ইবির অস্থিতিশীলতার নৈপথ্যে প্রো-ভিসি শাহিনুর রহমান
প্রকাশ: ২০১৬-০৪-২২ ১৭:২১:১০
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার পিছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি প্রফেসর ড: শাহিনুর রহমানের মুখ্য ভুমিকা রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় অস্থিতিশীল করা, যৌন নির্যাতনে ছাত্রী হত্যা,ছাত্রলীগের মধ্যে গ্রুপিং,টেন্ডার সহ বিভিন্ন আর্থিক দুর্নীতির সাথে জড়িত প্রো-ভিসি শাহিনুর রহমান। বিশ্ববিদ্যালয়টির আওয়ামীপন্থী শিক্ষক সংগঠন বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও প্রগতিশীল শিক্ষক সংগঠন শাপলা ফোরামের একাংশের নেতাদের অভিযোগের ভিত্তিতে এ তথ্য জানা যায়।
তারা নানা অপকর্মের হোতা ও কেলেঙ্কারির নায়ক প্রফেসর ড: শাহিনুর রহমানের চাকরিচ্যুতি চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বরাবর করা একটি আবেদনে এসব অভিযোগ উল্লেখ করেছেন। আবেদনের নিচে বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি প্রফেডর ড: জাকারিয়া রহমান, সাধারন সম্পাদক প্রফেসর ড: মিজানুর রহমান এবং শাপলা ফোরামের সভাপতি প্রফেসর ড: মাহবুবুল আরফিন ও সাধারন সম্পাদক প্রফেসর ড: আনোয়ার হোসেনের স্বাক্ষর রয়েছে।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, তিনি বর্তমানে ভিসির পদ বাগিয়ে নিতে তদবিরে ব্যস্ত রয়েছেন। কৌশলে ভিসি প্রফেসর ড: আব্দুল হাকিম সরকারকে সরিয়ে দিতে অপচেষ্টায় লিপ্ত তিনি।
শিক্ষক সংগঠনগুলোর বক্তব্য, নানা কেলেঙ্কারির নায়ক প্রফেসর ড: শাহিনুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকলে
শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট হবে।
আবেদনে তার বিরুদ্ধে জমায়াত কানেকশনসহ আর্থিক দুর্নীতি, পিএইচডি জালিয়াতি, যৌন নির্যাতনে ছাত্রী হত্যাসহ ১১ দফা অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। আবেদন পত্রে উল্লেখ করা হয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. মোঃ শাহিনুর রহমান ১৯৯১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক হিসাবে যোগদান করার পর থেকেই বিভিন্ন আর্থিক দুর্নীতি, একাডেমিক পিএইচ.ডি জালিয়াতি, যৌন নির্যাতনে ছাত্রী হত্যাসহ বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার অপতৎপরতা চালাচ্ছেন।
২০১৩ সালে উপ-উপাচার্য হিসেবে যোগদানের পর তার দুর্নীতির মাত্রা সীমাহীনভাবে বৃদ্ধি পায়। তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলো মধ্যে প্রো-ভিসি হিসেবে ভিসির তুলনায় গাড়ির তেল, বাসার বৈদ্যুতিক বিল, নিজস্ব বাসা সংস্কার, প্রভৃতি খাতে দ্বিগুন থেকে তিনগুণ অর্থ ব্যয় করেছেন। সুপারভাইজার হিসেবে পি.এইচ.ডি ফেলোর বহিরাগত এক্সপার্ট এর রিপোর্ট জালিয়াতি করার দায়ে ২৩ মার্চ ২০০৫ সালে অনুষ্ঠিত একাডেমিক কাউন্সিলের ৮০ তম সভায় তার বিরুদ্ধে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত
কমিটি গঠন করা হয় এবং পি-এইচ.ডি সংক্রান্ত সকল গবেষণা তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব থেকে তাকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়। ১৮২ তম সিন্ডিকেট সভায় ২১ নম্বর প্রস্তাব অনুযায়ী তাকে পিএইচ.ডি সংক্রান্ত জালিয়াতির অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।
ইংরেজি বিভাগের ২০০২-০৩ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) ৪র্থ বর্ষের ছাত্রী লিপি তার যৌন হয়রানির শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এ ব্যাপারে তৎকালীন বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়।
চারদলীয় জোট সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত ভিসি প্রফেসর ড. মুস্তাফিজুর রহমানের মাধ্যমে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের পি.এইচ.ডি ডিগ্রীর রেজিস্ট্রেশনের ভূয়া কাগজ দাখিল করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত বিধি লঙ্ঘন করে কোন সুপারভাইজার ছাড়াই নিজের পিএইচ.ডি ডিগ্রী হাতিয়ে নেন এবং সেই উপাচার্যের অবৈধ আনুকূল্যে প্রফেসর পদে পদোন্নতি পান।
সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের জন্য শিক্ষামন্ত্রণালয় কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনকে তদন্ত করার নির্দেশ প্রদানের পর আত্মরক্ষার্থে তিনি ১০ জানুয়ারী ২০১৬ তারিখে পদত্যাগের নাটক সাজিয়ে পরে তা ৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৬ তারিখে প্রত্যাহার করে নেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সজ্ঞানে পদত্যাগের এবং পরে আবার তা প্রত্যাহার করে
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনরূপ নির্দেশনা ছাড়াই রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে স্বপদে ফিরে যাওয়ার ঘটনা বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে তুলনাবিহীন। একজন ব্যক্তিত্ত্বসম্পন্ন, দায়িত্বশীল কর্মকর্তার জন্য বেমানানও বটে। পদত্যাগের পর পূনরায় যোগদান করায় অনুপস্থিত ২৫ দিনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তিনি তা প্রভাব খাটিয়ে অর্জিত ছুটি হিসেবে অনুমোদন করিয়ে নেন, যা সম্পূর্ণ বেআইনি।
২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৪ টি গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় তার প্রত্যক্ষ ইন্ধন ছিল বলে গোয়েন্দা সত্র নিশ্চিত করেছে। তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃত্রিম সংকট ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির মাধ্যমে প্রগতিশীল শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের মধ্যে বিভাজন এবং ছাত্রলীগের মধ্যে গ্রুপিং তৈরির অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু পরিষদের নির্বাচিত কমিটিকে পাশ কাটিয়ে তার আজ্ঞাবহ একটি পকেট কমিটি গঠন করেন এবং প্রগতিশীল শিক্ষক কর্মকর্তাদের মধ্যে আত্মঘাতী
সংঘাতের সম্ভবনা সৃষ্টি করেন বলে আবদেন পত্রে উল্লেখ রয়েছে।
এছাড়াও তারা প্রত্যেকটি অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিতের সুবিধার্থে প্রামান্য দলিল সংযৃক্ত করেছেন বলেও আবেদনে উল্লেখ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও শাপলা ফোরামের নেতাদের অভিযোগ, প্রো-ভিসি প্রফেসর ড: শাহিনুর রহমান মাঝে মধ্যেই ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করে তুলছেন স্থানীয় এলাকাবাসীদের মদদ দিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ এমন পদে নানা কেলেঙ্কারির হোতা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে পারেনা। শিগগিরই তারা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ করবেন বলেও
তারা জানান।
সানবিডি/ঢাকা/তারিকুল/আহো