অনলাইনে জুয়া: এক বছরে পাচার ৩০ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২২-০২-২৩ ১৪:১৪:৩০


অনলাইন জুয়া (বেটিং) পরিচালনাকারী বাংলাদেশের ২ মাস্টার এজেন্টসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বুধবার দুপুরে রাজধানীর ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- মো. তরিকুল ইসলাম ওরফে বাবু (২৮), রানা হামিদ (২৬) ও মো. সুমন মিয়া (২৫)।

গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ঢাকা মেট্রো-গ-৩৬-০৩৫১ নম্বর প্লেটের একটি প্রাইভেটকার, নগদ ১১ লাখ ৮০ হাজার টাকা, ৪টি বিভিন্ন মডেলের মোবাইল ফোন, ৫টি সিম কার্ড, বিভিন্ন ব্যাংকের ১৩টি ব্যাংক একাউন্ট ও ২৩টি মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট উদ্ধার করা হয়।

ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জানান, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর খিলক্ষেত থানার অধীনে একটি এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

আসামিদের বরাত দিয়ে ডিবি জানায়, গ্রেপ্তারকৃত মো. তরিকুল ইসলাম বাবু, রানা হামিদ এবং সুমন মিয়া, পলাতক আসামি সাথী আক্তারসহ অন্যান্য পলাতক ও অজ্ঞাতনামা প্রায় ৫০/৬০ জন আসামিদের সহায়তায় দীর্ঘদিন যাবৎ তাদের ব্যবহৃত ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে অনলাইনে জুয়া (বেটিং) খেলার সাইট পরিচালনা করছিল। তারা এই সাইট থেকে অর্জিত অর্থ দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জমি, গাড়িসহ বিভিন্ন অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছে। গ্রেপ্তারকৃত ও পলাতক আসামিরা অবৈধ জুয়ার (বেটিং) সাইট পরিচালনা করে মোবাইল ব্যাংকিং/ ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অবৈধ অর্থের লেনদেন (ই-ট্রানজেকশন) করে।

ডিবি আরও জানায়, গ্রেপ্তারকৃতরা দুটি বেটিং ওয়েবসাইটের বাংলাদেশের মাস্টার এজেন্ট। তারা সাইটগুলোর মাস্টার এজেন্ট হিসেবে দেশের বাইরে থাকা সুপার এজেন্টের কাছ থেকে প্রতিটি চইট (ভার্চুয়াল কারেন্সি) ৬০ টাকার বিনিময়ে ক্রয় করে থাকে। পরবর্তীতে সাইটগুলোর ব্যবহারকারীগণের নিকট হতে নগদ অর্থের বিনিময়ে প্রতিটি চইট ১৫০ টাকার বিনিময়ে এবং লোকাল এজেন্টের নিকট প্রতিটি চইট ১০০ টাকার বিনিময়ে বিক্রয় করে থাকে। গ্রেপ্তারকৃতরা ৮/১০ লাখ টাকার বিনিময়ে লোকাল এজেন্ট নিয়োগ করে যা চইট কারেন্সিতে উক্ত লোকাল এজেন্টকে দেয়া হয়।

এরপর লোকাল এজেন্ট তার ব্যবহারকারীগণের নিকট হতে নগদ অর্থের বিনিময়ে প্রতিটি চইট ১৫০ টাকা দিয়ে বিক্রয় করে থাকে। এই কাজে অবৈধ অর্থের আদান-প্রদান মোবাইল ব্যাংকিং/ব্যাংক একাউন্টে মাধ্যমে করা হয়। এখানে কারেন্সি হিসাবে চইট নামক এক প্রকার সাইটের নিজস্ব ভার্চুয়াল কারেন্সি ব্যবহৃত হয়।

তিনি জানান, এভাবে সাধারণ ব্যবহারকারীদের অর্থ গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের মাধ্যমে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছিল। ছদ্মনামে তাদের দুটি ফেইক ফেইসবুক একাউন্ট রয়েছে, যার মাধ্যমে উক্ত এজেন্টরা গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ করে থাকে। বেটিং সাইটগুলো গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা ছাড়াও তাদের অজ্ঞাতনামা প্রায় ৫০/৬০ পলাতক আসামিদের পারস্পারির যোগসাজশে পরিচালিত হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের প্রকাশ্য কোনো আয়ের উৎস নাই। প্রাথমিক তদন্তে জানা যায় জব্দকৃত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং মোবাইল ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলোতে প্রায় ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে মর্মে জানা যায়।

উল্লিখিত সাইটগুলোতে বিভিন্ন ক্রিকেট খেলায় নির্দিষ্ট ওভার বা বলে কত রান হবে অথবা নির্দিষ্ট ম্যাচে কোন দল জিতবে তার উপর ১:৩ অনুপাতে বেটিং করা হয়। সাধারণ ইউজারের নির্দিষ্ট টার্গেটকৃত রান বা তার নির্দিষ্ট দল জিতলে বেটিং এর চইট পরিমানের তিনগুন বা বেটিং এর শর্ত অনুসারে চইট ফেরত পায়। এভাবেই বেটিং/অনলাইন জুয়া পরিচালিত হয়।

গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত ৩ দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন বলেও জানিয়েছে ডিবি।