বোলারদের নৈপুণ্যে বাংলাদেশের জয়

প্রকাশ: ২০১৬-০২-২৬ ২৩:১২:৪৮


bangladeshটার্গেটটা খুব বেশি নয়, মাত্র ১৩৪ রানের! তবে আমিরাত বলে কথা। এশিয়া কাপের বাছাইপর্বে হংকং কিংবা আফগানিস্তানের বিপক্ষে দেড়শ’ রান তাড়া করে জিতলেও মূলপর্বে যেন তাদের ওপর চাপ নামক ভূত চেপে বসেছে। প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৩০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে আমিরাত হেরেছিল ১৪ রানে। এবার দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে হারল ৫১ রানে। পরাজয়ের বৃত্তেই রয়েছে তারা। বড় টুর্নামেন্টে কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয়, বাংলাদেশের কাছে ক্রিকেটের ধারাপাত শিখে নিতে পারে আমিরাত।

অপরদিকে আমিরাতের বিপক্ষে জিতে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা কথা দিয়ে  বাস্তবায়িত করে দেখালেন। এই জয়ে এশিয়া কাপের শিরোপা দৌড়ে নিজেদের টিকিয়ে রাখল স্বাগতিকরা। প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ করে ১৩৩ রান। জবাবে ১৭.৪ ওভারে ৮২ রানেই গুটিয়ে যায় আমিরাত।

লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দলীয় ২ রানেই মোহাম্মদ কালিমকে হারিয়ে বিপদে পড়ে আমিরাত। সফরকারী দলের এই ওপেনারকে রানের খাতাই খুলতে দেননি আল-আমিন হোসেন। দারুণ ফর্মে থাকা রোহান মোস্তফাও ব্যক্তিগত ইনিংসটা ১৮ রানেই সীমাবদ্ধ রাখেন। আমিরাতের এই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ধরাশায়ী হন মাশরাফির। আমিরাতের স্কোরশিটে রান যখন ৩৩ রান। এ সময় ফের সফরকারী শিবিরে আঘাত হানেন মাশরাফি। তুলে নেন সায়মান আনোয়ারকে (১)। স্কোরবোর্ডে আমিরাতের সংগ্রহ ট্রিপল থ্রি, অর্থাৎ ৩ উইকেটে ৩৩ রান।

এরপর শুরু মুস্তাফিজ শো। বাংলাদেশের তারকা এই পেসার চলে গিয়েছিলেন হ্যাটট্রিকের দ্বারপ্রান্তে। শুরুটা করেছিলেন মোহাম্মদ শেহজাদকে ১ রানে ফিরিয়ে। পরের বলে স্বপ্নভঙ্গ করেন স্বপ্নিল পাতিলের। তাকে মোটে রানই করতে দিলেন না মুস্তাফিজ! এর পরের বলেই প্রথমবারের মতো হ্যাটট্রিকের দ্বারপ্রান্তে ছিলেন মুস্তাফিজ। কিন্তু আমিরাত অধিনায়ক আমজাদ জাভেদ সেটা করতে দিলেন না। মুস্তাফিজের বলটা দেখেশুনেই খেললেন তিনি।

আমিরাতের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩০ রান করে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা মোহাম্মদ উসমানকে সাজঘরে ফেরান তাসকিন আহমেদ। আমিরাতের উইকেট পতনের মিছিলে সাকিবও নেন দুটি উইকেট। তিনি প্যাভিলিয়নের পথ দেখান ফরহাদ তারিক(০) ও আহমেদ রেজাকে (২)। আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের শিকারে পরিণত হন আমজাদ জাভেদ (৩) ও সাকলাইন হায়দার (০)।

বাংলাদেশের পক্ষে সেরা বোলার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ২ ওভারে ৫ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট। ৪ ওভারে ১৩ রান খরচায় মুস্তাফিজ তুলে নেন দুটি উইকেট। ৩ ওভারে ১২ রান দিয়ে মাশরাফি লাভ করেন দুই উইকেট। ৩.৪ ওভারে সাকিব দিয়েছেন ২০ রান, নিয়েছেন ২ উইকেট। ৩ ওভারে ২৪ রান খরচায় ১টি উইকেট পকেটে পুরেছেন আল-আমিন।

এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। স্বাগতিকদের উদ্বোধনী জুটিতে সৌম্য সরকারের সঙ্গে নামেন মোহাম্মদ মিঠুন। বাংলাদেশের শুরুটা বেশ ভালোই ছিল। উদ্বোধনী জুটিতে ৪৫ রান দলের স্কোরশিটে যোগ করেন সৌম্য সরকার ও মোহাম্মদ মিঠুন। এই জুটিতে আঘাত হানেন আমিরাত পেসার মোহাম্মদ শেহজাদ। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে তিনি সাজঘরের পথ দেখান বাংলাদেশের ওপেনার সৌম্য সরকারকে। ২১ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ২৪ রান করেন সৌম্য।

একেই বলে ক্রিকেট! ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রান ছিল সাব্বির রহমান রুম্মানের। ৩২ বলে করেছিলেন ৪৪ রান। আমিরাতের বিপক্ষে নিজেকে উপস্থাপন করলেন অন্যভাবে, অর্থাৎ টি-২০ নয়, টেস্ট মেজাজে! এই ম্যাচে ১২ বলে করেছেন ৬ রান। বাংলাদেশের টি-২০ স্পেশালিস্ট ক্রিকেটারের স্ট্রাইক রেট মাত্র ৫০! তার নামের পাশে এই পরিসংখ্যান সত্যিই বেমামান। রোহান মোস্তফার বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে সাব্বির ধরা পড়লেন ফরহাদ তারিকের হাতে।

আগের ম্যাচের মিঠুন, আর আমিরাতের বিপক্ষে খেলতে নামা মিঠুনের মিল পাওয়া গেল না। যেন সাব্বিরের বিপরীত মেরুতে তার অবস্থান। ভারতের বিপক্ষে ১৪ বলে ৭৮.৫৭ স্ট্রাইক রেটে করেছিলেন ১১ রান। আর আমিরাতের বিপক্ষে ৪১ বলে ১১৪.৬৩ স্ট্রাইক রেটে করেন ৪৭ রান। আমিরাতের বিপক্ষে ৩ রানের আক্ষেপ নিয়েই সাজঘরে ফিরতে হলো তাকে। রোহান মোস্তফার বলে স্টাম্পিং না হলে পেয়ে যেতেন টি-২০তে প্রথম ফিফটি।

বলতে বলতে মুশফিকুর রহিমও সাজঘরে ফিরলেন। মিঠুনের বিদায়ের সঙ্গে মুশফিকের বিদায়টা হয় ২ রানের ব্যবধানে। মোহাম্মদ শেহজাদের বাউন্সার থেকে পাওয়া বলটি লাফিয়ে মোকাবিলার অযথা চেষ্টা করেন মুশফিক। বিপদে পড়েন বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক। ৮ বলে বাউন্ডারিহীন ৪ রানের ইনিংস খেলাই যথেষ্ট মনে করলেন তিনি!

কিছুটা ফর্মহীনতা ভুগতে থাকা সাকিব আল হাসান ফর্মে ফিরতে পারতেন আমিরাতের বিপক্ষে। কিন্তু ১৩ বলে একটি চারে ১৩ রান করেই ধরাশায়ী হলে জাভেদের কাছে। ইমরুল কায়েসের পরিবর্তে একাদশে জায়গা পাওয়া নুরুল হাসান সোহানও পারলেন নিজেকে মেলে ধরতে। সাজঘরে ফিরলেন রানের খাতা না খুলেই। জাভেদের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে ফরহাদ তারিকের তালবন্দী হন সোহান। ‘গোল্লা’ নিয়ে অধিনায়ক মাশরাফিকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখালেন ওই জাভেদ। রানআউটে কাটা পড়েন তাসকিন (১)। শেষ দিকে দলকে টানেন মাহমুদউল্লাহ। ২৭ বলে একটি চার ও দুটি ছক্কায় ৩৬ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি।

আমিরাতের পক্ষে সেরা বোলার মোহাম্মদ নাভিদ। ১২ রানে দুই উইকেট নেন তিন। অধিনায়ক আমজাদ জাভেদ পকেটে জমা করেছেন ২ উইকেট। একটি করে উইকেট নিয়েছেন রোহান মোস্তফা ও মোহাম্মদ শেহজাদ।