ভুল চিকিৎসায় শিশু রাকিবের ক্যানসার

জেলা প্রতিনিধি প্রকাশ: ২০২২-১২-১৪ ১৪:২৭:৫৪


প্রায় সাত মাস আগে অসুস্থ শিশু রাকিবকে ডা. এনামুলের কাছে নেয়া হলে তার পরামর্শে বগুড়া সদরের সূত্রাপুরের শেরপুর সড়কের পিটিআই মোড়ের মডার্ণ ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে ভর্তি করে অপারেশনের জন্য ১৫ হাজার টাকা নেয়া হয়। অপারেশনে শিশু রাকিবের অন্ডকোষ কেটে ফেলা হয়।ফলে শিশু রাকিবের অবস্থার আরো অবনতি হতে থাকে।অন্য চিকিৎসকরা রাকিবের মাকে বলেন, অপারেশন করা চিকিৎসকদের ভুলে রাকিব দিন দিন মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পরবর্তীতে গত ১১ নভেম্বর বগুড়ার টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ এন্ড রাফাতুল্লাহ কমিউনিটি হাসপাতালে রাকিবের মেডিকেল পরীক্ষা করে জানা যায়, সে ভুল চিকিৎসার কারণে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছে।

ঘটনাটি ঘটেছে বগুড়ায়। এ ঘটনায় গত রোববার বগুড়া সদর থানা ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন ঐ শিশুর মা আফরুজা বেগম। তিনি জেলার গাবতলী উপজেলার মহিষাবান দেবত্তরপাড়া গ্রামের নুর আলমের স্ত্রী।

তিন বছর বয়সী শিশু রাকিব। প্রায় ৭ মাস আগে অসুস্থ হয়ে পড়ে রাকিব। ঐ সময় তাকে ডা. এনামুলের কাছে নেয়া হয়। তখন ঐ চিকিৎসকের পরামর্শে গত ৮ মে সন্ধ্যায় রাকিবকে মডার্ণ ক্লিনিকে নিয়ে যান মা আফরুজা। এরপরই চিকিৎসকরা বলেন, রাকিবের হার্নিয়ার সমস্যা রয়েছে, জরুরি ভিত্তিতে অপারেশন করতে হবে। এ সময় অপারেশনের জন্য ১৫ হাজার টাকা নেয় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। এরপর অপারেশনের সম্মতিপত্রে স্বাক্ষরও নেয়া হয় রাকিবের মা-বাবার। ঐ রাতেই রাকিবকে অপারেশন রুমে নিয়ে যান চিকিৎসকরা। পরে তারা বলেন রাকিবকে বাঁচাতে তার একটি অন্ডকোষ কেটে ফেলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সেই অন্ডকোষ পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠাতে নেয়া হয় আরো এক হাজার টাকা।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় সাত মাস আগে অসুস্থ হয়ে পড়ে শিশু রাকিব। তখন তাকে গাবতলীর গোলাবাড়ি বাজারের ডা. এনামুলের কাছে নেয়া হয়। ঐ সময় এনামুল বলেন রাকিব গুরুতর অসুস্থ। সে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে। তাকে সুস্থ করতে হলে বগুড়া সদরের সূত্রাপুরের শেরপুর সড়কের পিটিআই মোড়ের মডার্ণ ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের ভর্তি করাতে হবে।

অভিযুক্তরা হলেন- এনামুল হক রানা, মুনছুর রহমান, আমিনুর রহমান ও ফারুক। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে এ চারজনই চিকিৎসক। তাদের মধ্যে এনামুল হক গাবতলী উপজেলার গোলাবাড়ি মধ্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তার মাধ্যমেই মডার্ণ ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের ছেলেকে নিয়ে যান আফরুজা।

অভিযুক্ত এনামুলের কথা অনুযায়ী গত ৮ মে সন্ধ্যায় রাকিবকে ঐ ক্লিনিকে নিয়ে যান আফরুজা। সেখানে আফরুজার কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা নেয় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। এরপরই চিকিৎসকরা বলেন, রাকিবের হার্নিয়ার সমস্যা রয়েছে, জরুরি ভিত্তিতে তার অপারেশন করতে হবে। এ সময় অপারেশনের সম্মতিপত্রে রাকিবের মা-বাবার স্বাক্ষর নেন ফারুক। চিকিৎসকরা ঐ রাতেই রাকিবকে অপারেশন রুমে নিয়ে যান।

