বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পরিবেশবান্ধব কারখানা এখন বাংলাদেশে
নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০২২-১২-২১ ১৯:২০:০৬
২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর দেশি-বিদেশি সমালোচনার মুখে ব্যবসা টেকাতে নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে মনোযোগী হন তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা। তখন চাপ কিংবা বাধ্যবাধকতা না থাকলেও তাঁদের কেউ কেউ পরিবেশবান্ধব কারখানা নির্মাণে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। পরে সেই আগ্রহ অন্য অনেক উদ্যোক্তার মধ্যে ছড়িয়ে যায়। ফলে বিশ্বে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক পরিবেশবান্ধব কারখানার মুকুট এখন বাংলাদেশে।
চলতি ডিসেম্বর মাসে নতুন করে দুটি তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান পরিবেশবান্ধব কারখানার সনদ পেয়েছে। আর তাতে বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব তৈরি পোশাক ও বস্ত্র কারখানার সংখ্যা বেড়ে ১৮০-তে দাঁড়াল। আর মাত্র ২০টি প্রতিষ্ঠান সনদ পেলে পরিবেশবান্ধব কারখানা নির্মাণে ডাবল সেঞ্চুরি বা দ্বিশত হয়ে যাবে বাংলাদেশের। সেটি হতে হয়তো খুব বেশি সময় লাগবে না। কারণ, পাইপলাইনে পাঁচ শতাধিক পরিবেশবান্ধব কারখানা নির্মাণাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।
চলতি বছর তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের মোট ২৭ প্রতিষ্ঠান পরিবেশবান্ধব কারখানার সনদ পেয়েছে। তার মধ্যে চলতি মাসে নতুন যে দুটি কারখানা পরিবেশবান্ধব কারখানার সনদ পেয়েছে, সেগুলো হচ্ছে ঢাকার ভিক্টোরিয়া ইনটিমেটস ও ময়মনসিংহের ড্রেসডেন টেক্সটাইল। দুটি প্রতিষ্ঠানই লিড গোল্ড সনদ পেয়েছে।
পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তা সাজ্জাদুর রহমান মৃধার হাত ধরে ২০১২ সালে প্রথম পরিবেশবান্ধব কারখানার যাত্রা শুরু বাংলাদেশে। পাবনার ঈশ্বরদী ইপিজেডে তিনি স্থাপন করেন ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও। তার দেখানো পথ ধরে দেশে পরিবেশবান্ধব কারখানা নির্মাণে দ্বিশতকের পথে রয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমানে বিশ্বে অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি পরিবেশবান্ধব পোশাক ও বস্ত্রকল রয়েছে। তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের পাশাপাশি শিপইয়ার্ড, জুতা ও ইলেকট্রনিক পণ্য খাতে আছে পরিবেশবান্ধব কারখানা। বাণিজ্যিক ভবনও হচ্ছে পরিবেশবান্ধব, তবে সংখ্যায় কম।
বিশ্বের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দিয়ে থাকে। তাদের মধ্যে অন্যতম যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি)। তারা ‘লিড’ নামে পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দিয়ে থাকে। লিডের পূর্ণাঙ্গ রূপ লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন। সনদটি পেতে একটি প্রকল্পকে ইউএসজিবিসির তত্ত্বাবধানে নির্মাণ থেকে উৎপাদন পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে সর্বোচ্চ মান রক্ষা করতে হয়। এ জন্য নতুন ভবন নির্মাণ কিংবা পুরোনো ভবন সংস্কার করে আবেদন করা যায়।
১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইউএসজিবিসি। সংস্থাটির অধীনে কলকারখানার পাশাপাশি বাণিজ্যিক ভবন, স্কুল, হাসপাতাল, বাড়ি, বিক্রয়কেন্দ্র, প্রার্থনার কেন্দ্র ইত্যাদি পরিবেশবান্ধব স্থাপনা হিসেবে গড়ে তোলা যায়। লিড সনদের জন্য ৯টি শর্ত পরিপালনে মোট ১১০ পয়েন্ট আছে। এর মধ্যে পয়েন্ট ৮০-এর ওপরে হলে ‘লিড প্লাটিনাম’, ৬০-৭৯ হলে ‘লিড গোল্ড’, ৫০-৫৯ হলে ‘লিড সিলভার’ এবং ৪০-৪৯ হলে ‘লিড সার্টিফায়েড’ সনদ মেলে। বাংলাদেশের পরিবেশবান্ধব স্থাপনাগুলো অধিকাংশই ইউএসজিবিসির অধীনে সনদ পেয়েছে।
বিজিএমইএর তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে লিড সনদ পাওয়া ১৮০ পোশাক ও বস্ত্র কারখানার মধ্যে ৫৮টি লিড প্লাটিনাম, ১০৮ গোল্ড, ১০ সিলভার ও ৪টি সার্টিফায়েড সনদ পেয়েছে।
এএ