ঢাকা ত্যাগের আগে স্বর্ণালংকার আত্মীয়দের কাছে রেখে যাওয়ার পরামর্শ

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২২-০৪-১৮ ২১:৩৮:৩৯


রোজ ও আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে অপরাধ প্রতিরোধে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকার নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। পাশাপাশি যারা ঢাকা ত্যাগ করবেন, তাদের আত্মীয় স্বজনের কাছে স্বর্ণালংকার রেখে যেতে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

সোমবার (১৮ এপ্রিল) ডিএমপির সদর দপ্তরে মার্চের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় এসব পরামর্শ দেন ডিএমপি কমিশনার।

অপরাধ পর্যালোচনা সভায় অধঃস্তনদের উদ্দেশে মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, ১৫ রোজা শেষ হয়ে গেছে। এখন মার্কেটগুলোয় ধীরে ধীরে ভিড় বাড়তে থাকবে। এ সময় মলম পার্টি, অজ্ঞান বা টানা পার্টির তৎপরতা বেড়ে যায়।

এ জন্য থানার টহল পার্টিকে আরো সতর্ক অবস্থায় দায়িত্ব পালন করতে হবে। প্রয়োজনে স্পেশাল টিম করে এদেরকে (চক্রের সদস্যদের) গ্রেফতার করতে হবে। শুধু পাহারা দিয়ে অপরাধ দমন করা যায় না, অপরাধীদের শনাক্ত করে তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে অপরাধ প্রতিরোধ করতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ট্রাফিক ডিভিশনের উদ্দেশ্যে কমিশনার বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে যানজটের চাপ বেড়ে যায়। এজন্য প্রয়োজনে ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলার পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে ঢাকার প্রবেশ মুখগুলোয় যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে হবে।

ঢাকা মহানগরীর কোথাও বড় ধরনের কোনো অঘটন না ঘটায় সকলকে ধন্যবাদ জানান ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। তিনি আরো বলেন, ঈদের সময় প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য নগরবাসীর অনেকেই গ্রামের বাড়িতে যান। ফলে তাদের বাসা-বাড়ি ফাঁকা থাকে। এ সময় যেন কোনো ধরণের অঘটন না ঘটে; বাসাবাড়ির নিরাপত্তা প্রহরীদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে সদস্যদের দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান তিনি। এ সময় ঢাকা ত্যাগ করার আগে নগরবাসীকে দামী স্বর্ণালংকার পার্শ্ববর্তী আত্মীয়-স্বজনের কাছে রেখে যেতে পরামর্শ দেন তিনি।

মার্চ ২০২২ মাসের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৮টি ক্রাইম বিভাগের মধ্যে প্রথম হয়েছে তেজগাঁও বিভাগ ও শ্রেষ্ঠ থানা হয়েছে মোহাম্মদপুর থানা। তবে ওয়ারেন্ট নিষ্পত্তি করে প্রথম হয়েছে উত্তরা বিভাগ। ডিএমপির ক্রাইম বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনারদের মধ্যে প্রথম হয়েছেন তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মুজিব আহম্মেদ পাটওয়ারী। পুলিশ পরিদর্শক তদন্তদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হয়েছেন বংশাল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মীর রেজাউল ইসলাম আর পুলিশ পরিদর্শকদের (অপারেশনস) মধ্যে প্রথম হয়েছেন মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশনস) মো. তোফাজ্জল হোসেন।

শ্রেষ্ঠ উপপরিদর্শক (এসআই) যৌথভাবে নির্বাচিত হয়েছেন চকবাজার মডেল থানার প্রদীপ কুমার বিশ্বাস ও মিরপুর মডেল থানার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান। শ্রেষ্ঠ সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) যৌথভাবে নির্বাচিত হয়েছেন বিমানবন্দর থানার মো. মিকাইল মোল্লা ও মতিঝিল থানার মো. হেলাল উদ্দিন। শ্রেষ্ঠ ওয়ারেন্ট তামিলকারী কর্মকর্তা হয়েছেন চকবাজার মডেল থানার এসআই প্রদীপ কুমার বিশ্বাস। অস্ত্র উদ্ধার করে শ্রেষ্ঠ হয়েছেন ডেমরা পুলিশ ফাঁড়ির এসআই সন্তোষ বালা। বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করে শ্রেষ্ঠ হয়েছেন চকবাজার মডেল থানার এসআই প্রদীপ কুমার বিশ্বাস। মাদক উদ্ধার করে শ্রেষ্ঠ হয়েছেন বিমানবন্দর থানার এএসআই মো. মিকাইল মোল্লা এবং চোরাই গাড়ি উদ্ধার করে প্রথম হয়েছেন গাবতলী বাস টার্মিনাল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মো. আবু জাফর তালুকদার মানিক।

৯টি গোয়েন্দা বিভাগের মধ্যে প্রথম হয়েছে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ। শ্রেষ্ঠ টিম লিডার নির্বাচিত হয়েছেন গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগের ওয়ারী জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আবু আশরাফ সিদ্দিকী। অস্ত্র উদ্ধারে শ্রেষ্ঠ টিম লিডার নির্বাচিত হয়েছেন গোয়েন্দা রমনা বিভাগের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও মাদক নিয়ন্ত্রণ টিমের সহকারী পুলিশ কমিশনার নাজিয়া ইসলাম। মাদকদ্রব্য উদ্ধার করে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগের ওয়ারী জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আবু আশরাফ সিদ্দিকী। চোরাই গাড়ি উদ্ধার করে শ্রেষ্ঠ টিম লিডার নির্বাচিত হয়েছেন গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ খলিলুর রহমান এবং অজ্ঞান/মলম পার্টি উদ্ধারে শ্রেষ্ঠ টিম লিডার নির্বাচিত হয়েছেন গোয়েন্দা রমনা বিভাগের ধানমন্ডি জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ফজলে এলাহী।

৮টি ট্রাফিক বিভাগের মধ্যে প্রথম হয়েছে ট্রাফিক ওয়ারী বিভাগ। শ্রেষ্ঠ সহকারী পুলিশ কমিশনার নির্বাচিত হয়েছেন মোহাম্মদপুর ট্রাফিক জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার কাজী হানিফুল ইসলাম। শ্রেষ্ঠ ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) হয়েছেন যাত্রাবাড়ী ট্রাফিক জোনের টিআই হোসেন জাকারিয়া মেনন। শ্রেষ্ঠ সার্জেন্ট/টিএসআই যৌথভাবে নির্বাচিত হয়েছেন মোহাম্মদপুর ট্রাফিক জোনের পুলিশ সার্জেন্ট আব্দুল কাদের ও ডেমরা ট্রাফিক জোনের পুলিশ সার্জেন্ট মো. কৌশিক মাহমুদ। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় ১০টি বিভাগসহ ৫০ জন অফিসার এবং ফোর্সকে বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়।

প্রতি মাসে ঘটে যাওয়া অপরাধ বিশ্লেষণ, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পরবর্তী কর্মপন্থা ও কর্মকৌশল সম্পর্কিত নির্দেশনার পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্য ও কর্মকর্তাদের কর্মোদ্দীপনা বাড়াতে প্রতিমাসের কার্যক্রম পয়েন্ট আকারে যোগ করে পরবর্তী মাসের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় পুরস্কৃত করে থাকেন ডিএমপি কমিশনার।

এএ