এনামুল আরও বলেন, আমি একজন ডিপ্লোমা চিকিৎসক। গোলাবাড়ী বাজারে আমার চেম্বার রয়েছে। রাকিবের স্বজনরা গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে আমার কাছে নিয়ে আসে। পরে তাকে ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক বলেন- রাকিবের একটি অণ্ডকোষ কেটে ফেলতে হবে। এ সময় রাকিবের মা-বাবা সম্মতি জানিয়ে স্বাক্ষর করেন। কিন্তু এখন এসে তারা ভিন্ন কথা বলছেন।

তিনি বলেন, রাকিবের পরিবার খুবই গরিব। ক্লিনিকের ১৫ হাজার টাকাও তারা দিতে পারেননি। তারা দিয়েছে ৬ হাজার টাকা। যাই হোক, অপারেশন শেষে রাকিবের বায়োপসি পরীক্ষা করে নিতে বলা হয় তার বাবা-মাকে। কিন্তু তারা তা করেননি টাকার অভাবে। এমনকি পরবর্তীতে তারা টাকা দেওয়ার ভয়ে রাকিবকে নিয়ে আর ক্লিনিকেও আসেননি। আমরা জানতে পেরেছি জন্ম থেকেই রাকিব ক্যানসারে আক্রান্ত ছিল।

এনামুল হক বলেন, আমি রাকিবের মাকে ১০ হাজার টাকা দিতে চেয়েছিলাম তা সঠিক। রাকিব খুব অসুস্থ, তাকে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করানোর জন্য সাহায্য করতে চেয়েছিলাম। কারণ তারা আমার কাছে মাঝে মধ্যেই আসতেন।

অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, অপারেশন শেষে ফিরে এসে চিকিৎসকরা বলেন, রাকিবকে বাঁচাতে তার একটি অণ্ডকোষ কেটে ফেলা হয়েছে। সেই অণ্ডোকোষ পরীক্ষার জন্য পরীক্ষার জন্য ঢাকাতে পাঠাতে হবে। এ কারণে রাকিবের মায়ের কাছ থেকে আরো ১ হাজার টাকা নেয় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।

এ ঘটনার পর গত ১২ মে পর্যন্ত রাকিবকে ওখানে ভর্তি রাখা হয়। পরে বিভিন্ন ওষুধ দিয়ে তাকে রিলিজ দেওয়া হয়। পরে অনেকবার এনামুলের হকের সঙ্গে যোগাযোগ করেও রাকিবের কোনো মেডিকেল রিপোর্ট পাননি তার মা। একপর্যায়ে এনামুল বিষয়টি ধামাচাপা দিতে রাকিবের মাকে ১০ হাজার টাকা দিতে চান।

রাকিবের হার্নিয়ার অপারেশনে সার্জনের দায়িত্বে ছিলেন মুনছুর রহমান। সহকারী সার্জন ছিলেন এনামুল হক ও অপারেশন সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আমিনুল হক। অভিযোগে উল্লেখ থাকা এই বিষয়ের সত্যতা স্বীকার করেন এনামুল হক।

রাকিবের মা আফরুজা বলেন, অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাই। আমার স্বামী দিনমজুর। তিনি ঢাকায় থাকেন। তিনিও কাজ করতে পারেন না নিজের অসুস্থতার কারণে। আমার ছেলে কষ্টে ছটফট করছে। টাকার অভাবে তার চিকিৎসা হচ্ছে না। অবশেষে গত রোববার চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছি।

এদিকে রাকিবের অবস্থার আরো অবনতি হতে থাকে। অন্য চিকিৎসকরা রাকিবের মাকে বলেন, তার ছেলের শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। অপারেশন করা চিকিৎসকদের ভুলে রাকিব দিন দিন মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পরবর্তীতে গত ১১ নভেম্বর বগুড়ার টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ এন্ড রাফাতুল্লাহ কমিউনিটি হাসপাতালে রাকিবের মেডিকেল পরীক্ষা করে জানা যায়, সে ভুল চিকিৎসার কারণে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছে।

সদর থানার এসআই মঞ্জুরুল হক বলেন, রাকিবের মা থানায় একটি অভিযোগ করেছেন। তার অভিযোগটি তদন্ত করা হচ্ছে। আমরা সরাসরি চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি না। বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, রাকিবের মা সিভিল সার্জনের কাছেও অভিযোগ করেছেন। ভুল চিকিৎসায় রাকিবের অণ্ডকোষ কেটে ফেলা হলে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তদন্তে তা জানা যাবে। এরপর আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আই এইচ