বিনিয়োগ বাড়াতে বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর সমঝোতা সই
নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২২-১১-১৬ ১৯:৪৯:২৭
বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে একটি সমঝোতা সই হয়েছে। বুধবার (১৬ নভেম্বর) সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
এ সময় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, অন্যদিকে সিঙ্গাপুরের পক্ষ থেকে দেশটির বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী এস ইশ্বরন উপস্থিত ছিলেন।
চুক্তির বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘২০২১-২২ অর্থবছরে সিঙ্গাপুরে ১২ কোটি ৭১ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ। বিপরীতে বাংলাদেশ আমদানি করেছে ৪১১ কোটি ৫৮ লাখ ডলারের পণ্য। সে অনুযায়ী বাণিজ্য ঘাটতি কমানো এবং সম্প্রসারণে বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে সহযোগিতামূলক চুক্তিটি সই হয়েছে। আজকের (বুধবার) আলোচনা ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট বাস্তবায়নের প্রাথমিক ধাপ, যা দুদেশের মধ্যে বাণিজ্যসহ সব ধরনের সুবিধা বৃদ্ধি করবে।’
সিঙ্গাপুরের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী এস ইশ্বরন বলেন, ‘বর্তমান সংকট কাটিয়ে সামনের দিনে এগিয়ে যাওয়ার পথ তৈরি ও বাণিজ্য সুবিধা বৃদ্ধি এবং সিঙ্গাপুরের মাধ্যমে আসিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদারের সুযোগ যেন বাংলাদেশ নিতে পারে, সেজন্য এ চুক্তি করা হয়েছে।’
বাংলাদেশের পর্যটনখাত ও হাব হিসেবে নির্মাণাধীন শাহজালাল বিমানবন্দরকে কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন সিঙ্গাপুরের বাণিজ্যমন্ত্রী।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ বর্তমান সরকারের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন। এটি বিশ্বে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি বৃদ্ধি, বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টির পাশাপাশি বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও তৈরি করবে। যার মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে পণ্য রফতানিকালে শুল্কমুক্ত, কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা ২০২৬ সালের পর হারাতে হবে। ফলে বাংলাদেশের রফতানি পণ্যকে ওই সব দেশের বাজারে প্রবেশের সময় সাধারণভাবে আরোপিত শুল্কের সম্মুখীন হতে হবে। এতে ওইসব দেশে বাংলাদেশের রফতানি বাজার সংকোচনের শঙ্কা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের এই সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বাংলাদেশের রফতানি বাজার সংরক্ষণ, সম্প্রসারণ ও বিভিন্ন দেশে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা পাওয়ার লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দেশ ও ট্রেড ব্লকের সঙ্গে আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি করার উদ্যোগ নিয়েছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সিঙ্গাপুর বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার এবং এটি বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য একটি বাণিজ্য সম্ভাবনাময় এলাকা। পণ্য ছাড়াও সেবা ও বিনিয়োগ খাতেও সিঙ্গাপুরের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের সম্ভাবনা রয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে দুদেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সইয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে সিঙ্গাপুরের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের পার্মানেন্ট সেক্রেটারির (উন্নয়ন) মধ্যে দুই দফা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
তিনি আরও বলেন, এসব সভায় বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে সমঝোতা স্বাক্ষরের বিষয়ে আলোচনা হয়। পরবর্তী সময়ে উভয় দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে কয়েক দফায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে সমঝোতা সইয়ের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। এ চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে রফতানি ও বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে এবং মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সম্পাদনের লক্ষ্যে শিগগিরই আলোচনা শুরু করা সম্ভব হবে।
সমঝোতায় দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে ১৬টি খাতে উন্নয়নে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। যার মধ্যে পাট ও পাটজাতপণ্য, বস্ত্র ও পোশাক, কৃষি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সেবা, হালকা প্রকৌশল, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, দক্ষতা উন্নয়ন, পরিবহন সরঞ্জাম, ডিজিটাল অর্থনীতি ও শিক্ষাসেবা রয়েছে।
এএ