যৌন হেনস্তা: চবির আরও ৪ ছাত্র বহিষ্কার

জেলা প্রতিনিধি আপডেট: ২০২২-০৭-২৫ ১৭:৪৪:২৬


এক বছর আগে দুই ছাত্রীকে হেনস্তার এক ঘটনায় এবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

এ ছাড়া এক ছাত্রীর সঙ্গে অশোভন আচরণের দায়ে এক শিক্ষককে কঠোরভাবে সতর্ক এবং অন্য একটি ছাত্রী হেনস্তার ঘটনায় আরেক ছাত্রকে একইভাবে সতর্ক করার সিদ্ধান্ত এসেছে।

সোমবার (২৫ জুলাই) বেলা ১২টায় এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. বেনু কুমার দে, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এসএম মনিরুল ইসলাম এবং প্রক্টর রবিউল ইসলাম ভূঁইয়া।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, এক বছরের জন্য বহিষ্কৃতরা হলেন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের জান্নাতুল ইসলাম রুবেল, দর্শন বিভগের ইমন আহম্মেদ, রাকিব হাসান রাজু এবং আরবি বিভাগের জুনায়েদ আহমেদ। চারজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী।

যৌন নিপীড়নের অভিযোগে অজ্ঞাতনামা পাঁচজনের বিরুদ্ধে গত ২০ জুলাই হাটহাজারী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন এক ছাত্রী। এজাহারে পথরোধ করে মারধর, ছিনতাই ও অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়েছে।

এ ঘটনার পর যৌন নিপীড়নের সব ঘটনার বিচারসহ চার দফা দাবিতে গেল বৃহস্পতিবার অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। তাদের কর্মসূচির মুখে দ্রুত দাবি পূরণের আশ্বাস দেয় কর্তৃপক্ষ। গত শনিবার নিপীড়নে জড়িত দুই শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়।

ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান বলেন, শিক্ষার্থীদের ৩ নম্বর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কেন্দ্রের কাছে জমা পড়া তিনটি অভিযোগ গত ২১ ও ২৩ জুলাই সভার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দুই ছাত্রীকে হেনস্তার অভিযোগে ওই ৪ ছাত্রকে চিঠি ইস্যুর পর দিন থেকে এক বছরের জন্য শিক্ষাকার্যক্রম থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

এ ছাড়া গত ১৭ জুলাইয়ের যৌন নিপীড়নের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের চার দাবি মেনে নেওয়ারও দাবি করেন তিনি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ১৭ জুলাইয়ের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি একজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া চবির দুই শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিরাগতদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

উপাচার্য ড. শিরীণ আখতার বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শতভাগ নিরাপদ। আমার ছাত্রী যে হেনস্তার শিকার হয়েছে, এ জন্য আমাদেরও কষ্টের শেষ নেই। আমরা নিশ্চিত করছি ছাত্র-ছাত্রী উভয়ের জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপদ।

সংবাদ সম্মেলনে চবিতে চলমান আন্দোলনের চার দফা দাবির মুখে সেলে আটকে থাকা তিন অভিযোগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেন উপাচার্য। প্রথম অভিযোগ, ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সস বিভাগের শিক্ষক এটিএম রফিকুল হক এক নারী শিক্ষার্থীকে হেনস্তা করেনে। তার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তি দেয়নি সেল। লিখিতভাবে সতর্ক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

দ্বিতীয় অভিযোগ, বেগম খালেদা জিয়া হলের এক নারী শিক্ষার্থীকে যৌন নির্যাতন করেন রসায়ন বিভাগের এক ছাত্র। তাকেও কোনো শাস্তি না দিয়ে লিখিতভাবে সতর্ক করেছে সেল।

তৃতীয় অভিযোগ, গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১১টার দিকে দুই ছাত্রী ক্যাম্পাসের বাসায় ফিরছিলেন। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে তাদের পথ আটকে জিজ্ঞাসাবাদ ও অশালীন মন্তব্য করেন চার ছাত্র। ছাত্রী উত্তর না দিলে তাকে শারীরিক অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে হেনস্তা করা হয়। এ অভিযোগেই ওই চার শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হলো।

এম জি