ফার্মেসিতে সংঘবদ্ধধর্ষণের পর গৃহবধূকে হত্যার ঘটনায় আটক ৩

জেলা প্রতিনিধি আপডেট: ২০২২-০২-১৯ ১৫:৪৫:১৪


ফার্মেসিতে চেতনানাশক ওষুধ সেবন করিয়ে সংঘবদ্ধধর্ষণ শেষে এক নারীকে হত্যা করে তার লাশ ৬ টুকরা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর পৌরসভার ব্যারিস্টার আ. মতিন মার্কেটের ‘অভি মেডিকেল হল’ নামের একটি ওষুধের দোকান থেকে শাহনাজ পারভীন জোৎস্না (৩৫) নামের ওই নারীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় গতকাল শুক্রবার রাজধানী ও সুনামগঞ্জ থেকে তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

শনিবার রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর।

গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিরা হলেন—জিতেশ চন্দ্র গোপ (৩০), অনজিৎ চন্দ্র গোপ (৩৮) ও অসীত গোপ (৩৬)। নিহত শাহনাজ পারভীন জোৎস্নার স্বামী ছরকু মিয়া সৌদি আরব প্রবাসী।

মুক্তা ধর বলেন, ‘ছয় টুকরা লাশ উদ্ধারের পর বিভিন্ন তদন্ত সংস্থার পাশাপাশি সিআইডির একাধিক তদন্ত দল তদন্তে নামে। সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার ডিএমপির ভাটারা থানাধীন নুরের চালা এলাকা থেকে জিতেশ চন্দ্র গোপ এবং সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর পৌর এলাকা থেকে অনজিৎ চন্দ্র গোপ ও অসীত গোপকে গ্রেপ্তার করা হয়।’

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে মুক্তা ধর বলেন, ‘গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা জানান, শাহনাজ পারভীন জোৎস্না ২০১৩ সাল থেকে পৌর শহরের নিজের বাসায় দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। তাঁর স্বামী ছরকু মিয়া সৌদি আরবে থাকার কারণে পরিবারের সব ওষুধ নিতেন অভি মেডিকেল হল থেকে। এর ফলে ফার্মেসির মালিক জিতেশের সঙ্গে জোৎস্নার সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। জোৎস্না কিছুদিন ধরে কিছু গোপন শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। এ সমস্যা সমাধানের জন্য ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ফার্মেসিতে গেলে জিতেশ ফার্মেসির ভেতরে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার কক্ষে বসান তাঁকে। ফার্মেসিতে ক্রেতার ভিড় কমলে জোৎস্নার সঙ্গে কথা বলবেন বলে অপেক্ষা করতে বলেন তাঁকে।’

‘বিকেল গড়িয়ে রাত নামলে জোৎস্না দ্রুত বাসায় ফিরতে চান। এর মধ্যে জিতেশ চন্দ্র গোপ তাঁর বন্ধু মুদি দোকানদার অনজিৎ গোপ এবং পাশের অরুপ ফার্মেসির মালিক অসীত গোপকে জোৎস্নার কথা জানান। পরে তাঁরা তিন জনে মিলে ধর্ষণের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী জিতেশ জোৎস্নাকে চিকিৎসার কথা বলে ঘুমের ওষুধ সেবন করান। ফলে, তিনি ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। এ সময় ফার্মেসির মধ্যে জোৎস্নাকে রেখে জিতেশ বাইরে থেকে তালা দিয়ে চলে যান। আশপাশের সব দোকান বন্ধ হলে এবং রাত আরও গভীর হলে তারা পুনরায় ফার্মেসির তালা খুলে ভেতরে প্রবেশ করেন এবং এনার্জি ড্রিংকস পান করেন। তারপর তাঁরা জোৎস্নাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন।

ধর্ষণের বিষয়টি জোৎস্না তাঁর পরিবারের সদস্য ও অন্যান্যদের নিকট প্রকাশ করার কথা বললে আসামিরা তাঁকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন। সে অনুযায়ী তাঁরা যোগসাজসে ভুক্তভোগীর ওড়না গলায় পেঁচিয়ে এবং কক্ষে থাকা বালিশ দিয়ে মুখে চেপে ধরে তাকে হত্যা করেন। তারপর লাশটি ধারালো ছুরি দিয়ে মাথা, দুই হাত, দুই পা এবং বুক-পেটসহ ছয়টি অংশে বিভক্ত করে ফেলেন। এরপর দোকানে থাকা ওষুধের কার্টনে লাশের খণ্ডিত অংশগুলো রেখে ফার্মেসি তালা দিয়ে চলে যান। পরবর্তী সময়ে সুবিধাজনক সময়ে শাহনাজ পারভীন জোৎস্নার লাশের খণ্ডিত খণ্ডিত অংশগুলো মাছের খামারে ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁদের।’

লাশ উদ্ধারের পর নিহতের ভাই হেলাল আহমদ এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে জিতেশ চন্দ্র গোপের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।