বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি

আপডেট: ২০১৬-০২-২৫ ০০:১৩:৪১


AL.BNPআসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি। সোমবার মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষদিন দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে অনেকেই মনোনয়নপত্র জমা দেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়দের মতে, যোগ্য প্রার্থীর পরিবর্তে পছন্দের লোককে প্রত্যয়ন দেয়ায় বঞ্চিতরা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এরাই মূলত বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছেন। বিএনপির চেয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা বেশি। কোনো কোনো ইউপিতে আওয়ামী লীগের ৩-৪ জন বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। অন্যান্য দলেও কমবেশি বিদ্রোহী প্রার্থী আছে।

সারা দেশে ৭৩৯টি ইউনিয়নে দলীয় প্রত্যয়নপত্রসহ আওয়ামী লীগ সব ইউপিতে প্রার্থী দিয়েছে। অন্যদিকে কয়েকটি ছাড়া বাকি ইউপিতে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেন। রাত সাড়ে ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৫১৭ ইউপির তথ্য যুগান্তরে পৌঁছেছে। এসব ইউপিতে মোট চেয়ারম্যান প্রার্থীর সংখ্যা ২১১২-তে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ৩৮৪ জন এবং বিএনপির ১০০ জন বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

তৃণমূলের সুপারিশ উপেক্ষা, আর্থিক লেনদেন, এমপি-মন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় নেতাদের অযাচিত হস্তক্ষেপ, অভ্যন্তরীণ কোন্দলসহ নানা কারণে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করেন দুই দলের নেতারা। তাদের মতে, অনৈতিক সুযোগে অনেক নিষ্ক্রিয় ও অযোগ্যরা মনোনয়ন পেয়ে গেছেন। বাদ পড়েছেন যোগ্য ও ত্যাগীরা। কেন্দ্রের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে যোগ্য ও ত্যাগী নেতারা তৃণমূলের চাপে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।

এই প্রথম বারের মতো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে। তৃণমূল পর্যায়ে নিজেদের অবস্থান দৃঢ করার জন্য বড় দলগুলো নানা ধাপে তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করে। এই বাছাই প্রক্রিয়ায় নানা ধরনের সমস্যার কারণে যোগ্য প্রার্থীরা বঞ্চিত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রত্যাশার চেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় বেকায়দায় পড়েছেন দুই দলের নীতিনির্ধারকরা। বিদ্রোহী প্রার্থীদের তালিকা করে তাদের বাগে আনতে সংশ্লিষ্ট নেতাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন উদ্যোগের পরও যারা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে নির্বাচন করবে প্রয়োজনে তাদের বহিষ্কার করা হতে পারে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ সোমবার বলেন, আমাদের কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী নেই। যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, তারা আশা করেছিলেন, শেষ মুহূর্তে হয়তো তারা মনোনয়ন পাবেন। যেহেতু দলীয় মনোনয়ন তারা পাননি তাই শেষ মুহূর্তে হলেও তারা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেবেন বলে আশা করছি।

জানতে চাইলে ইউনিয়ন পরিষদের সমন্বয়ক ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও দলের পক্ষ থেকে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। তারপরও কোনো কোনো ইউপিতে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে অনেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাদের সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কথা বলছেন। আশা করি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন সবাই তা প্রত্যাহার করে নেবেন। মনোনয়নে নানা অনিয়ম সম্পর্কে তিনি বলেন, মনোনয়ন দেয়া নিয়ে কেন্দ্রে কোনো অনিয়ম হয়নি। তৃণমূল থেকে যেসব সুপারিশ এসেছে তা যাচাই-বাছাই করে আমরা প্রার্থী চূড়ান্ত করেছি।

মনোনয়ন জমা দেয়ার শেষদিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির প্রার্থীকে বাধা দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। খুলনা, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৫০ জন প্রার্থীকে বাধা দেয়া হয়েছে বলে জানান বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনদের বাধার কারণে অনেক ইউপিতে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেনি।

ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলায় ১০ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে ৪০ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ৫ জন ও বিএনপির ১২ জন এবং স্বতন্ত্র ৩ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলার ১০ ইউপিতে মোট প্রার্থী ৩৭ জন।

