হাওরে কাঁচা ধান কেটে দিশেহারা হাজারো কৃষক
নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০২২-০৪-২৩ ১০:১১:৪৭
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আতঙ্কে কিশোরগঞ্জের হাওরে কাঁচা ও আধাপাকা ধান কেটে ফেলায় চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন কৃষক। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। পচা ও অপুষ্ট ধান বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা মণে। এতে মিলছে না উৎপাদন খরচের অর্ধেকও। ব্যাংক ও মহাজনি ঋণের টাকা পরিশোধ নিয়ে দিশেহারা প্রান্তিক কৃষকরা। তালিকা করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহযোগিতার আওতায় আনার আশ্বাস দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।
মহাজনের কাছ থেকে দেড়গুণ সুদে এক লাখ টাকা নিয়ে জিওলের হাওরে ৬ একর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছিলেন কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার পূর্বগ্রামের প্রান্তিক চাষি আলী রহমান। কিন্তু উজানের পানি জমিতে উঠে পড়ায় অর্ধেক পাকার আগেই কেটে ফেলছেন জমির ধান। ক্যামেরা দেখে কাঁচাধানের গোছা নিয় এগিয়ে এসে জানান তার দুর্দশার কথা।
এ ব্যাপারে কৃষকরা জানান, ধার-দেনা ও চড়া সুদে ঋণ নিয়ে তারা ফসল আবাদ করেছেন। কিন্তু ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবং উৎপাদন খরচও ওঠাতে না পারায় তারা চোখে অন্ধকার দেখছেন। প্রতিমণ ধান উৎপাদনে এক হাজার টাকা খরচ হলেও শ্রমিকের খরচ মেটাতে জমির পাশেই বিক্রি করতে হচ্ছে অর্ধেক মূল্যে। এরপরও মিলছে না ক্রেতা।
এদিকে, প্রথম দফায় ফসলডুবির পর দ্বিতীয়বার পাহাড়ি ঢলে জমি তলিয়ে যাওয়ার আতঙ্কে কাঁচা ও আধাপাকা ধান কেটে ফেলায় এবার বোরো ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারি সহযোগিতার আওতায় আনতে তালিকা তৈরির কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ছাইফুল ইসলাম।
তিনি জানান, এ পর্যন্ত পাহাড়ি ঢলে প্রায় ৭৫০ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে। এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। অপুষ্ট ধান কেটে ফেলায় লক্ষমাত্রা অর্জনে কিছুটা আশংকা রয়েছে। তবে এখনও মূল হাওরে বাঁধের ভেতর পানি ওঠেনি। আর সপ্তাহখানেক সময় পাওয়া গেলে সব ধান কেটে ফেলা সম্ভব হবে।
এবার জেলায় এক লাখ ৬৭ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ২৬ হাজার মেট্রিক টন। ১৩টি উপজেলার মধ্যে শুধুমাত্র তিনটি হাওর উপজেলা ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামে আবাদ হয়েছে এক লাখ ৪ হাজার হেক্টর জমিতে। শুক্রবার পর্যন্ত হাওরে মোট ৪৫ ভাগ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে।
সানবিডি/এনজে