ডিভিএস বাধ্যবাধকতা: রিটার্ন জমা দিতে পারেনি অর্ধেক প্রতিষ্ঠান

:: আপডেট: ২০২২-০৪-১৯ ২২:৪৩:০৫


আর্থিক বিষয়ে অডিট রিপোর্ট যাচাইয়ের বাধ্যবাধকতায় দেশের অর্ধেকের বেশি করপোরেট প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ে তাদের ট্যাক্স রিটার্ন সাবমিট করতে পারেনি।

এর কারণ হিসেবে রিটার্ন জমা দেওয়ার ত্রুটি ডিফল্টভাবে, ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন সিস্টেম (ডিভিএস) নিয়ে ব্যবসায়ী এবং অডিটিং প্রতিষ্ঠান একে অপরকে দোষারোপ করে আসছে।

এক্ষেত্রে করদাতারা চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের (সিএ) কাছ থেকে নিরীক্ষিত আর্থিক বিবৃতি পাওয়ার ক্ষেত্রে একটি অত্যধিক খরচ জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন। অপরদিকে সিএ প্রতিষ্ঠান বলছে, করদাতারা “স্বচ্ছতা এড়াতে” প্রয়োজনীয় নথি দিতে অনিচ্ছুক।

জানা যায়, সারা দেশের ৩০,০০০টির কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ১৪,৯০৫টি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান রাজস্ব বোর্ডের কাছে তাদের ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিয়েছে।

এদিকে ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল গত ১৫ জানুয়ারী পর্যন্ত। তবে সংশ্লিষ্ট ট্যাক্সেস কমিশনার (ডিসিটি) কোম্পানির লিখিত আবেদনের ভিত্তিতে সময়সীমা দুই মাস বাড়ানোর ক্ষমতা রাখে। সময়সীমার মধ্যে ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিতে ব্যর্থ হলে, অতিরিক্ত কমিশনার একটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানকে আরও দুই মাস সময় দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একজন ঊর্ধ্বতন কর কর্মকর্তা জানান, কর্পোরেট করদাতারা সময়ের আবেদন জমা দিয়েছেন তাদের জড়িমানা এড়াতে আগামী ১৫ মে এর মধ্যে তাদের ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিতে হবে।

এদিকে, কর ফাঁকি রোধে একটি কোম্পানির জন্য একটি একক অডিট রিপোর্ট নিশ্চিত করতে ইনস্টিটিউট অফ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অফ বাংলাদেশের (আইসিএবি) সাথে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এনবিআর।

চুক্তির আলোকে ইতোমধ্যে ইন্সটিটিউট অব চার্টার্ড এ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) ‘ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন সিস্টেম’ নামে একটি নতুন সফটওয়্যার তৈরী করেছে। যা ২০২১ সালের ডিসেম্বরে তারা চালু করেছে।

অপরদিকে, আয়কর বিভাগের এক আদেশে সারা দেশের সমস্ত কর অফিসকে ডিভিএস যাচাইকরণ ছাড়া কোনো অডিট রিপোর্ট গ্রহণ না করতে বলা হয়েছে।

এদিকে ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ডিভিএস এর ফি প্রদান করে তথ্য যাচাই করা তাদের জন্য একটি কঠিন কাজ।

লেদার অ্যাকসেসরিজ কোম্পানি গুটিপা-এর মালিক তাসলিমা মিজি বলেন, তার ছোট প্রতিষ্ঠান নিয়মিত করদাতা হলেও এ বছর সময়সীমার মধ্যে ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিতে সমস্যায় পড়েছেন। চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট প্রতিষ্ঠান আগের বছরের তুলনায় তিনগুণ বেশি চার্জ দাবি করছে, যা আমার ছোট কোম্পানি বহন করতে অক্ষম।

তিনি বলেন, ডিভিএস যাচাইকৃত অডিট রিপোর্ট প্রস্তুত করার জন্য নিযুক্ত চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট প্রতিষ্ঠান অপর্যাপ্ত। এতে সঠিক ভাবে কাজ শেষ করতে বিলম্ব হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।

আইসিএবি সভাপতি মোঃ শাহাদাত হোসেন অবশ্য এ ধরনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, আইসিএবি সদস্যদের সকলেই টার্নওভারের ভিত্তিতে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানীর জন্য নির্ধারিত আইসিএবির ফি শিডিউল বজায় রাখতে হয়।

তিনি বলেন, অডিট রিপোর্ট প্রস্তত করতে পর্যাপ্ত সংখ্যক সিএ রয়েছে তবে এর জন্য তাদের প্রয়োজনীয় নথি সবরাহ করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, আমাদেরকে একটি আর্থিক বিবরনী প্রস্তুত করতে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হয়। কিছু ক্ষেত্রে, ক্লায়েন্টরা প্রয়োজনীয় নথি প্রদান করতে ইচ্ছুক নয় বলে তিনি দাবি করেন।

এদিকে, নিরীক্ষা ছাড়া কোনো কোম্পানির রিটার্ন নেবে না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বার্ষিক আয়কর বিবরণীর সঙ্গে সঠিক নিরীক্ষা বিবরণী না দিলে রিটার্ন গ্রহণযোগ্য হবে না। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, কোম্পানি করদাতা প্রতিষ্ঠান বার্ষিক আয়কর বিবরণীর সঙ্গে সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদদের মাধ্যমে তৈরি করা নিরীক্ষা প্রতিবেদনও জমা দিতে হবে।

সেই প্রতিবেদন সঠিক কি না, তা দেখতে কর কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে এনবিআর। চলতি ডিসেম্বর মাস থেকে তা কার্যকর করা হয়েছে। এখন থেকে কোম্পানির রিটার্নের হিসাব-নিকাশের নিরীক্ষা প্রতিবেদন যাচাই করে ‘সবুজ সংকেত’ দেবেন কর কর্মকর্তারা।

সম্প্রতি এনবিআর কোম্পানি করদাতা কর্তৃক হিসাব বিবরণী হিসাববিদদের মাধ্যমে সত্যায়িত কি না, তা বাছাইয়ের নির্দেশ দিয়েছে। এই কর কর্মকর্তাদের একটি নির্দেশিকা দিয়েছে এনবিআর। অবশ্য এর আগে এনবিআরকে প্রস্তুতিও নিতে হয়েছে।

কোন নিরীক্ষা প্রতিবেদনটি সঠিক, আর কোনটি সঠিক নয়, তা এত দিন বুঝতে পারতেন না এনবিআরের কর কর্মকর্তারা। সম্প্রতি হিসাববিদদের প্রতিষ্ঠান দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) নিজেদের একটি অনলাইন সিস্টেম তৈরি করেছে। সেখানে হিসাববিদেরা যত নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করবেন, তা জমা দিতে হবে। সেখানে জমা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটি বিশেষ কোড নম্বর বা ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন কোড (ডিভিসি) থাকবে, যা আয়কর বিবরণীতে লিখতে হবে। কর কর্মকর্তারা সেই ডিভিএস দেখে সরাসরি আইসিএবির সিস্টেম প্রবেশ করে তা যাচাইবাছাই করতে পারবেন।

এএ