স্বামীর হত্যাকারীকে বাঁচাতে মরিয়া স্ত্রী

আপডেট: ২০১৬-০৪-২১ ১২:১৭:১৪


Luchiপুলিশ হেফাজতে ঝুট ব্যবসায়ী সুজন হত্যা মামলার প্রধান আসামি তৎকালীন পল্লবী থানার এসআই জাহিদুর রহমান জাহিদকে কখনো দেখেননি এবং চিনেন না বলে আদালতে জানিয়েছেন নিহতের স্ত্রী ও মামলার বাদী মমতাজ সুলতানা লুসি। অথচ ঘটনার পর তিনি বলেছিলেন, এসআই জাহিদুর রহমানই তার স্বামীকে হত্যা করেছে।

বুধবার মামলার বাদী লুসি জেরার এক পর্যায়ে বলেন, ‘আমি জাহিদকে চিনি না, আমার স্বামীর মৃত্যুর আগে বা পরে কখনো আমি তাকে দেখিনি।’

শুধু তাই নয় এক প্রশ্নের জবাবে স্বামীর মৃত্যুর ব্যাপারে বাদী লুসি বলেন, ‘আমার স্বামী কীভাবে বা কি কারণে মারা গেছে তা আমি জানি না।’

লুসির বিপদের সময় যে মহিলা আইনজীবী সমিতি তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল, সেই সমিতির লোকজনের উপর আঙুল তুলে তিনি বলেন, ‘এই মহিলা আইনজীবী সমিতির লোকেরা আমাকে জোর করে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করেছে।’

এ দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. কামরুল হোসেন মোল্লা আগামী ৪ মে পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেছেন।

সাক্ষ্যগ্রহণকালে আদালতে উপস্থিত ছিলেন সুজনের মা, দুই ভাই ও তার মেয়ে। লুসির এ ধরনের সাক্ষ্য শুনে আদালতে ডুকরে কেঁদে উঠেন নিহত সুজনের মা। তিনি বলেন, ‘আমি আমার ছেলে হত্যা মামলার বিচার আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিয়েছি। আল্লাহ এর বিচার করবেন। সুজনের মেয়ে বলেন, আমি আমার বাবা হত্যার বিচার চাই।’

আদালতে উপস্থিত সুজনের ভাই সবুজ বলেন, ‘আমার ভাবি আমার ভাইয়ের লাশ বিক্রি করে দিয়েছে। এখন সে উল্টাপাল্টা সাক্ষী দিচ্ছে।’

এদিকে লুসি আদালতে আসেন আসামি জাহিদের মায়ের সঙ্গে এবং বেরও হন একসঙ্গে। তার সঙ্গে সাংবাদিকরা কথা বলতে গেলে তিনি কোনো কথা না বলে সাংবাদিকদের এড়িয়ে যান।

মামলাটিতে জাহিদ ছাড়াও আরো চারজন আসামি রয়েছেন। এরা হলেন- মিরপুর থানার এএসআই রাজ কুমার, কনস্টেবল আসাদ, কনস্টেবল রাশেদুল ও মিথুন।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ১৩ জুলাই রাতে মিরপুর থানা হেফাজতে ঝুট ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান সুজন নিহত হওয়ার ঘটনায় ২০ জুলাই আদালতে নিহতের স্ত্রী মমতাজ সুলতানা লুসি হত্যা মামলা দায়ের করেন। নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩ এর ১৫(১)(২)(৩)(৪) ধারায় মালাটি দায়ের করা হয়।

বিচার বিভাগীয় তদন্তের পর ২০১৪ সালের ৬ নভেম্বর মামলাটিতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

মামলার এজহারে লুসি উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন রাত সোয়া ১২টায় আমাদের ভাড়া বাসায় বাড়িওয়ালা দরজা খুলতে বলেন। আমি দরজা খুলতেই আসামি এসআই জাহিদুর রহমান জাহিদ, এএসআই রাজ কুমার, কনস্টেবল আসাদ, কনস্টেবল রাশেদুল, জনৈক মিথুন, নাসিম, ফয়সাল, খোকন ও ফয়সালকে দেখতে পাই। ওই সময় আমার স্বামী মাহবুবুর রহমান সুজন পুলিশ আসার খবরে রান্না ঘরের সানসেটে লুকিয়ে পড়ে। সেখান থেকে এএসআই রাজ কুমার তাকে নামিয়ে আনে।

এরপর এসআই জাহিদ ও এএসআই রাজ কুমার আমার স্বামীর গামছা দিয়ে মুখ ও চোখ বাঁধে এবং দুই হাত পিছনে দিয়ে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে টানতে টানতে বাথরুমে নিয়ে বালতি ভরা পানিতে মাথা চুবিয়ে লোহার রড দিয়ে বেদম প্রহার করে।

তখন এসআই জাহিদ আমাকে, আমার স্বামী ও শিশুপুত্র মোশারফকে নিয়ে রাত পৌনে ২টার দিকে মিরপুর থানায় আসে। ওই সময় এসআই জাহিদ ওয়্যারলেসে একজনকে ফোন করে বলেন, ‘স্যার হারামজাদাকে তো অর্ধেক মেরে থানায় নিয়ে এসেছি। এখন কি করব?’ অপর প্রান্ত থেকে উত্তর আসে, ‘ওকে হয় ক্লোজ করে দাও, না হয় ফাইনাল করে দাও।’

এরপর থানায় আমি আমার স্বামীর কান্নাকাটি ও চিৎকার শুনতে পাই। পরদিন সকালে ওসি সালাহ উদ্দিন আমাকে তার রুমে বসিয়ে ভেতর রুম থেকে এক গ্লাস পানি এনে খেতে দেন। যা খেয়ে আমার চরম অস্বস্তি বোধ হয়। শরীরে ঝিম ঝিম লাগে। তখন সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে বলে বলেন, ‘যদি স্বামীকে দেখতে চান তবে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করেন।’ এভাবেই তিনি আমাকে দিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করান।

সালাউদ্দিন বলেন, ‘আপনার স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’ পরবর্তীতে আমি জানতে পারি আমার স্বামীর লাশ ঢাকা মেডিকেলে আছে। লাশ ঢাকা মেডিকেল থেকে বাসায় আনার পর তার হাতের কব্জিতে কালো দাগ, পায়ের গোড়ালিতে কালদাগ, পিঠের ডানপাশে কাল দাগ ও মাথার পিছনে কালদাগ দেখতে পাই।

সানবিডি/ঢাকা/বিএম/ এসএস