আবাসিকে বাণিজ্যিক ভবন : বন্ধ হচ্ছে গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ!
আপডেট: ২০১৬-০৪-১১ ১৬:৫০:৪০
বরাদ্দের শর্ত ভঙ্গ করে রাজধানী ঢাকায় সরকারি প্লটে প্রতিষ্ঠিত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স বাতিলসহ বিভিন্ন সেবা যেমন- বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও টেলিফোন লাইন বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে অভিযুক্ত ওইসব প্রতিষ্ঠান থেকে ট্যাক্স ও ভ্যাট আদায় বন্ধ রাখবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এ ছাড়া রাজধানী উয়ন্নন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অভিজাত এলাকাসহ রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় ৩ হাজারের মতো ভবনে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চলছে। সরকারি প্লটের পর ব্যক্তি-মালিকানাধীন ভবন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের ক্ষেত্রেও একই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
মন্ত্রিসভার গত ৪ এপ্রিলের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়নে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ এবং সিটি করপোরেশনকে নির্দেশও দেয়া হয়েছে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বরাদ্দের অন্যতম শর্ত ছিল, প্লটে নির্মিত ভবন বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা যাবে না। আবাসিক এলাকায় নির্মিত ভবনে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ অভিযানে নিয়ম ভঙ্গের মহোৎসব গোচরে আসে কর্তৃপক্ষের।
সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর অভিজাত আবাসিক এলাকায় নির্মিত ভবনে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে মহানগরীতে যানজট বৃদ্ধির পাশাপাশি নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। একই সঙ্গে স্বকীয়তা হারাতে বসেছে আবাসিক এলাকাও।
২০১৫ সালের ৮ জুন মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে মহানগরীর রাস্তার পাশে ও আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক ভবন, রেস্টুরেন্ট ও বারসহ অনুমোদিত কার্যক্রম বন্ধে স্থানীয় সরকার বিভাগের নেতৃত্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগকে যৌথভাবে দায়িত্ব দেয়া হয়। পরবর্তীতে এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে।
এ নির্দেশনার পর গত বছরের ৩০ জুন রাজউক চেয়ারম্যানকে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণাণলয়ের সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ একটি চিঠি দেন। চিঠিতে রাজধানীর যেসব বহুতল ভবনের বেইসমেন্ট ও কারপার্কিংয়ের স্থান বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে, সেসব ভবন থেকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ এবং সংশ্লিষ্ট ভবন মালিকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। এতেও তেমন কোনো কাজ হয়নি।
বাসিন্দাদের অভিযোগের পর আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিভাবে ব্যবহৃত ভবনগুলোর বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করতে বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগে ৬টি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সিটি করপোরেশন, রাজউক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি সরেজমিন পরিদর্শন কমিটি গঠন করে দেয়া হয়। কমিটির সদস্যরা রাজধানীর আবাসিক এলাকাগুলো পরিদর্শন করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেন।
রাজউকের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির ২ নম্বর জোন উত্তরা ও টঙ্গী এলাকায় ১ হাজার ৩৭৫টি, ৩ নম্বর জোনের মিরপুর ও সাভার এলাকায় ৪৪৪টি, ৪ নম্বর জোনে গুলশান ও মহাখালী এলাকায় ৯০টি (আংশিক), ৫ নম্বর জোনে ধানমণ্ডি ও লালবাগ এলাকার ৩৩টি (আংশিক), ৬ নম্বর জোনে মতিঝিল ও ভুলতা এলাকায় ৩২টি (আংশিক), ৭ নম্বর জোনে সূত্রাপুর ও কেরানীগঞ্জ এলাকায় ২৪টি (আংশিক), ৮ নম্বর জোনে ডেমরা-নারায়ণগঞ্জ এলাকায় ২৬টি (আংশিক) এবং বনানী ও বারিধারা এলাকায় ৪০৮টি ভবনসহ ৩ হাজারের বেশি ভবন বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
এ ছাড়া বেইসমেন্ট ও কারপার্কিংয়ের জায়গায় ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা হচ্ছে। এসব ভবনের বেইসমেন্ট ও কার পার্কিংয়ের স্থানে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার কারণে একদিকে যেমন মহানগরীর যানজট বৃদ্ধি পাচ্ছে, অন্যদিকে বিপুল অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। অবৈধ ভবনের তালিকা প্রণয়নের পাশাপাশি করণীয় নির্ধারণে বেশকিছু সুপারিশও দিয়েছে গঠিত কমিটি। এর মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে বেশকিছু সুপারিশ সিদ্ধান্ত হিসেবে নেয়া হয়। সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে-আবাসিক এলাকার কোন প্লটে বেইসমেন্টের জায়গা গাড়িপার্কিং তা নিশ্চিত করতে হবে। উচ্ছেদ করতে হবে আবাসিক হোটেলসহ বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত স্থাপনা। রাজউক ও সিটি কর্পোরেশন এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে।
এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ভবন মালিককে স্ব-উদ্যোগে অপসারণের জন্য ছয়মাস সময় দেওয়া যাবে। এর মধ্যে না করলে পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সব অপসারণ করতে হবে। মন্ত্রিসভার এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চলতি বছরের ৪ এপ্রিল থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ৬ মাস সময় পাবেন ভবন মালিকেরা।
এর মধ্যে ভবনগুলো অপসারণ না করলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স বাতিল ও সব সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সেবা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। এছাড়া অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ট্যাক্স ও ভ্যাট আদায় বন্ধ রাখবে। একই সঙ্গে আবাসিক এলাকায় বার বা মদের লাইসেন্স বাতিল, অপসারণ এবং নতুন লাইসেন্স না দেয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়।
কমিটির সুপারিশগুলি প্রতিবেদন আকারে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়। গত ৪ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে তা অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী।
জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মো. বিলাল বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকের এ সিদ্ধান্ত এখনো আমাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি। সরকারের সিদ্ধান্ত অবশ্যই বাস্তবায়ন করা হবে। সূত্র: বাংলামেইল
সানবিডি/ঢাকা/এসএস