কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে না সরকার
নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০২২-০৭-০২ ১৪:৫৪:২৯
বহুল আলোচিত দেশের কওমি মাদ্রাস শিক্ষা আপাতত নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে না সরকার। তবে মাদ্রাসার উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং প্রয়োজনে নজরদারি অব্যাহত থাকবে।
এর আগে সিদ্ধান্ত ছিল কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম উন্নয়নে শিক্ষা আইনে সুনির্দিষ্ট প্রস্তবনা থাকবে। ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য কর্মমুখী শিক্ষাও সংযুক্ত করা হবে। পরিমার্জন আনা হবে চূড়ান্ত খসড়ায়। কিন্তু সম্প্রতি চূড়ান্ত হওয়া শিক্ষা আইনের খসড়ায় নিয়ম-কানুন আগের মতোই রাখা হয়েছে। বাড়তি কোনও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক বলেন, ‘এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। নতুন করে কিছু সংযুক্ত করা হয়নি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকারের নিয়ন্ত্রণে রেখে উন্নয়নের কথা ভাবা হলেও মাদ্রাসা পরিচালনাকারীরা তা চান না। এ কারণে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কওমি মাদ্রাসাগুলোকে একটি কাঠামোয় ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিলেও তা আর হয়নি। এখন ‘সরকার কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রমের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে’ অংশটুকু রেখে আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে।
গত বছর ১৬ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা আইনের খসড়া চূড়ান্ত সংক্রান্ত বৈঠকে কওমি মাদ্রাসা সরকারের নিয়ন্ত্রণে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। ওই বৈঠকে অংশ নেওয়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছিলেন, ‘সরকারের নিয়ন্ত্রণে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কার্যক্রম উন্নয়ন করার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। কারণ সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না।’ ওই সিদ্ধান্তের আলোকে কওমি শিক্ষার বিষয়টি আইনের খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
শিক্ষাবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নিবন্ধন ছাড়া নিয়ন্ত্রণ ছাড়া পৃথিবীর কোনও দেশে কোনও ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয় না। ভারতেও দেওবন্দ নিবন্ধন নিতে হয়। আইনে সেভাবে রাখা না হলেও অন্তত নিবন্ধন থাকা প্রয়োজন। তাছাড়া তাদের তথ্য পাওয়া যাবে কীভাবে?’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের সন্তান কোথায় কী লেখাপড়া করছে তা জানা দরকার। কওমিসহ দেশের সব শিক্ষা ধারাকে একটি ছাতার নিচে এনে যার যার স্বাতন্ত্র বজায় রেখে চালাতে হবে। এই শিক্ষা ধারাকে একটি রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে আনতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে চলছে, আয়ের উৎস কী, পাঠ্যক্রম কী, কী শেখাচ্ছেন তা তো জানতে হবে।’
২০১৩ সালের ৫ এপ্রিল হেফাজত কাণ্ড, মোদি-বিরোধী আন্দোলন ও গত বছর মামনুলকে গ্রেফতারের ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের দিয়ে সহিংসতা চালানো হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি ওঠে কওমি শিক্ষাকে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আনা প্রয়োজন।
এনজে