ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানকে ২৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নিবন্ধন নিতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০২২-০৭-১৯ ১৮:৫১:০২


বিদ্যমান ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানসমূহকে ২৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ডিজিটাল বিজনেস আইডেনটিটি (ডিবিআইডি)-এর আবেদন করতে হবে। একবছর পর্যন্ত বিনামূল্যে আবেদন করা যাবে, এরপর থেকে ফি দিতে হবে হবে বলে জানিয়েছে এসএমই ফাউন্ডেশন।

মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) অনলাইনে ‘ডিজিটাল বিজনেস আইডেনটিটি (ডিবিআইডি) নিবন্ধন’ কর্মশালার আয়োজন করে এসএমই ফাউন্ডেশন। ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমান এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হাফিজুর রহমান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান।

অনলাইন ওয়ার্কশপে ৯৫ জন উদ্যোক্তা অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া ফাউন্ডেশনের ফেসবুক পেজে অংশগ্রহণ করেন আরো প্রায় দেড়শ’ উদ্যোক্তা।

এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, জাতীয় ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা ২০১৮ এবং জাতীয় ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা ২০২১-এর আলোকে ২৯ জুন ২০২২ ডিজিটাল বিজনেস আইডেনটিটি (ডিবিআইডি) নিবন্ধন’ নির্দেশিকা জারি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, নির্দেশিকা জারির ৯০ দিন অর্থাৎ ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২-এর মধ্যে ডিবিআইডি নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে হবে। এতে প্রতীয়মান হয় ডিবিআইডি ছাড়া বিদ্যমান ই-কমার্স উদ্যোক্তারা অনলাইন ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেননা। নতুন উদ্যোক্তাকে ওয়েবসাইট বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পেজ চালু করে আবেদন করতে হবে। ডিবিআইডি নম্বরটি হবে ইউনিক ও অটো-জেনারেটেড।

ডিবিআইডি নিবন্ধনের লক্ষ্য, ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানসমূহের স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা, জবাবদিহীতা নিশ্চিত করা, ডিজিটাল কমার্স ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রকারভিত্তিক তালিকা প্রস্তুত করা এবং প্রচলিত আইন ও বিধিবিধান মেনে চলা ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানসমূহকে স্বীকৃতি প্রদান করা।

ডিবিআইডি নিবন্ধনের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হবে। এজন্য আবেদনকারীকে এনআইডি দাখিল করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান বা পরিচালকদের এনআইডি, ট্রেড লাইসেন্স ও আরজেএসসি নিবন্ধন নম্বর থাকলে দাখিল করতে হবে। সেই সাথে ভ্যাট নিবন্ধন ও ইটিআইএন থাকলে সেগুলিও দাখিল করতে হবে। ভাড়া অফিস হলে বাড়ি ভাড়ার চুক্তি ও বাড়ির মালিকের এনআইডি’র কপি দিতে হবে। তবে ডিজিটাল মাধ্যমে এমএলএম বা নেটওয়ার্কিং ব্যবসা, নেশা সামগ্রী, বিস্ফোরক সামগ্রী এবং জুয়া, অনলাইন বেটিং বা গেম্বলিং প্রতিষ্ঠান ডিবিআইডি’র জন্য আবেদন করতে পারবেনা।

আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের একই নামের একাধিক প্রতিষ্ঠান বা একই প্রতিষ্ঠানের একাধিক নামে আবেদন, সক্রিয় ওয়েবসাইট বা সামাজিক মাধ্যমে পেজ এবং সেখানে বাংলায় ক্রয় বিক্রয় বা অন্যান্য শর্তাবলী আছে কিনা, তা যাচাই বাছাই শেষে সনদ প্রদান করবে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ’ (আরজেএসসি)। আর তথ্য যথাযথ না হলে আবেদন নামঞ্জুর করে আবেদনকারীকে জানিয়ে দেয়া হবে। ডিবিআইডি নম্বর বাধ্যতামূলকভাবে ওয়েবসাইট বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পেজে প্রদর্শন করতে হবে। কোন কারণে ডিবিআইডি বাতিল হলে সেটি প্রদর্শন করা যাবে না।

ডিবিআইডি নিতে ভুল তথ্য দিলে ডিজিটাল কমার্স পলিসি, নির্দেশিকা, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট ২০১৮ বা দেশে প্রচলিত অন্যান্য আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেল পুরো বিষয়টি তদারকি করবে। এছাড়া ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সি, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং ইউনিট, বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টমেন্ট ও বিএফআইইউ প্রযোজ্য ক্ষেত্রে তদারকি করতে পারবে। ড. রহমান এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ওয়েবিনারে অংশগ্রহনকারীদের মধ্য থেকে প্রায় ২১জনের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

https://roc.gov.bd ওয়েবসাইটে লগ ইন করে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ’-এর দপ্তরে ডিবিআইডি’র জন্য অনলাইনে আবেদন করা যাবে। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, দেশে আড়াই হাজারের বেশি ওয়েবসাইট এবং প্রায় ৩ লাখের কাছাকাছি ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে অনলাইন ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে, যাদের বেশিরভাগ নারী-উদ্যোক্তা। তিনি বলেন, সকল ব্যবসাকে একটি ডেটাবেজের আওতায় আনার লক্ষ্যে এই উদ্যোগ। অতিক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পক্ষে ট্রেড লাইসেন্স, আরজেএসসি নিবন্ধন, ইটিআইএন বা ভ্যাট নিবন্ধন নেয়া সম্ভব হয়না। সে কারণে ডিবিআইডি থাকলে ক্রেতাদের আস্থা অর্জন সহজ হবে।

তিনি আরো বলেন, এক বছর পর্যন্ত বিনামূল্যে নিবন্ধন করা যাবে। এরপর থেকে নিবন্ধন ফি নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা না মানলে ডিবিআইডি দেয়া হবেনা বলেও জানান তিনি। ডিবিআইডি নিবন্ধনের বিষয়ে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে এ আয়োজনের জন্য এসএমই ফাউন্ডেশনকে তিনি ধন্যবাদ জানান।

প্রধান অতিথি এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমান বলেন, যেসব উদ্যোক্তা আইন মেনে ব্যবসা করতে চান, তাদের জন্য ডিবিআইডি নিবন্ধনের এটি খুবই ভালো উদ্যোগ। তিনি ডিবিআইডি নিবন্ধনের বিষয়ে অনলাইন সেমিনার আয়োজন করার জন্য এসএমই ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং ডিবিআইডি নিবন্ধনের এ সুবিধা গ্রহণ করতে সকল এসএমই উদ্যোক্তাদের প্রতি আহবান জানান।

এএ