এনবিআরের রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি ৬৪০৪ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০২২-১১-২২ ১০:১৮:২১


জাতীয় রাজস্ব বোর্ড  (এনবিআর) অর্থবছরের (২০২২-২৩) প্রথম প্রান্তিকের পর অক্টোবরে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতিতে রয়েছে ।এ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ হাজার ৩৪৯ দশমিক ৯২ কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় করেছে এনবিআর। এতে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৪০৪ দশমিক ৮৭ কোটি টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের গবেষণা ও পরিসংখ্যান অনুবিভাগের সাময়িক রাজস্ব আহরণ বিবরণী সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। অবশ্য অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের প্রক্রিয়ায় রয়েছে সমস্যা। সেই সঙ্গে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও এজন্য দায়ী বলে মনে করেন তারা।

চলতি অর্থবছর এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। যদিও অর্থনীতিবিদরা এ লক্ষ্যমাত্রাকে অস্বাভাবিক বলেছেন। তাদের মতে, অর্থবছর শেষে বড় ধরনের ঘাটতি থাকবে। এনবিআরের পরিসংখ্যান বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) এনবিআর রাজস্ব আদায় করেছে ৯০ হাজার ৯০১ দশমিক ৯৯ কোটি টাকা। লক্ষ্য ছিল ৯৭ হাজার ৩০৬ দশমিক ৮৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৬ হাজার ৪০৪ দশমিক ৮৭ কোটি টাকার মতো ঘাটতি রয়েছে।

অক্টোবরে রাজস্ব আদায় হয় ২৩ হাজার ৭৭৭ দশমিক ৫৪ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের একই মাসে আদায় হয়েছিল ২১ হাজার ৫৯৯ দশমিক ১৯ কোটি টাকা। রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। অথচ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ দশমিক ১৭ শতাংশ।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট সবচেয়ে বেশি আদায় হয়েছে। এ খাতে আদায় হয় ৩৪ হাজার ১৮৪ দশমিক ৫৩ কোটি টাকা। ঘাটতি হয়েছে ৪০ দশমিক ৪৮ কোটি টাকা। এরপর আমদানি ও রফতানি পর্যায়ে শুল্ক-কর আদায় হয় ২৯ হাজার ৯৩৬ দশমিক ৮৭ কোটি টাকা। এ খাতে ঘাটতি ৪ হাজার ৮০২ দশমিক ৯৮ কোটি টাকা। অন্যদিকে প্রথম তিন মাসে আয়কর খাতে আসে ২৬ হাজার ৭৮০ দশমিক ৫৯ কোটি টাকা। এ খাতে লক্ষ্যের চেয়ে ১ হাজার ৫৬১ দশমিক ৪১ কোটি টাকা পিছিয়ে আছে এনবিআর। যদিও গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসের তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ১২ দশমিক ১৭ শতাংশ। গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত রাজস্ব আহরণের পরিমাণ ছিল ৭৯ হাজার ৬২২ দশমিক ৬০ কোটি টাকা। চলতি বছরে যা ৯০ হাজার ৯০১ দশমিক ৯৯ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। সে হিসাবে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ দশমিক ১৭ শতাংশ।

রাজস্ব আহরণে তিন খাতেই উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে। মধ্যবিত্তদের ওপর চাপটা থাকবে বেশি। তবে এ চাপ এনবিআরের জন্যও কম নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, সংস্কার ছাড়াই বিপুল রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকায় এবারো চাপে থাকবে এনবিআর। এছাড়া বিশাল অংকের রাজস্ব আহরণে যে কাঠামোগত পরিবর্তন, নীতিমালা, সংস্কার কিংবা সক্ষমতা প্রয়োজন, তা নেই। ভ্যাট আইন চালুর পরও সম্পূরক শুল্ক এবং নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্কের ক্ষেত্রে সমন্বয়ের কথা ছিল। কিন্তু তা করা হয়নি। ফলে ভ্যাটের পুরো চাপ জনগণের ওপর আসবে।

চলতি অর্থবছরে এনবিআরকে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার বিশাল লক্ষ্য দেয়া হয়েছে, যা বিদায়ী অর্থবছরের চেয়ে ৪০ হাজার কোটি টাকা বেশি।

এনজে