৩৩৬ কোটির ঈশ্বরদী-রূপপুর রেললাইনের উদ্বোধন আগামীকাল

জেলা প্রতিনিধি প্রকাশ: ২০২৩-০২-০৮ ১৩:০৪:৫৪


রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ভারী মালামাল ও যন্ত্রপাতি সহজে পৌঁছাতে পাবনার ঈশ্বরদী থেকে রূপপুর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। ৩৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ২৬ কিলোমিটার এ রেলপথের উদ্বোধন হতে যাচ্ছে বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি)।

বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ঈশ্বরদী-রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ রেলপথ প্রকল্পের পরিচালক ও পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী আসাদুল হক নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ রেলপথ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। এ রেলপথ চালু হলে রাজস্ব আয় বাড়বে। রূপপুর প্রকল্পের মালামালের পাশাপাশি ঈশ্বরদী ইপিজেডের মালামাল পরিবহনে সুবিধা হবে। এরই মধ্যে ইপিজেডের শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকরা রেলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তাদের শিল্প-প্রতিষ্ঠানের মালামাল পণ্যবাহী ট্রেনের মাধ্যমে আনতে চান। এ রেলপথের মাধ্যমে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের মালামালও দ্রুত আনা-নেওয়া করা যাবে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, ঈশ্বরদী-রূপপুর রেলপথ উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে রূপপুর প্রকল্পের ভারী মালামাল আনা-নেওয়ার পাশাপাশি এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রচার ঘটবে। যোগাযোগের নতুন দ্বার উন্মোচন হতে চলেছে। যার ফলে এ অঞ্চলের অর্থনীতি জাগরিত হবে।

পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১ এপ্রিল এ রেলপথে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০২২ সালের ৩০ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে নির্মাণকাজ সমাপ্ত করা হয়। ভারতের জিপিটি ও বাংলাদেশের এসইএল ও সিসিএল অংশীদারত্বের ভিত্তিতে (জয়েন্ট ভেঞ্চার) ৩৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ঈশ্বরদী বাইপাস টেক অব পয়েন্ট থেকে পাকশীর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত ২৬ দশমিক ৫২ কিলোমিটার ব্রডগেজ-মিটারগেজ (ডুয়েল গেজ) রেললাইন নির্মাণ করা হয়।

এছাড়া ১৩টি লেবেল ক্রসিং গেট, ‘বি’ শ্রেণীর একটি সুদৃশ্য স্টেশন ভবন, একটি প্ল্যাটফরম, সাতটি বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনের দুপাশের লুপলাইন সংস্কার, প্ল্যাটফর্ম উঁচু করার কারণে একসঙ্গে ১৮টি ট্রেন দাঁড়াতে পারবে। সাবেকি রিলে-ইন্টারলকিং পদ্ধতিকে বাদ দিয়ে কম্পিউটারইজড পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। ফলে সুইচ কেবিনে বাটন চাপলেই ট্রেন আসা-যাওয়ার রেললাইনটি সহজেই ক্লিয়ার হবে। এখন আর কোনো ট্রেন আউটারে এসে লাইন ক্লিয়ারের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। মালপত্র আনা-নেওয়ার জন্য ট্রেনের যে লোকোমোটিভ ইঞ্জিন আসবে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ঈশ্বরদী লোকোমোটিভ কারখানায় ডকপিট নির্মিত হয়েছে। ডকপিটে একই সময়ে একটি মিটারগেজের ইঞ্জিন, নয়টি ব্রডগেজ ইঞ্জিন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যাবে।

ব্রিটিশ আমলে পাকশীর সন্নিকটে নির্মিত হয়েছিল বরফকল। বরফ পরিবহনের জন্য রেল কর্তৃপক্ষ সেসময় ঈশ্বরদী-পাকশী রুটে একটি রেললাইন নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে পাকশী বিভাগীয় রেলের সদর দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে যাতায়াতের জন্য ওই রেলপথ দিয়ে বিনা পয়সার ‘পাইলট’ ট্রেনের ব্যবস্থা ছিল। রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও ওই ট্রেনে সাধারণ মানুষও বিনা পয়সায় চলাচল করতেন। নব্বইয়ের দশকে তৎকালীন বিএনপি সরকার ‘পাইলট ট্রেন’ চলাচল বন্ধ করে দেয়।

দীর্ঘ ২৬ বছর পর ‘পাইলট ট্রেন’ চলাচল করার রুটের পরিত্যক্ত রেললাইনগুলো সরিয়ে নতুন করে ঈশ্বরদী-রূপপুর পারমাণবিক কল্প পর্যন্ত রেলপথসহ সংস্কার শুরু হয়।

আই এইচ