শিক্ষকতা ছেড়ে রিকশা চালাচ্ছেন মোসলেম আলী!

আপডেট: ২০১৬-০২-২৮ ১৬:৪০:২১


motor-rikhaw1মোসলেম আলী ফাজিল পাস। আট মাস ধরে ঢাকার নর্দ্দা এলাকায় রিকশা চালাচ্ছেন। তার গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর থানার জামালপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুরে। মোসলে আলী জানান, ১৯৯৮ সালে ফাজিল পাস করেন তিনি। এরপর ২০০১ সালে দুর্গাপুর স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসায় আরবি শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ২০০৮ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করেছেন কিন্তু কোনো বেতন পাননি।

অনেকে আশা দিয়েছিলেন লেগে থাকলে একসময় জাতীয় স্কেলে বেতন পাবেন। সেই আশায় তিনি চাকরিটা ছাড়েননি। শিক্ষকতার পাশাপাশি টুকটাক অন্য কাজ করে কিছু আয় করতেন। কিন্তু এভাবে আর কত দিন। একপর্যায়ে চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন মোসলেম আলী। যোগ দেন একটি জীবন বীমা প্রতিষ্ঠানে।

২০১২ সালে বিয়ে করেন। কিন্তু সেখান থেকে যে সামান্য বেতন পেতেন তাতে সংসার চলছিল না। তাই পরিচিত লোকজনের সূত্র ধরে ২০১৩ সালে ঢাকায় পাড়ি জমান। কিন্তু ভালো কিছু জোগাড় করতে পারলেন না মোসলেম আলী। অবশেষে কোনো উপায় না দেখে রিকশা চালাতে শুরু করেন। বর্তমানে নর্দ্দা এলাকায় রিকশা চালান তিনি।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে জাতীয় প্রেস কাবের সামনে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকেরা লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন জাতীয় স্কেলে বেতনের দাবিতে। সেখানে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে কথা হয় মোসলেম আলীর সাথে।

মোসলেম আলী প্রথম দিন থেকেই আছেন এ কর্মসূচিতে। তবে মোসলেম আলী অনেকটাই বিধ্বস্ত। তিনি জানান, তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে গেছে। কেন-কিভাবে চলে গেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১০ তারিখ কর্মসূচিতে যোগ দেয়ার পর ১৭ ফেব্রুয়ারি বাসায় যান। বাসায় গিয়ে জানতে পারেন তার স্ত্রী চলে গেছেন কাউকে কিছু না বলে। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন তিনি তার বাপের বাড়িতে আছেন।

মোসলেম আলী বলেন, তার দুই বছর বয়সী এক ছেলে আছে। সংসারে অভাব-অনটন লেগে ছিল। শারীরিক অসুবিধার কারণে নিয়মিত রিকশাও চালাতে পারতেন না তিনি। নর্দ্দার নয়ানগর ঢালীবাড়িতে টিনের ঘরে ভাড়া থাকতেন তারা।

মোসলেমের রিকশা চালিয়ে জীবন ধারণ মেনে নিতে পারেননি তার স্ত্রী। তার ওপর এখন আবার লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্তে ক্ষেপে যান তার স্ত্রী। তিনি তাকে এখানে আসতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু মোসলেম তা শোনেননি।

মোসলেম জানান, খেয়ে না খেয়ে ১৫ দিন ধরে এখানেই পড়ে আছেন। রাতেও প্রেস কাবের সামনের ফুটপাথেই থাকেন অন্য শিক্ষকদের সাথে। এমনকি প্রচণ্ড শিলাবৃষ্টির সময়ও তিনি স্থান ত্যাগ করেননি। শিলার আঘাতে আহত হয়েছেন।

মোসলেম আলী জানান, বাড়িতে তার বৃদ্ধা মা আছেন। রিকশা চালিয়ে যা উপার্জন হয় তা দিয়ে নিজের সংসার চালিয়ে বাড়িতেও কিছু টাকা পাঠাতে হয়। শিলাবৃষ্টি উপেক্ষা করে এভাবে দিন-রাত এখানে পড়ে থাকার কারণ হিসেবে মোসলেম আলী বললেন, যদি সরকার আমাদের দিকে তাকায় সেই আশায়।

তিনি বলেন, আমাদের যদি জাতীয় স্কেলে বেতন দেয় তাহলে আবার মাদরাসায় ফিরে যাব। রিকশা চালাতে আমারও ভালো লাগে না। অল্পের জন্য দুইবার দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে গেছি। বিএ পাস করে শহরে এসে রিকশা চালাচ্ছি একথা কাউকে বলতেও পারি না। তাই গভীর আশা নিয়ে একটানা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন মোসলেম আলী।

মোসলেম আলী জানান, তার মতো অন্য শিক্ষকেরাও একে একে মাদরাসা ত্যাগ করে চলে গেছেন। ফলে বর্তমানে মাদরাসাটি বন্ধ আছে। মাদরাসাটি রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত। সূত্র:-নয়া দিগন্ত

সানবিডি/ঢাকা/এসএস