বৈষম্য কমাতে প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর পরামর্শ

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২২-১১-১৯ ২২:০৭:৪২


যথাযথভাবে প্রত্যক্ষ কর বাস্তবায়িত হলে ধনী-গরিবের বৈষম্য এক সময়ে কমে আসবে। যার জন্য প্রয়োজনে এই করের হার বাড়ানোও যেতে পারে। এমনটাই মন্তব্য করেছেন ‘ইউজিং ডাইরেক্ট ট্যাক্সসন টু টেকলি ইনকোয়ালিটি অ্যান্ড বুস্ট রেভিনিউ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা।

শনিবার (১৯ নভেম্বর) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামে (ইআরএফ) সেমিনার কক্ষে ইআরএফ এবং রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্ট্রেগেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র‌্যাপিড) যৌথভাবে এ আলোচনার আয়োজন করে।

আলোচনায় বক্তারা বলেন, সমাজে আয় বৈষম্য বাড়ছে। এটি কমাতে হলে প্রত্যক্ষ কর বাড়াতে হবে। এর জন্য জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। রিটার্ন না জমা দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। জনগণ কেন ট্যাক্স দেবে না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) জনগণের সঙ্গে মিশে যেতে হবে।

এসময় বিশেষ অতিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এনবিআর সদস্য (কর জরিপ ও পরিদর্শন) মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, বর্তমান পুঁজিবাদী সমাজে ধনী-গরিবের বৈষম্য অনেক বেশি। বিশ্বায়নকে মাথায় রেখে প্রত্যক্ষ কর বাড়িয়ে পরোক্ষ কর কমিয়ে আনতে এনবিআর কাজ করছে।

এছাড়া অতিথি হিসেবে ছিলেন অর্থমন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কবিরুল ইয়াজদানী খান। তিনি বলেন, ৬ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার বাজেটের তুলনায় জিডিপির আকার অনেক কম। এ ব্যবধান বেশি হওয়ার কারণে আমাদের কাজ বেড়ে যায়।

সে কারণে ব্যবসায়ীদের পাইওনিয়ার হতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, অগ্রিম আয়কর জনপ্রিয় কনসেপ্ট। এজন্য একটাই সমাধান; এনবিআরকে অটোমেশনে যেতে হবে। এনবিআরের ট্যাক্স পেয়ার সার্ভিস উইং নেই, এটি আমাদের দুর্বলতা, অটোমেশনের পাশাপাশি সার্ভিস উইং তৈরি করা প্রয়োজন। এর জন্য এনবিআরকে আলাদা জোন করতে হবে। করপোরেট ট্যাক্স বাড়ানো ঠিক না, তাদের অনেকগুলো ট্যাক্স দিতে হয়, এফডিআই আমাদের বেশি বেশি আনতে হবে। এটি গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য এনবিআরকে রুল ও রেগুলেশন নিয়ে ভাবতে হবে।

এনবিআরের কাঠামোতে অনেক সমস্যা থাকার কথা স্বীকার করেন সংস্থটির সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ২৫ শতাংশ পারসোনাল ট্যাক্স আছে, এটা থাকুক। এটা বাড়ালে ফাঁকির একটা চেষ্টা থাকে।

এনবিআরের লিডারশিপটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে তিনি বলেন, দক্ষতাসম্পন্ন জনবল না হলে প্রশাসনকে আমি কিভাবে সম্পৃক্ত করবো। অটোমেশন পুরোপুরি হলে রাজস্ব দ্বিগুণ হবে। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির দিকে আমাদের জোর দিতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় মাত্র ৮ শতাংশ, যা কম। সম্পদের বৈষম্য কমাতে সরাসরি করের কোনো বিকল্প নেই।

বাজেটে সরকারি খরচ জিডিপির ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ জানিয়ে তিনি বলেন, অন্যান্য দেশ আমাদের তুলনায় অনেক বেশি সরকারি ব্যয় করে। এই বাজেট বেশি বেশি বাড়ানো গেলে সমাজে সবচেয়ে দরিদ্র গোষ্ঠী উপকৃত হতো।

নাসির উদ্দীন বলেন, আমাদের প্রত্যক্ষ কর ৩৫ শতাংশ এবং পরোক্ষ কর ৬৫ শতাংশ আসে। কিন্তু সরকার এখন প্রত্যক্ষ কর ৭০ শতাংশ এবং পরোক্ষ কর ৩০ শতাংশ করার লক্ষ্য নিয়েছে। যে দেশগুলো প্রত্যক্ষভাবে কর বেশি আদায় করতে পারে, সেই দেশের আয় বৈষম্য অনেক কম। কিন্তু আমাদের দেশে প্রত্যক্ষ কর জিডিপির ২ দশমিক ৬ শতাংশ। ক্রমবর্ধমান বৈষম্য ও সরকারি ব্যয় অত্যন্ত কম। প্রত্যক্ষ কর টাকার অংকে বেড়েছে কিন্তু জিডিপির অর্থে বাড়েনি। আমাদের চেয়ে ভারত অনেক বেশি জিডিপির ট্যাক্স আদায় করছে। আমাদের ট্যাক্স জিডিপি অনুপাত কম। ২০৩১ সালের মধ্যে তা বাড়িয়ে ১৭ ভাগ করতে হবে।

এএ