কক্সবাজারে অন্যরকম বৈশাখী উৎসব
প্রকাশ: ২০১৬-০৪-১৪ ১৯:২৭:৪০
ইলিশের স্থান কক্সবাজারে এবার ইলিশ ছাড়াই পালিত হয়েছে বৈশাখী উৎসব। অনেক জায়গায় ইলিশের বদলে ছাগল, ডিম, মরিচ, আলুভর্তার আয়োজনে বাঙ্গালীর আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে এনে দেয় ভিন্নতা। এরপরেও পুরনোকে ঝেড়ে ফেলে নতুনকে বরণ করার প্রস্তুতি বাঙ্গালির বহুদিনের অভ্যাস। বহু বছর ধরে বাংলা সংস্কৃতিতে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের ব্যাপারটি চলে এলেও কালের পরিক্রমায় উদযাপনের ধরনে পরিবর্তন এসেছে।
তবু বাঙালির প্রাণের উৎসব হিসেবে বৈশাখ আজো তার আবেদন ধরে রেখেছে। নতুনকে বরণ ও পুরাতনকে বিদায় করার কর্মযজ্ঞে পর্যটননগরী কক্সবাজারে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক-সামাজিক বিভিন্ন সংগঠনগুলো নানান কর্মসূচির মধ্যদিয়ে উৎসবে মেতে উঠে।
যন্ত্র সংগীতের মন ভোলানো সুরের মুর্চনার মধ্য দিয়ে পর্যটন নগরীর কক্সবাজারে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বাংলা নববর্ষকে বরণে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার সকালে শহরে বর্ণাঢ্য শুভাযাত্রার মাধ্যমে বাঙালী জাতীর চিরায়ত দিনটিকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। বাদ্য যন্ত্রের তাল, গান আর নিত্যের মাধ্যমে বরণ করে নেয়া হয় দিনটিকে। সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে মঙ্গলশোভা যাত্রা শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পাবলিক লাইব্রেরীর মাঠে সম্মিলন ঘটে।
শোভাযাত্রায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন, পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক ড. আবুল ফয়েজ মোহাম্মদ আলাউদ্দিন খানসহ প্রশাসন ও সুশীল সমাজের লোকজন ও বিভিন্ন সংগঠন অংশ নেন।
এ দিকে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে পাবলিক লাইব্রেরী মাঠে বসে বৈশাখী মেলা। অর্ধশত স্টলে ভিন্ন স্বাদের ২৫ রকম পিঠার পসরা বসিয়েছে কক্সবাজার আদর্শ মহিলা কামিল (মাস্টার্স) মাদরাসা। দক্ষ হাতের রান্না করা পিঠা মন কাড়ছে ক্রেতাদের। এই স্টলে পিঠা ছাড়াও সাজিয়ে রাখা হয়েছে টুকটুকে লাল তরমুজ ও বেলের শরবতও।
আথিয়েতার জন্য দুইজন শিক্ষিকাসহ একঝাঁক তারুণ্যদ্বীপ্ত শিক্ষার্থী সার্বক্ষণিক ব্যস্ত ছিল। তাদের স্টলটি পুরো মেলায় ভিন্নতা এনে দিয়েছে। পাশাপাশি কক্সবাজার ইসলামিয়া মহিলা কামিল (মাস্টার্স) মাদরাসার স্টলেও রয়েছে দুধ, দধি, শরকতসহ ভিন্নজাতের পিঠা-পায়েস।
মেলা ঘুরে চোখে পড়েছে কক্সবাজার কেজি এন্ড মডেল হাই স্কুল, প্রাইমারী টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ও তৎসংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয় (পিটিআই), কক্সবাজার সরকারী উচ্চবিদ্যালয়, কক্সবাজার সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, পাল্স, বায়তুশ শরফ আদর্শ জব্বারিয়া একাডেমী, পৌর প্রিপ্যারেটরাী উচ্চ বিদ্যালয়, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক) স্টল।
এসব স্টলেও বৈশাখী দিনের নানা রকমের পিঠা-পায়েস, শরবত খেতে ভীড় করে লোকজন। বিশেষ করে গরমের মাত্রা একটু বেশী হওয়ায় শরবতের কদরটা বেড়েছে। পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির স্টলে শাড়ী, নকশী কাঁথাসহ বিভিন্ন জাতের পোষাক দর্শণার্থীদের নজর কাড়ে।
মেলায় আগত দর্শকদের মাতিয়ে রাখতে মাঠের পূর্ব পার্শ্বে নির্মিত মঞ্চে পরিবেশিত হচ্ছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তীব্র গরমেও মন মাতানো অনুষ্ঠান উপভোগ করে দর্শকরা। খরতাপে মাথার ঘাম পায়ে পড়লেও বাঙালীর উৎসবে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়নি। সবাই যে যার মতো বৈশাখী উৎসবে মেতেছে। অনুষ্ঠানে শিশু, কিশোর, যুবক, যুবতী থেকে সব বয়সী বাঙালীর মিলনমেলা ঘটেছে।
মঞ্চে দর্শকদের মাতিয়ে তুলেন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিকজোট, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, সরকারী শিশু পরিবারসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন। এছাড়াও শহরের বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যানারেও বৈশাখ পালিত হয়েছে।
তবে, এবার পান্তা ইলিশ আয়োজনে একটু ভাটা পড়ে । অনেক জায়গায় ইলিশের বদলে ছাগল, ডিম, মরিচ, আলুভর্তার আয়োজনে বাঙ্গালীর আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে এনে দেয় ভিন্নতা।
সানবিডি/ঢাকা/শাহজাহান/আহো