ভালোবাসা দিবসের চুমু ও রক্তের সম্পর্ক নিরুপণে বঙ্গসন্তানের ব্যর্থতা

আপডেট: ২০১৬-০২-১২ ১৫:২৬:০৫


6363d-preachingauthenticislaminbanglaবাঙলাদেশে ১৯৮৩ সনে সামরিক বাহিনী জোর করে বন্দুক দিয়ে গুলি করে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে ক্ষমতায় ছিলো। জিয়া ও এরশাদ নামক দুই রক্তপিপাসু ঠান্ডা মাথার খুনী সেনাপতির শাসনে সত্তরের শেষে এবং আশির দশক পুরোটা জুড়ে এ দেশে ধর্মীয় মৌলবাদের পুণর্জাগরণ ঘটে। জিয়ার হাতে শুরু, এরশাদ তাকে পূর্ণতা দেয় আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রধর্ম যুক্ত করে। মানুষও থেকে থেকে এই সামরিক স্বৈরাচারীদের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে। তেমনই এক দিন ১৯৮৩ সনের ১৪ ফেব্রুয়ারী। খুনী এরশাদের পুলিশ ঢাকায় শিক্ষার্থীদের মিছিলে গুলি চালিয়ে মানুষ খুন করে। সেই লাল রক্তের উপর আমরা হাঁটি এই ঢাকা শহরে।
সন্ত ভ্যালেন্তিন প্রেমের জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন ২৫০ সনের দিকে। এরশাদের অসামরিক ভৃত্যদের অন্যতম ছিলো শফিক রেহমান নামক সাংবাদিকতা করে ভাত জোগাড় করা এক বদমাইশ হোমোস্যাপিয়েন্স। ১৯৮৩ সনের ১৪ ফেব্রুয়ারীর আগে সে ভ্যালেন্টাইনস ডে সম্পর্কে জানতো না এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। কিন্তু জয়নাল দিপালীরা শহীদ হবার আগে, এই দিনে আন্তর্জাতিকভাবে কোন দিবস পালন করা হয় আর তা এই দেশে কিভাবে জনপ্রিয় উৎসব আকারে ছড়িয়ে দেয়া যায় সে চিন্তা মোসাহেবটির মাথায় আসেনি। শফিক রেহমানদের ১৪ ফেব্রুয়ারীকে রঙিন করার দরকার পড়েছিল প্রভূ এরশাদের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক সংগ্রামের জয়ের একটা ধাপকে বিস্মৃত করে দেবার চিন্তা থেকেই। সর্বক্ষন পকেটে গোলাপ নিয়ে ঘুরে বেড়ানো শফিক রেহমান কি জানে না যে এই ফেব্রুয়ারী মাসেরই ৭ তারিখ বিশ্ব গোলাপ দিবস? কিন্তু গোলাপ দিবসের ৭ ফেব্রুয়ারী নয়, তার প্রয়োজন ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারীকে বিস্মৃত করা। আর ভালবাসা দিবসের সাথে পরিচয় করালেও সন্ত ভ্যালেন্তিনের আত্মত্যাগের মহীমাকে খুব সচেতনভাবে আড়ালে রাখতে সে সফল হয়েছে। ত্যাগের, সঙ্কল্পের, দৃঢ মনোবল আর উন্নত শিরের শিক্ষা দেয়া ১৪ ফেব্রুয়ারি এখানে ভোগবাদী উৎসব হিসেবে আছে। এহিসেবে শফিক রেহমানকে সাময়িকভাবে সফল বলতে হয় বৈকী! আমার ধারনা, ১৪ ফেব্রুয়ারীর গৌরবময় স্মৃতি ভোলাতে এদিন আন্তর্জাতিকভাবে ‘ফার্ট ডে’ থাকলে এইসব বুদ্ধিবেশ্যারা পাদপাদি নিয়েই মেতে থাকতো। সে হয়তো সবাইকে জড়ো হয়ে পাদতে উৎসাহিত করতো। পেদে পেদে গ্যাস সংগ্রহ করে তা ব্যবহার করে প্রাকৃতিক সম্পদের উপর চাপ কমাতে উৎসাহিত করতো। কুকুরের ন্যাজ বলে কথা!
