সংকটেও চার মাসে ১৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি

নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০২২-১১-০৩ ১৬:৪৭:৫৫


বৈশ্বিক সংকটের মাঝেও দেশের পোশাক রপ্তানি আয় বেড়েছে। সদ্য সমাপ্ত অক্টোবরে সামগ্রিক তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানি ৩.২৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে এক বছরে রপ্তানি ৩.৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। এ ছাড়া চলতি অর্থবছর (২০২২-২৩)-এর প্রথম চার মাসে সামগ্রিক পোশাক পণ্য রপ্তানি ১৩.৯৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছে বছরওয়ারী প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০.৫৫ শতাংশ।

বুধবার (২ নভেম্বর) রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ২০২২-২৩ অর্থবছরের (জুলাই-অক্টোবর)-এর প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ইপিবির তথ্যমতে, অক্টোবরে নিটওয়্যার এবং ওভেন খাত থেকে রপ্তানি যথাক্রমে ১.৪৬ এবং ৫.৭১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। নিটওয়্যার পণ্য রপ্তানি ৭.৭২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ওভেন রপ্তানি ৬.২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যথাক্রমে ৭.১৪ এবং ১৫.০৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র পরিচালক মো. মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘অক্টোবরে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমে যাওয়ার পূর্বাভাস থাকা সত্ত্বেও এই খাতে এ ধরনের ইতিবাচক প্রবৃদ্ধিকে স্বাগত জানাই।’ তিনি বলেন, ‘যেহেতু বিশ্বব্যাপী খুচরা বাজারগুলো সংগ্রামরত এবং ক্রেতারা নতুন কার্যাদেশ প্রদান এবং ইনভেনটরি পরিচালনার ক্ষেত্রে সতর্ক পদক্ষেপ অনুসরণ করছে, তাই পোশাক খাতের একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আগামী মাসগুলোতে কার্যাদেশ প্রাপ্তি এবং প্রবৃদ্ধির ব্যাপারে আমি আশাবাদী নই।’

তিনি উল্লেখ করেন, একক মাসে ৩.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি উল্লেখযোগ্য। আমাদের শিল্পের আরও পণ্য সরবরাহ করার সক্ষমতা রয়েছে। আমরা পণ্য এবং বাজার বৈচিত্র্যকরণসহ নতুন সুযোগগুলো অন্বেষণ করছি।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের অক্টোবরের তুলনায় চলতি বছরের অক্টোবর মাসে রপ্তানি আয় কমেছে ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

ইপিবি বলছে, চলতি বছরের অক্টোবরে ৪৩৫ কোটি ৬৬ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলারের পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ, যা ২০২১ সালের অক্টোবরে ছিল ৪৭২ কোটি ৭৫ লাখ ৩ হাজার মার্কিন ডলার। এই হিসাবে ২০২১ সালের অক্টোবর মাসের তুলনায় ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে ৩৭ কোটি ৯ লাখ ১০ হাজার ডলার রপ্তানি আয় কমেছে। যা শতাংশের হিসেবে ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি অস্বাভাবিক বেড়েছে। এ কারণে তারা পোশাক কেনা কমিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের রপ্তানি আয় কমছে।

অবশ্য তৈরি পোশাক মালিকসহ অন্য ব্যবসায়ীরা আগেই শঙ্কা প্রকাশ করছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজার থেকে ক্রয় আদেশ কমে যাবে। ফলে দেশের রপ্তানি আয়ও কমে আসবে।

ইপিবির তথ্যমতে, সরকারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ১২ দশমিক ৮৭ শতাংশ রপ্তানি আয় কমেছে ২০২২ সালের অক্টোবরে। এ মাসে রপ্তানি আয় খাতে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার। সেখানে রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৪৩৫ কোটি ৬৬ লাখ ২০ হাজার ইউএস ডলারের। অর্থাৎ ৬৪ কোটি ৩৩ লাখ ৮ হাজার ডলার কম হয়েছে।

ইপিবির তথ্য বলছে, ১৩ মাস টানা রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধির পর চলতি বছরের সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর টানা দুই মাস তার আগের বছরের তুলনায় রপ্তানি আয় কমেছে।

ইপিবি জানায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই থেকে অক্টোবর) বিশ্ববাজারে দেশের পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৬৮৫ কোটি ৩৫ লাখ ১০ হাজার ইউএস ডলারের। এই চার মাসে সরকারের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৭৪২ কোটি ইউএস ডলার। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫৬ কোটি ৬৪ লাখ ৯০ হাজার ইউএস ডলার বা ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ কম হয়েছে।

তবে এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের একই সময়ে সঙ্গে তুলনা করলে এখনও রপ্তানি আয়ের হার পজিটিভ রয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত রপ্তানি আয় হয়েছিল ১ হাজার ৫৭৪ কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার ইউএস ডলার। সেই হিসাবে গত বছরের তুলনায় এখনও ৭ দশমিক ১ শতাংশ রপ্তানি আয় বেড়েছে।

ইপিএসের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম রপ্তানি আয়ে হোঁচট খায় বাংলাদেশ। ওই মাসে বাংলাদেশ ৩৯০ কোটি ৫০ লাখ (৩ দশমিক ৯০ বিলিয়ন) ৭ হাজার ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রপ্তানি আয় হয়েছিল ৪১৬ কোটি ৫৪ লাখ ৫ ডলারের পণ্য।

একক মাসে হিসেবে সেপ্টেম্বর মাসে রপ্তানি আয় কমেছে। কিন্তু আগের দুই মাস জুলাই-আগস্টে আয় বেড়েছিল। সব মিলিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে এক হাজার ২৪৯ কোটি ৬৮ লাখ ৯ হাজার ডলারের পণ্য বিদেশে রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ।

২০২১ সালের প্রথম তিন মাসের রপ্তানি আয় ছিল এক হাজার ১০২ কোটি ১৯ লাখ ৫ হাজার ডলার। সেই তুলনায় তুলনায় ২০২২ সালের একই সময়ে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

এএ