ক্যাশ রশিদে বিপিএ ক্যান্সার আক্রান্তের হার বাড়াচ্ছে: নতুন গবেষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২২-০৪-১১ ২০:৩৩:৩৫


শপিং সেন্টারগুলোতে ব্যবহৃত ক্যাশ রিসিপ্ট স্পর্শ করার ফলে দেহে ক্ষতিকর রাসায়নিক বিসফেনল-এ তথা বিপিএ ব্যাপক মাত্রায় বাড়ছে। গবেষণায় দেখা গেছে স্তন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার, বন্ধ্যাত্ব, ডায়াবেটিস ও ওবেসিটি দেখা দিতে পারে এ রাসায়নিকের প্রভাবে।

সোমবার (১১ এপ্রিল) এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো) আয়োজিত ‘ট্রানজেকশন উইথ টক্সিনস: বিপিএ ইন ক্যাশ রিসিপ্টস’ শীর্ষক অনলাইন অনুষ্ঠানে তথ্যটি তুলে ধরা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে উপস্থাপন করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিসফেনল-এ তথা বিপিএ হলো একটি ‘এন্ডোক্রাইন ডিসরাপ্টার’।

এ গবেষণায় মোট ৪০টি স্থান থেকে ৬৭টি ক্যাশ রিসিপ্টের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। যেগুলোর প্রায় ৯৭ শতাংশই তৈরি করা হয় থার্মাল কাগজ দিয়ে।

ওই ৯৭ শতাংশ থার্মাল কাগজের মধ্যে ৬৯ শতাংশে বিপিএ ও ২৬ শতাংশে বিপিএস পাওয়া গেছে।

নমুনাগুলোতে ০ দশমিক ৮৩ থেকে ১ দশমিক ৭১ ভাগ মাত্রায় বিপিএ ও ০ দশমিক ৬১ থেকে ০ দশমিক ৯৬ ভাগ মাত্রায় বিপিএ পাওয়া গেছে যা ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর আদর্শ মাত্রার চেয়ে বেশি।

নমুনাগুলো পাবলিক অফিস, স্থানীয় দোকানের বিভিন্ন শাখা, সুপারমার্কেট, ব্যাংকের টিকিট ও সাধারণ দোকান থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

গবেষণাটি এসডো, ফাইন্যান্সিয়াল ইন্ডাস্ট্রি পাবলিক ইন্টারেস্ট ফাউন্ডেশন এবং কোরিয়ার রাজধানী সিউলে অবস্থিত ওনজিন ইনস্টিটিউট ফর অকিউপেশনাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল হেলথ (ডাব্লিওআইওইএইচ) যৌথভাবে পরিচালনা করেছে।

সভায় জানানো হয়, এসডো ২০১৯ সালে একই ধরনের আরেকটি গবেষণা করেছিল। তখন ৩৬টি নমুনায় মাত্রাতিরিক্ত বিপিএ-এ পাওয়া গিয়েছিল।

গবেষণা মতে, বিপিএ ও বিপিএস হলো এক ধরনের এন্ডোক্রাইন ডিসরাপ্টার যা ইস্ট্রোজেন ও থাইরয়েড হরমোনের মতো দেহের অন্যান্য হরমোনগুলোকে নকল করে শরীরের স্বাভাবিক কার্যকারিতা নষ্ট করতে পারে।

এই রাসায়নিকটি ক্যাশ রিসিপ্টে পাউডার আকারে থাকে। এতে এটি সহজেই আঙুলের সংস্পর্শে শরীরে প্রবেশ করতে পারে।

অনুষ্ঠানে সাম্প্রতিক গবেষণার সূত্র ধরে জানানো হয়, ক্যাশ রিসিপ্ট স্পর্শ করার দুই ঘণ্টার মধ্যেই মানুষের প্রস্রাবে ওই রাসায়নিক পদার্থটির উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এতে বোঝা যায়, ক্যাশিয়ার কিংবা অন্য কর্মী যারা থার্মাল কাগজের সংস্পর্শে থাকেন তাদের দেহে বিপিএ বেশি থাকে।

বিশেষ করে অন্তসত্ত্বা কর্মী যারা ক্যাশ রিসিপ্ট নিয়ে কাজ করেন তাদের গর্ভের সন্তানও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকে।

অনুষ্ঠানের এসডোর সভাপতি এবং বাংলাদেশের সাবেক সচিব সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ বলেন, ক্যাশ রিসিপ্ট-এর স্বাস্থ্যঝুঁকি মোটেও অবহেলা করা উচিত নয়।

তিনি এক্ষেত্রে জনসচেতনতা সৃষ্টি ও কঠোর আইন প্রয়োগের ওপর জোর দেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন বলেন, বিপিএ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পলিকার্বোনেট প্লাস্টিক, ইপোক্সি রেজিন ও থার্মাল কাগজ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। কাজেই বিপিএ থেকে বিরত থাকতে হলে প্লাস্টিকের পরিবর্তে গ্লাস বা স্টেইনলেস স্টিল ব্যবহার করা উচিত। তুলনামূলক কম দামি পানির বোতল ও স্টোরেজ কন্টেইনারে এটি থাকে।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ওনজিন ইনস্টিটিউট ফর অকিউপেশনাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল হেলথ (ডাব্লিওআইওইএইচ)-এর নির্বাহী পরিচালক, ড. ইউন-কেউন লি, আইসিডিডিআর,বি-এর এনভায়রনমেন্টাল ইন্টারভেনশন ইউনিটের প্রজেক্ট কো-অরডিনেটর ড. মো. মাহবুবুর রহমান, এসডোর গবেষণা দলের প্রধান ড. শাহরিয়ার হোসেন ও এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দীকা সুলতানা প্রমুখ।

এএ