এবারের ১৪ ফেব্রুয়ারীতে যারা চুম্বন-বিপ্লব ঘটানোর আকাঙ্খা ব্যক্ত করছেন তারা কি জানেন না জুলাই মাসের ৬ তারিখ আন্তর্জাতিকভাবে চুম্বন দিবস পালন করা হয়? সেদিন ক্যানো তারা চুম্বন বিপ্লব ঘটান না? এদের বেশিরভাগ আসলে হুজুগে বাঙালী। হুজুর বলেছে সবাই ভাঙতেছে তাই আমিও মন্দীর ভাঙলাম, সবাই জয় বাঙলা চিল্লাইতেছে আমিও চিল্লাইছি- এমন মানুষই এই চুম্বন-বিপ্লব গোছের ছ্যাবলা আকাঙ্খা ব্যক্ত করতে পারেন। শফিক রেহমানরা পাদ দেয়া শেখালে আর সে ইভেন্টে কিছু জনসমাগম হলে এইসব প্রাণী পাদাপাদি করতে হাজির হয়ে যেতো সেখানেও। আবার পোঁদে ডান্ডা পড়লে ভোঁ দৌড় দিতেও কসুর করতো না। কারন এরা সন্ত ভ্যালেন্তিনের কাছ থেকে আত্মত্যাগ শেখেনি, এরা শিখেছে শফিক রেহমানদের কাছ থেকে। মতিঝিল ও শাহবাগ- দুই জায়গাতেই এই শ্রেণীর লোক ছিলো। ডান্ডা দেখলেই এরা ভালবাসা চুমু ভুলে ঝেড়ে দৌড় দেবে। একথা নিঃস্বন্দেহে বলা যায় যে, এহেন অবিমৃশ্যকারীতা করার জন্য উৎসাহপ্রদানকারী, ফেসবুকের মাধ্যমে ভালবাসা দিবসে চুম্বন করে প্রতিবাদের ছ্যাবলামি আইডিয়া দেয়া ইভেন্ট হোস্টরা ইতিহাসের বিভিন্ন বাঁকেই থাকেন। তারা খারাপ না হলেও বেকুব প্রজাতির মানুষ। তাদের চিনে নিয়ে ইগনোর করাই শ্রেয়। কেননা এদের মতো আরও কিছু লোকের হঠকারীতা শাহবাগে আমাদের চরমভাবে ভুগিয়েছে।
এতক্ষন পড়ে আমার অবস্থানের সাথে সহমত পোষন করা অনেকের অবস্থানের সাথে বিরোধীতা করি এ-ও জানিয়ে দেয়া দরকার। চুমু কোনো অপরাধ নয়। প্রকাশ্যে চুম্বন বিজাতীয় সংস্কৃতি, পশ্চিমা আগ্রাসন বলে যারা বিরোধীতা করছেন তাদের সাথে আমি একশত ভাগ দ্বিমত পোষন করি। সামাজিক আচার তো পরিবর্তনশীল। ধর্ম, খাদ্যাভাস, পোশাক, ভৌগলিক অবস্থান, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাসহ আরও অনেক বিষয়ের উপর সামাজিক রীতি ও নীতি এবং তার পরিবর্তনের ধরণ ও গতি নির্ভরশীল। এই ভূমিতেই কামসূত্র লেখা হয়েছে ভুলে যাবেন না। ভাবুন বরঞ্চ, ক্যানো কীভাবে পিছিয়ে গেলেন যে চুম্বনের মতোন সুন্দর অপার্থিব মুগ্ধতা সৃষ্টিকারী একটা ঘটনা আজ পাপ বলে বিচেচিত হচ্ছে। ক্যানো মানুষের ঠোঁটে নয় শুধু লাভ বার্ডের ঠোঁটেই দেখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন!
১৪ ফেব্রুয়ারী বাঙলাদেশের স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস। স্বৈরাচারী সামরিক শাসকের পা-চাটা অসামরিক শয়তানের নীল নকশা ব্যর্থ করে ভালবাসা দিবস পালন করুন সন্ত ভ্যালেন্তিনের আত্মত্যাগের মহীমা, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও নিজের প্রিয়জনের প্রতি ভালোবাসার প্রদর্শন করে। পাশাপাশি এই দিবসকে পশ্চিমা আগ্রাসন বলে সন্ত ভ্যালেন্তিনের ভালবাসাকে অসন্মান করা বন্ধ করুন আরেকদল। কেননা ১৪ ফেব্রুয়ারীতে ২৫০ সন আর ১৯৮৩ সন পাশাপাশি দাঁড়ায় শহীদানের স্মৃতি বুকে। মনে রাখবেন, এই দিনে জয়নাল-দিপালী-সন্ত ভ্যালেন্তিন সব্বার খুনী একই। সেই শাসকশ্রেণী। তারা বন্দুক বাগিয়ে আজও আপনাকে ‘ক্যাটল’ বানিয়ে রেখেছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিদিনের দেয়াল তুলে রক্তের গালিচাকে বরণ করার প্রস্তুতি নিন। যেমনটা বরণ করেছিলেন ২৫০ সনের সন্ত ভ্যালেন্তিন আর ১৯৮৩ সনের জয়নালরা।
সানবিডি/ঢাকা/আহো