কনজ্যুমারিজমের দৃষ্টিতে নারীর শরীর একটি প্রোডাক্ট!

আপডেট: ২০১৬-০৪-০৯ ১২:৩৬:১৩


Bannaকনজ্যুমারিজমের দৃষ্টিতে নারীর শরীর একটি প্রোডাক্ট। এবং ভোক্তা সেখানে নারী এবং পুরুষ উভয়ই। কেননা ঐ শরীর উন্মুক্ত করে রাখা নারীর দিকে একজন নারী তাকায় নিজেকে কম্পেয়ার করতে, আর একজন পুরুষ তাকায় তাঁর হরমোনাল মেকানিজমে।

যারা কঞ্জ্যুমার পলিসির এইসব খেল বুঝেনা একদম হাবাগোবা তারাই নারীর অসম্মানের জন্য নানান অসংলগ্ন কথা বলে এই বেহায়াপনাকে জায়েজ করতে সচেষ্ট। আমি তাদের দোষ দেই না, তারা তো কমজানা মানুষ, কার এত সময় আছে কঞ্জ্যুমার বিহেইভিয়ার নিয়ে গবেষণা করবে? তাঁর চেয়ে গরম জিলেপির মত কিছু উত্তেজিত কথা বলে নারীর অনাবৃত হওয়াকেই তাঁর অধিকার এবং সৌন্দর্য বুঝাতে তৎপর হওয়াটা তাদের জন্য খুব সহজ।

নারী কোন কাপড় পড়বে সেটা অবশ্যই পুরুষ নির্ধারণ করবে না। কারণ নারী নিজেই একটা স্বতন্ত্র সত্ত্বা যে নিজের কল্যাণে নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে যথেষ্ট পারঙ্গম। কিন্তু সমস্যা হলো সেই পুঁজিবাদ, সেই ব্যাবসায়ীক স্বার্থপরতার মগজ ধোলাই প্রক্রিয়া।

আমার অনেক বন্ধু, বোন আছেন যারা মনে করেন নারীর অসম্মানের পেছনে পোশাক দায়ী নয়, দায়ী পুরুষের মানসিকতা। আমি তাদের সাথে সম্পূর্ণ একমত। পুরুষকে অবশ্যই মানসিকতা বদলাতে হবে, এবং আমি তো মনে করি একজন চরিত্রবান ব্যাক্তির মানসিক দৃঢ়তা এমন হওয়া জরুরী যে একজন উলঙ্গ নারীকে সে উপেক্ষা করতে পারবে।

কিন্তু নারীর অব্জেক্টিফাইং তো বুঝেন? না বুঝলে পরেন, দেখেন কিভাবে ধীরে ধীরে একটা প্রজন্মকে অসুস্থ করে দিচ্ছে, যায়গায় অযায়গায় নারীদের ইরোটিক ব্যবহার করে পুরুষ ও নারী ভোক্তাদেরকে দিয়ে ইন্ডিরেকটলি প্রোভোক করছে তাদের পণ্যটি কেনাতে, ইউটিউবে গুগলে এরকম হাজার সোর্স পাবেন, ঐ কথাগুলো যারা বলেছে তারা কেউ মোল্লা মৌলুভি না, তারা এক একজন রিসার্চার, এমনকি তারা প্রায় কেউ ই মুসলিম না।

প্রিয় বন্ধু, আপনি যে স্বাধীনতার কথা বলতে চাইছেন সেটা ঐ পুরুষদেরই একটি অদৃশ্য জাল। তারা চায় আপনি অশালীন পোষাকে অনাবৃত হয়ে নিজেকে পুরুষের চোখের সমানেই মা, বোন, বধূ কিংবা প্রেমিকা অথবা একজন জ্ঞানসম্পন্ন মানব সম্প্রদায়ের কেউ না হয়ে কেবল ভোগের উপকরণ হিসেবে উপস্থাপন করেন। আফসোস তারা এতটা চালাকির সঙ্গে এটাকে আপনার অধিকারের সাথে জুড়ে দিয়েছে যে সেই সূক্ষ্ম তারটা আপনি দেখতেই পারছেন না। আপনিও নাচের পুতুল।

