সামঞ্জস্যপূর্ণ কাগজপত্র সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রাপ্তি সহজ করবে

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২২-০২-১২ ১৬:৫১:০২


সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রয়োজনীয় নথিপত্রের অভাব, সিএমএসএমই সংজ্ঞায়নের জটিলতা, জটিল ঋণ বিতরণ পদ্ধতি, উদ্যোক্তাদের ব্যাংক এ্যাকাউন্ট না থাকা, ব্যাংকের সাথে দূর্বল সম্পর্ক, জামানত সংক্রান্ত সমস্যা এবং এসএমই ডাটাবেইজ-এর অনুপস্থিতিতি এবং আর্থিকখাতের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও বরাদ্দ থাকা সত্তে¡ও উদ্যোক্তাদের সাথে সমন্বয়হীনতার অভাবেই দেশের সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য সরকার ঘোষিত ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ হতে কাঙ্খিত মাত্রায় ঋণ সহায়তা প্রাপ্তিতে বঞ্চিত হচ্ছে বলে মত প্রকাশ করেছেন, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত “ব্যাংক হতে সিএমএসএমই ঋণ/প্রণোদনা প্যাকেজ প্রাপ্তির পদ্ধতি ও প্রস্তুতি” শীর্ষক ভার্চুয়াল কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী আলোচকবৃন্দ।

আজ শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ তারিখে ডিসিসিআই আয়োজিত উক্ত কর্মশালায় বাংলাদেশ ব্যাংক-এর মহাব্যবস্থাপক (এসএমইএসপিডি) মোঃ জাকের হোসেন সম্মানিত অতিথি হিসেবে যোগদান করেন।

কর্মশালার স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, শিল্পখাতে ৮০ শতাংশ কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি ম্যানুফ্যাকচারিং-এ ৪৫% মূল্য সংযোজন করে সিএমএসএমই খাত, তবে প্রয়োজনীয় আর্থিক এবং নীতিগত সহায়তার অভাবে সিএমএসএমই প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের সম্ভাবনা ও কর্মদক্ষতার পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছে না। তিনি উল্লেখ করেন, করোনা মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্থ সিএমএসএমইদের ব্যবসা-বাণিজ্যের পুনরুজ্জীবন ও সম্প্রসারণ এবং সর্বোপরি আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থানকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় এখাতের উদ্যোক্তাদের জন্য ১ম ও ২য় ধাপে সর্বমোট ৪০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও, এখাতের উদ্যোক্তাদের ঋণ/প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে সিএমএসএমই সংজ্ঞায়নের জটিলতা, সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রয়োজনীয় নথিপত্রের অভাব, জটিল ঋণ বিতরণ পদ্ধতি, উদ্যোক্তাদের ব্যাংক এ্যাকাউন্ট না থাকা, ব্যাংকের সাথে দূর্বল সম্পর্ক, জামানত সংক্রান্ত সমস্যা, এসএমই ডাটাবেইজ-এর অনুপস্থিতির কারণে ঘোষিত প্যাকেজের আওতায় সহায়তা প্রাপ্তিতে ব্যর্থ হয়েছেন এখাতের উদ্যোক্তারা এবং সে কারণেই প্রণোদনা প্যাকেজের অর্ধেকের বেশি ঋণ এখনো বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। এমতাবস্থায় সকল ধরনের প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের পুনরুজ্জীবিত করতে এই প্রণোদনা প্যাকেজের যথাযথ বাস্তবায়নের কোন বিকল্প নেই বলে মত প্রকাশ করেন, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান।

বাংলাদেশ ব্যাংক-এর মহাব্যবস্থাপক (এসএমইএসপিডি) মোঃ জাকের হোসেন বলেন, দেশের অর্থনীতিতে সিএমএসএমই খাতের অবদানের বিষয়টি মাথায় নিয়েই বাংলাদেশ ব্যাংক করোনা মহামারী মোকাবেলায় এখাতের উদ্যোক্তাদের জন্য ইতোমধ্যে দুদফায় ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, তবে স্থানীয় পর্যায়ে এ ঋণ বিতরণের হার সন্তোষজনক নয়। তিনি উল্লেখ করেন, ১ম ধাপের ২০ হাজার কোটি টাকা হতে ইতোমধ্যে ১৫,৫০০ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে এবং ২য় ধাপের ২০ হাজার কোটি টাকা হতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি ০৯ তারিখ পর্যন্ত মাত্র ৬,২১৭ কোটি টাকা সিএমএসএমই খাতে বিতরণ করা হয়েছে, যা প্রদত্ত প্রণোদনা প্যাকেজের মাত্র ৩১% এবং যা আসলেই কাম্য নয়। তিনি বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত অবকাঠামো এবং প্রয়োজনীয় টাকার বরাদ্দ থাকা সত্তে¡ও উদ্যোক্তা এবং আর্থিকখাতের মধ্যকার সমন্বয়ের অভাবের কারণে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না। তিনি জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে খুলনা, রংপুর এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রান্তিক পর্যায়ের ঋণ বিতরণের অবস্থা পর্যালোচনায় উক্ত এলাকা সফর করেছে এবং ভবিষ্যতে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। তিনি মনে করে, মাঠ পর্যায়ে উদ্যোক্তা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ভ্রান্ত ধারণার কারণেই ঋণ বিতরণের কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। বাংলাদেশ মহাব্যবস্থাপক আরো বলেন, দেশের এসএমই খাতকে এগিয়ে নিতে হলে তাদের অবশ্যই ব্যাংকমুখী করে হবে এবং সত্যিকারের উদ্যোক্তাদের ঋণ সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।

কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড-এর এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (প্রধান, বিনিয়োগ প্রশাসন) মোঃ রফিকুল ইসলাম। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, সিএমএসএমইদের সঠিক সংজ্ঞায়ন ও প্রকৃত ডাটাবেইজের অভাবেই ঋণ বিতরণে বেশ প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। শিল্পের কোন খাতে নিজেদের ব্যবসায়িক কর্মকান্ডে বিবেচিত হয়, সে বিষয়ে উদ্যোক্তাদের সঠিক ধারণা নেওয়ার আহŸান জানান তিনি এবং ব্যাংকিং কার্যক্রমে উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক কর্মকান্ডকে কোন খাতে নিবন্ধন করা হয়েছে, সে বিষয়ে সচেতন হওয়ার আহŸান জানান। এছাড়াও উদ্যোক্তা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের মানসিকতা পরিবর্তন করা প্রয়োজন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, প্রণোদনা প্যাকেজে উৎপাদন এবং সেবা খাতের সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অর্থনীতির বহুমুখী কর্মকান্ড আরো গতিশীল করা সম্ভব হবে।

ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি আরমান হক-এর সঞ্চালনায় পরিচালিত কর্মশালার মুক্ত আলোচনায় ঢাকা চেম্বারের প্রায় ১০০জন সদস্য ভার্চুয়ালি যোগদান করেন এবং সরকার ঘোষিত সিএমএসএমই খাতের প্রণোদনা প্যাকেজ হতে ঋণ সহায়তা প্রাপ্তির পদ্ধতি ও প্রস্তুতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করেন।

এসএ/এনজে