তনু হত্যা, একটি পরিকল্পিত হত্যা: সিআইডি
আপডেট: ২০১৬-০৪-২০ ১৩:২৬:৫৫
কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুকে পরিকল্পিতভাবেই হত্যা করা হয়েছে বলে মনে করছেন মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি। কর্মকর্তাদের ধারণা, তনুকে সন্ধ্যা পৌনে সাতটা থেকে রাত নয়টার মধ্যে সেনানিবাসের ভেতরেই কোথাও হত্যা করা হয়েছে। পরে তাঁর লাশ ঝোপের মধ্যে ফেলা হয়। এই ঘটনায় তিন থেকে চারজন জড়িত থাকতে পারে। তনুর পরনে থাকা কাপড়ে ডিএনএ টেস্ট করে তিনজনের আঙুলের ছাপ পাওয়া গেছে।
সিআইডির নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানায়, তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর গত ১৯ দিনের অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত ও আলামত বিশ্লেষণ করে ঘটনা সম্পর্কে সিআইডির কর্মকর্তারা একটা মোটামুটি স্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন।
তদন্ত দলের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তনু ২০ মার্চ বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রথমে কুমিল্লা সেনানিবাসের সৈনিক জাহিদ এবং পরে সার্জেন্ট জাহিদের বাসায় টিউশনি শেষ করে বের হন। সন্ধ্যা ৬টা ৪৪ মিনিটে তনুর সঙ্গে সর্বশেষ কাউছার নামের এক ছেলের মুঠোফোনে কথা হয়। প্রতিদিনের মতো টিউশনি শেষে বাসায় না ফেরায় তাঁর মা আনোয়ারা বেগম মেয়ের খোঁজে বের হন। তিনি রাত ৯টা পর্যন্ত সেনানিবাসের ভেতরে যে পথে তনু বাসায় ফেরেন সেই কালভার্টের কাছে অপেক্ষা করেন। এরপর বাসায় ফিরে যান। রাত সাড়ে ১১টায় বাবা, ভাই ও একজন শিক্ষক কালভার্টের পাশেই ঝোপের মধ্যে তনুর লাশ দেখতে পান। তদন্তকারীরা মনে করছেন, সন্ধ্যা পৌনে ৭টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে কোনো একসময় সেনানিবাসের ভেতরের কোনো স্থানে তনুকে হত্যা করা হয় এবং রাত ৯টা থেকে ১১টা ২০ মিনিটের মধ্যে তাঁর লাশটি ঝোপের মধ্যে ফেলা হয়।
রাত সাড়ে ১১টায় তনুর মৃতদেহ উদ্ধার করে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে যখন নেওয়া হয়, তখন লাশটি ছিল ঠান্ডা। ওই সময় দায়িত্ব পালনকারী চিকিৎসকেরা সিআইডিকে বলেছেন, লাশ দেখে তাঁদের মনে হয়েছে হাসপাতালে নেওয়ার ঘণ্টা তিনেক আগে তনুকে হত্যা করা হয়েছে।
তনুর মা আনোয়ারা বেগম প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘তনু তো ছোটখাটো মানুষ ছিল না। এত লোকের সামনে দিয়ে তারে কীভাবে জঙ্গলে আনল। কেউ কি দেখে নাই। তারে আনতে নিশ্চয় গাড়ি লাগছে।’
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যার এক মাস পূর্ণ হচ্ছে আজ বুধবার। তনুর বাবা ও মামলার বাদী ইয়ার হোসেন বলেন, ‘মামলার কোনো অগ্রগতি দেখছি না। কেবল আশ্বাস পাচ্ছি। আল্লাহ যদি আশা পূরণ করেন।’
এ মামলাটি শুরুতে তদন্ত করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ১৭ দিন আগে তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি। তদন্ত-তদারককারী কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মো. নাজমুল করিম খান। এই মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তদন্তের ক্ষেত্রে আমরা বেশ কিছু বিষয় চিহ্নিত করেছি। একটা ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছি যে এ ঘটনা সেনানিবাস এলাকার ভেতরে হয়েছে। এখানকার কোনো স্থানে তাঁকে হত্যা করে লাশ জঙ্গলে ফেলা হয়। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। ঘটনার সঙ্গে তিন থেকে চারজন জড়িত ছিল বলে মনে হচ্ছে।’
নাজমুল করিম খান বলেন, এ মামলার তদন্তের জন্য ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন জরুরি উপাদান। কিন্তু প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন থেকে কোনো ধরনের দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষায় আছেন। তিনি আশাবাদী, এ হত্যার জট খুলবে। সিআইডি এ পর্যন্ত ৫২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন কবে দেওয়া হবে—জানতে চাইলে তনুর লাশের দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কামদা প্রসাদ সাহা বলেন, ‘এ নিয়ে এখনো কিছু বলার সময় আসেনি।’
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার সকালে তদন্ত-সহায়ক দলের প্রধান ও সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহার আকন্দ, নাজমুল করিম খান ও তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম আবারও কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় যান। ওই সময়ে তাঁরা তনুর মা-বাবাসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেন।
পরে বিকেল পাঁচটায় সিআইডির কুমিল্লা কার্যালয়ে তনুর লাশের প্রথম ময়নাতদন্তকারী চিকিত্সক ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক শারমিন সুলতানাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
গণজাগরণ মঞ্চ কুমিল্লার মুখপাত্র খায়রুল আনাম রায়হান বলেন, এক মাসেও তনু হত্যার কোনো কিনারা না হওয়ায় তাঁরা হতাশ। অবিলম্বে খুনিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। তিনি বলেন, ‘এখন আন্দোলন কিছুটা মন্থরগতিতে চললেও সময়মতো আমরা জ্বলে উঠব।’
আজ নারী সমাবেশ: তনু হত্যার এক মাস উপলক্ষে আজ বুধবার বিকেল চারটায় কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরে নারী সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। কুমিল্লার সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে ওই সমাবেশ হবে। সূত্র: প্রথম আলো
সানবিডি/ঢাকা/পিএ/এসএস