এর মধ্যে একটিতে বিএনপি কোনো প্রার্থী দেয়নি। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ৩ ও বিএনপির ৩ জন রয়েছে। কিশোরগঞ্জের সদর উপজেলার ১১ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৫৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগে বিদ্রোহী প্রার্থী ১৩ জন ও বিএনপিতে ৩ জন।

মাদারীপুর জেলার শিবচরে ১৬টি ইউনিয়নে মোট ৪৮ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগে বিদ্রোহী ৫ ও বিএনপিতে কোনো বিদ্রোহী নেই।

সিলেটের আট ইউপিতে মোট ৪২ জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ৩ ও বিএনপির একজন। ঝিনাইদহের ৬৭টি ইউনিয়নের মধ্যে প্রথম ধাপে কোটচাঁদাপুরের মোট ৫টি ইউনিয়নে ভোট হবে। এতে মোট চেয়ারম্যান প্রার্থী ২৬ জন। বিএনপির ৫ জন, আওয়ামী লীগের ৫ জন। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের ২ জন।

এখানে বিএনপির কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী নেই। জাসদ ২ জন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা ১২। যশোর জেলায় প্রথম ধাপে মনিরামপুর উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নে নির্বাচন হবে।

এসব ইউপিতে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সংখ্যা ৬৪। আওয়ামী লীগের ১৫, বিএনপির ১৫, জাতীয় পার্টির ১ ও স্বতন্ত্র ৩২ জন। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অধিকাংশই বড় দুই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা। প্রথম ধাপে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার নির্বাচন হবে ১২টি ইউনিয়নে। চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীর সংখ্যা ৭৬। আওয়ামী লীগের ৩৬, বিএনপি ২৭, জাতীয় পার্টি ২৪, স্বতন্ত্র ১৪ ও অন্যান্য দলের তিনজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এদের মধ্যে শাসক দল আওয়ামী লীগে ১২ এবং বিএনপির ১৩ জন বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন।

ভোলার বিভিন্ন উপজেলায় ৪৩টি ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ১৭০ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। এ জেলায় আওয়ামী লীগের মোট ৭৫ জন বিদ্রোহী ও বিএনপিতে মাত্র ১ জন বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন। ভোলা সদরে ১০ ইউনিয়নে আ’লীগ বিদ্রোহী ১৬, দৌলতখানের ৬ ইউনিয়নে আ’লীগ বিদ্রোহী ৫, লালমোহনে ৪ ইউপিতে আ’লীগ বিদ্রোহী ১১ জন ও বিএনপি বিদ্রোহী একজন। তজুমদ্দিনে ৩ ইউনিয়নে আ’লীগ বিদ্রোহী ৪ জন। চরফ্যাশনে ১০ ইউনিয়নে আ’লীগ বিদ্রোহী ২৩ জন। মনপুরা উপজেলার একটি ইউনিয়নে আ’লীগ বিদ্রোহী ১ জন। বোরহানউদ্দিন উপজেলায় ৯ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ১৫ জন।
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় ১২ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে মোট ৫৭ জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেন। এখানে আওয়ামী লীগের ৮ ও বিএনপির ৬ জন বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন।

কুমিল্লার দেবিদ্বারে ১৩ ইউপিতে ৭৫ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী আছেন। ৯ ইউপিতে আওয়ামী লীগের ৯ জন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। বিএনপির কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী নেই।

পটুয়াখালী জেলার ৫১ ইউপিতে ২৩৪ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা  ৪১ এবং বিএনপির বিদ্রোহী ৯ জন। বরগুনার ৩৪ ইউপিতে ১৯৫ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ১৬ জন, বিএনপির ৯ জন বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন। ঝালকাঠির ৩১টি ইউপিতে ১৩১ জন প্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ৪৩ জন  বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন। এজেলার কোনো ইউপিতে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী নেই। এ জেলার দুটি ইউনিয়নে দলটির প্রার্থীর নেই। বরিশাল জেলার ৭৪টি ইউপিতে ৩২৩ জন প্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ৫৩ জন, বিএনপির বিদ্রোহী ১৫ জন। পিরোজপুর জেলায় ৩৯ ইউপিতে আওয়ামী লীগের ৩৮ এবং  বিএনপির ৬ জন বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন। খুলনার দাকোপ, বটিয়াঘাটা ও পাইকগাছা উপজেলার ২৭টি ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে ১৩৩ জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেন। এখানে আওয়ামী লীগের ১৫ ও বিএনপির ৭ জন বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।