আইএস জঙ্গিদের মায়েদের দুঃখগাঁথা নিয়ে নাটক
প্রকাশ: ২০১৬-০৪-১৬ ১১:৪৪:৪০
ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হয়ে সিরিয়ায় যুদ্ধে গেছে এমন এক ছেলের মা তার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বললেন, সিরিয়া শব্দটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমার মনে হলো আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। আমার মনে হলো আমি ‘মা’ হিসেবে আমার দায়িত্ব ঠিকমত পালন করিনি।
আমি তাকে বলতে পারিনি তাকে আমি কত বেশি ভালোবাসি। বলতে পারিনি যে, সেই আমার কাছে সবকিছু। ব্রাসেলসের মোলিনবিক নামে যে এলাকাটি এখন ইউরোপে ইসলামী জঙ্গিদের সবচেয়ে বড় ঘাঁটি বলে পরিচিতি পেয়েছে, সেখানকার বাসিন্দা এই মা এভাবেই তার নিদারুণ যন্ত্রণার কথা প্রকাশ করেছেন। তার মতো আরও বহু মায়ের সন্তান এভাবে জঙ্গি হয়ে চলে গেছে সিরিয়া বা ইরাকে।
অনেকে আত্মঘাতী হামলায় অংশ নিয়েছে। জঙ্গিদের সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা বড় শিরোণাম হয়েছে বিশ্ব জুড়ে, কিন্তু এ শিরোণামের আড়ালে ঢাকা পড়ে গেছে এই মায়েদের গভীর মর্মযাতনা। এই প্রথম এরকম মায়েদের জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে মঞ্চস্থ করা হয়েছে একটি নাটক। ‘অ্যানাদার ওয়ার্ল্ড- লুজিং আওয়ার চিলড্রেন টু ইসলামিক স্টেট’ নামের এই নাটকের কাহিনী গড়ে উঠেছে ৪৫ জন মায়ের বাস্তব জীবনকে অবলম্বন করে।
গবেষকরা দীর্ঘ সময় ধরে তাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। আর সেই সাক্ষাৎকারে তাদের বাস্তব কথা-বার্তার ভিত্তিতেই গড়ে উঠেছে নাটকের সংলাপ। কিসের আকর্ষণে আসলে এদের ছেলে-মেয়েরা জঙ্গি হয়ে গেলো? কিসের আকর্ষণে তারা মা-বাবাক-পরিবার পেছনে ফেলে এরকম ভয়ংকর মতাদর্শের দিকে ঝুঁকলো? নাট্যকার জিলিয়ান স্লোভো বলছেন, এর কোন একক কারণ নেই। ‘বর্ণবাদ, ইসলামোফোবিয়া, সমাজ থেকে বিচ্ছিন্নতা, এরকম নানা কারণ এর পেছনে কাজ করেছে।
জিলিয়ান জানান, তার নাটকের প্রত্যেকটি সংলাপ তিনি নিয়েছেন এই নাটকের জন্য যে ৪৫ জন মায়ের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে, সেখান থেকে। ব্রাসেলসের মোলিনবীকের কয়েকজন মায়ের সাক্ষাৎকার নেয়া হয় গত বছরের অক্টোবরে। এর কিছুদিন পরেই ঘটে প্যারিসের সন্ত্রাসী হামলা। সেই সন্ত্রাসী হামলায় আত্মঘাতী বোমারু হিসেবে অংশ নিয়েছিল সাক্ষাৎকার দেয়া এক মায়ের সন্তান। গত অক্টোবরে যখন নাটকের রিহার্সেলের এক পর্যায়ে গবেষকরা ব্রাসেলসে ফিরে যান, তখন তারা প্রথম বিষয়টা জানতে পারেন।
জিলিয়ান স্লোভো জানান, আগের দফায় সাক্ষাৎকার দেয়া এক মাকে এবার খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন আমরা আবিস্কার করলাম যে এই মায়ের ছেলেই আসলে প্যারিসে স্টেডিয়ামের বাইরে আত্মঘাতী হামলা চালায়। এই ঘটনা আমাদের পুরো নাটককে তখন একটা অন্যরকম অর্থ দিলো। কারণ এই মা-ই তার সাক্ষাৎকারে নিজের অপরাধবোধের কথা বলেছিল। বলেছিল, আমি যদি মা হিসেবে সব দায়িত্ব ঠিকমত পালন করতাম, তাহলে হয়তো এরকম ঘটতো না।
জিলিয়ান স্লোভো আশা করছেন, এই নাটক মুসলিমদের সম্পর্কে মানুষের গৎবাঁধা ধারণা বদলাতে সাহায্য করবে। লন্ডনের ‘ন্যাশনাল থিয়েটারে’ এই নাটক চলবে আগামী ৭ই মে পর্যন্ত। সূত্র : বিবিসি
সানবিডি/ঢাকা/জে/এসএস