আধুনিকতাকে কে সংজ্ঞায়িত করছে? আপনি আমি? না নীতি নৈতিকতা বিবর্জিত একদল ফ্যাশন ইন্ডাষ্ট্রিয়ালিষ্ট, যাদের ডিজাইনাররা আপনাকে আরো কতটা কামুক করে উপস্থাপন করা যায় সেই ভাবনা নিয়ে কাপড়ের ডিজাইন করে, কনটেম্পোরারি ডিজাইন ফুরিয়ে গেলে ভিক্টোরিয়ান শেইপকে একটু এদিক সেদিক করে আবার হাল ফ্যাশনের অন্তর্ভুক্ত করে, অবজেক্টিফাইং এর প্রয়োজনে এমন সব সেলাই দেয় যেন আরো কিছুটা অংশ পুরুষের চোখে আকর্ষনীয় হয়ে বের হয়ে আসে।

তাদের বিলবোর্ড বিজ্ঞাপনে নারীদের শরীর চোখমুখ এমন একটা অবাস্তব রূপে প্রকাশ করে যে সেই রূপ ও সৌন্দর্য পেতে আপনি জীবনের সবচেয়ে প্রোডাক্টিভ সময়টা ব্যয় করে ফেলছেন, অথচ ফটোশপড কিংবা মেকআপের প্রভাবে প্রকাশিত সেই সৌন্দর্য আপনার অধরাই রয়ে যায়, আপনি শত চেষ্টা করেও তাদের বডী শেইপ কিংবা ঠোট চোখ অর্জন করতে না পেরে একটা ভয়াল মানসিক যন্ত্রণা ও ইনফিরিয়রিটি কমপ্লেক্সে ভুগে ভুগে বাকীটা সময় শেষ করে ফেলছেন। এই সবই তাদের ব্যবসায়ীক ধান্দা, আপনি নিষ্পাপ মানুষ, কতটা সরল মনে এটাকেই হালের পোশাক মনে করে পড়ে পড়ে ঘুরে ঘুরে বন্ধুদের হট হট কমেন্ট কুড়াচ্ছেন।

আমি একমত, আপনার পোশাক দ্বায়ী নয়, বরং পুরুষের সেই মানসিকতাটাই দায়ী যা আপনাকে তাঁর ইচ্ছেমত পোশাক পড়তে বাধ্য করছে আপনার অজান্তেই। আপনার স্বাধীনতা আছে তাদের ডিজায়ারের পরাধীন হওয়ার কিংবা আপনার সম্মান অর্জনের প্রয়োজনে নিজের পোশাককে কাষ্টমাইজ করার। কারণ আপনি সম্মানিতা নারী, যে একজন স্বাধীন পুরুষের মতই চিন্তায় কর্মে এবং ব্যাক্তিত্বে স্বতন্ত্র।

অবশ্যই পুরুষ দৃষ্টি সংযত করবে, কিন্তু পুরুষ সেই সাথে আহবান করে আপনি কিংবা আপনার ঐ সরল মগজটা যেন কারো ব্যবসার গুদামঘর হয়ে না যায়। নিজেকে খোলামেলা রাখতে আপনি পূর্ণ স্বাধীন, কিন্তু এই স্বাধীনতাটা অন্য কারো ইল্যুশন কিংবা ঠিক আপনার জন্যই বানানো বন্ধীখানা নয় তো? আপনার অজান্তে আপনার মগজে কেউ কলকাঠি নাড়ছে না তো? আপনি শিওর ওটা আপনারই ইচ্ছা?

(কথাগুলো বুঝতে হলে কিছু ব্যাকগ্রাউণ্ড নলেজ থাকা জরুরী, বিশেষ করে objectification of women এবং negative effects of consumerism on society এই সংক্রান্ত জ্ঞান না থাকলে কথাগুলো বেশ অর্থহীন এবং অফেন্সিভ মনে হবে )

সূত্র: Facebook:  H Al Banna