অর্থপাচার রোধে দক্ষিণ কোরিয়ার মতো আইন চান কৃষিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০২২-০১-২৬ ১৫:১৯:৫৫


বিদেশে অর্থপাচার রোধে দক্ষিণ কোরিয়ার উদাহরণ টেনে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, দেশটি থেকে এক সময় অনেক অর্থপাচার হতো। কঠোর আইন ও শাস্তির কারণে তা বন্ধ হয়েছে। বাংলাদেশেও তাই করা উচিত।

বুধবার (২৬ জানুয়ারি) আর্ন্তজাতিক কাস্টমস দিবস উপলক্ষে রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন। অর্থপাচার রোধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে কঠোর হওয়ার তাগিদ দেন তিনি।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, আজ দক্ষিণ কোরিয়া এতো উন্নত হলো, তা কীভাবে সম্ভব হয়েছে। কারণ মানিলন্ডারিংয়ের বিরুদ্ধে তাদের দেশে বড় ধরনের শাস্তির ব্যবস্থা ছিল। এর মাধ্যমে তারা বৈদেশিক মুদ্রাকে রক্ষা করে ভারী শিল্পের দিকে গেছে। শুধু ইলেকট্রনিক্স নয়, সব ভারী শিল্পে তাদের ভূমিকা রয়েছে। কাজেই আমাদেরও বৈদেশিক মানিল্ডারিংয়ের বিষয়ে কঠোর হতে হবে।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ওভার-ইনভয়েস ও আন্ডার-ইনভয়েসের মাধ্যমে বিরাট অংকের টাকা বাংলাদেশ থেকে বিদেশে চলে যায়। প্রতিনিয়ত আমাদের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা হচ্ছে। যেমন- ব্যবসায়ীরা কিংবা সরকারি চাকরিজীবীরা দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের টাকা বিদেশে পাচার করছে। এখানে আপনারা (কাস্টমস) অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারেন। ডিজিটালাইজেশন এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সিস্টেমস ডিজিটাল হলে কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ কমে যায়। আমাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে ফাঁকির সুযোগ কমাতে হবে।

তিনি বলেন, শিল্পকারখানা করতে হলে আমাদের অনেক বৈদেশিক মুদ্রা দরকার হবে। বাংলাদেশে শিল্পায়ন হলে অনেক মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হবে। সেটি করতে গেলে আমাদের ৪৭ বিলিয়নের যে রিজার্ভ, সেটি কিন্তু আর থাকবে না। এখন শিল্পায়ন সেভাবে হচ্ছে না। আমরা শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও কাঁচামাল আমদানি করছি। কিন্তু বড় বড় শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানি করতে যে বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন হবে, সেটা আমাদের রক্ষা করতে হবে।

কাস্টমস বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রতি শপথের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনাদের শপথ নিতে হবে যে কোনোভাবেই ব্যবসায়ীরা যেন বিদেশে টাকা পাচার না করতে পারে। ডিজিটালাইজেশনের বড় একটি ভূমিকা এখানে আছে বলে মনে করি। আমরা অনেক উন্নত হয়েছি, আমাদের আরো উন্নত ও দক্ষ হতে হবে।

আবদুর রাজ্জাক বলেন, দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে রয়েছে। এটাকে আরো ত্বরান্বিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে কাস্টমস দিবসের আজকের প্রতিপাদ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সবক্ষেত্রে এটি যদি বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে অবশ্যই আমাদের লক্ষগুলো অর্জন করতে পারব। এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পর শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধার অনেকগুলোই থাকবে না। সে সময় উন্নত দেশের সঙ্গে কাস্টমসের সিস্টেমগুলো কী হবে, কীভাবে আমাদের সুবিধাগুলো নেব, সে সময় কাস্টমস কর্মকর্তাদের আরো দক্ষ হতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের কর জিডিট অনুপাত অনেক কম। যেটা ১০ শতাংশেও উত্তীর্ণ হচ্ছে না। পাশ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল কিংবা ভুটানের চেয়ে অনেক কম। আমাদের দুই জিনিসের প্রতি নজর দিতে হবে। একটি মানিলন্ডারিং ও কর জিডিপি অনুপাত। এই দুটি বিষয়ে কীভাবে দৃষ্টান্তমূলকভাবে উত্তরণ পেতে পারি, সে বিষয়ে লক্ষ্য নিয়ে আপানরা কাজ করবেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসাবে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মামুদ চৌধুরী ও ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট মো. জসিম উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।

বাংলাদেশসহ ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশনের (ডাব্লিউসিও) সদস্যভুক্ত ১৮৩টি দেশে একযোগে দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে। ২০০৯ সাল থেকে ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশন ২৬ জানুয়ারিকে কাস্টমস দিবস হিসেবে ঘোষণা করার পর থেকেই বাংলাদেশও দিবসটি উদযাপন করছে। এবারে ১৪ম আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস উদযাপিত হচ্ছে।

ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশন এবারের কাস্টমস দিবসের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘তথ্য সংস্কৃতি বিকাশ এবং তথ্য ইকোসিস্টেম বিনির্মাণের মাধ্যমে ডিজিটাল কাস্টমসের সম্প্রসারণ।’ প্রতিপাদ্যে তিনটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে- ডিজিটাল কাস্টমসের সম্প্রসারণ, তথ্য-উপাত্ত চর্চা ও তথ্য প্রতিবেশ।

এএ