম নয়। আমরা ২ বছর আগে ব্যবসা শুরু করেছি। গ্রাহকের দাবি বলতে এখন শুধু মৃত্যুদাবি পরিশোধ করতে হয়।
এছাড়া পলিসি এখনো মেয়াদ পূর্ণ করেনি। অন্যদিকে অন্তর্বর্তীকালিন দাবি পরিশোধেরও সময় হয়নি। ফলে লাইফ ফান্ডের বর্তমান ঋণাত্মক অবস্থা বড় কোনো বিষয় নয়। আগমী এক বছরেই আমরা লাইফ ফান্ডের এ ঋণাত্মক অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারব। আগামী বছর কোম্পানিটির নবায়ন প্রিমিয়াম আয় ৫০ শতাংশ বাড়ার পাশাপাশি খরচও কমে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন জেনিথ ইসলামী লাইফের এই মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা।
তবে জেনিথ ইসলামী লাইফে গত বছরে নবায়ন প্রিমিয়াম আয় হয় ২০ শতাংশ। কোম্পানিটি ২০১৪ সালে প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয় করে ৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। ২০১৫ সালে এসে নবায়ন প্রিমিয়াম আয় করে ২ কোটি ১ লাখ টাকা। ২০১৫ সালে কোম্পানিটি প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয় করেছে ১৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
নতুন কোম্পানিগুলোর প্রিমিয়াম আয়ের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৫ সালে মাত্র ৩টি কোম্পানি ২০ শতাংশের উপরে নবায়ন প্রিমিয়াম আদায় করতে পেরেছে। কোম্পানি ৩টি হলো ডায়মন্ড লাইফ, বেস্ট লাইফ ও চাটার্ড লাইফ। বাকি সবক’টি কোম্পানির নবায়ন প্রিমিয়াম আয় ১০ শতাংশের নীচে।
তথ্য পর্যালোচনায় নায় দেখা গেছে, ২০১৫ সাল শেষে লাইফ ফান্ড সব থেকে বেশি ঋণাত্মক জেনিথ ইসলামী লাইফের। এ প্রতিষ্ঠানটির লাইফ ফান্ড ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা ঋণাত্মক অবস্থায় আছে। আগের বছর ২০১৪ সালে এই জীবন বীমা কোম্পানিটির লাইফ ফান্ড ঋণাত্মক ছিল ২ কোটি ৪১ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটির লাইফ ফান্ড ঋণাত্মকের আকার বেড়েছে ২ কোটি ২৯ লাখ টাকা।
এর পরের স্থানেই রয়েছে যমুনা লাইফ। ২০১৫ সাল শেষে প্রতিষ্ঠানটির লাইফ ফান্ড ৪ কোটি ১২ লাখ টাকা ঋণাত্মক অবস্থায় আছে। আগের বছর কোম্পানিটির লাইফ ফান্ড ঋণাত্মক ছিল ১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে ঋণাত্মক লাইফ ফান্ড বেড়েছে ২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।
তৃতীয় স্থানে থাকা এনআরবি গ্লোবাল লাইফের লাইফ ফান্ড ২০১৫ সাল শেষে ২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ঋণাত্মক অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠানটির লাইফ ফান্ড ঋণাত্মক ছিল ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক বছরে প্রতিষ্ঠানটির লাইফ ফান্ডের ঋণাত্মকের পরিমাণ বেড়েছে ১ কোটি ২২ লাখ টাকা।
প্রোটেক্টিভ লাইফের লাইফ ফান্ড ২০১৫ সাল শেষে দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। আগের বছর ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠানটির লাইফ ফান্ড কি অবস্থায় ছিল তা আইডিআরএ’কে জানায়নি প্রোটেক্টিভ লাইফ।
বেস্ট লাইফের ঋণাত্মক লাইফ ফান্ড ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে বেড়েছে ৪৫ লাখ টাকা। ২০১৫ সাল শেষে প্রতিষ্ঠানটির লাইফ ফান্ড দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৯২ লাখ টাকা। যা আগের বছর ছিল ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
এছাড়া ২০১৫ সাল শেষে চাটার্ড লাইফের লাইফ ফান্ড দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। যা ২০১৪ সালে ছিল ১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটির ঋণাত্মক লাইফ ফান্ড আগের বছরের তুলনায় কমেছে ৩০ লাখ টাকা।
আগের বছরের তুলনায় ঋণাত্মক লাইফ ফান্ড কমলেও ২০১৫ সাল শেষে ট্রাস্ট ইসলামী লাইফের ঋণাত্মক লাইফ ফান্ড দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা। যা ২০১৪ সালে ছিল ২ কোট ১৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক বছরে প্রতিষ্ঠানটির ঋণাত্মক লাইফ ফান্ড ১ কোটি টাকা কমেছে।
লাইফ ফান্ড ঋণাত্মক থাকা আর এক প্রতিষ্ঠান স্বদেশ লাইফ। ২০১৫ সাল শেষে প্রতিষ্ঠানটির লাইফ ফান্ড ৭৩ লাখ টাকা ঋণাত্মক অবস্থায় রয়েছে। ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠানটির লাইফ ফান্ড ঋণাত্মক ছিল ২১ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে এই জীবন বীমা কোম্পানিটির ঋণাত্মক লাইফ ফান্ড বেড়েছে ৫২ লাখ টাকা।
সানবিডি/ঢাকা/অাহো