তামাকজনিত রোগে দেশে বছরে ১ লাখ ৬১ হাজার মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২৩-০২-১৯ ১৭:৩২:২৬


হোটেল, রেস্টুরেন্ট এবং ট্রেনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকার বিধান অকার্যকর। এসব জায়গায় ব্যাপকভাবে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন অধূমপায়ীরা।

জনস্ হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথ এবং প্রগতির জন্য জ্ঞানের (প্রজ্ঞা) করা ‘প্রিভেলেন্স অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স অব ডেজিগনেটেড স্মোকিং এরিয়াজ (ডিএসএ) ইন হসপিটালিটি ভেন্যুজ অ্যান্ড ট্রান্সপোর্টেশন ইন ঢাকা, বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক গবেষণায় উঠে আসে এই চিত্র।

ঢাকা শহরের ১১৮টি আবাসিক হোটেল ও ৩৫৫টি রেস্টুরেন্ট এবং ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ৫৩টি ট্রেনের ওপর পরিচালিত গবেষণায় দেখা যায়, মোট ৫২৬টি স্থানের মধ্যে মাত্র ৪১টিতে (৮ শতাংশ) ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকা (ডিএসএ) পাওয়া গেছে। সেগুলোর একটিও পরিপূর্ণভাবে আইন মেনে ডিএসএ রাখেনি।

রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে), প্রজ্ঞা এবং ভয়েস আয়োজিত ‘বিল্ডিং এ টোব্যাকো ফ্রি বাংলাদেশ- লোকাল অ্যান্ড গ্লোবাল এভিডেন্স শেয়ারিং’ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিশ্বে বছরে ১২ লাখ মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের কারণে অকালে মৃত্যুবরণ করেন। গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস) ২০১৭ অনুযায়ী, বাংলাদেশে আচ্ছাদিত কর্মস্থলে কাজ করেন এমন প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর ৪২.৭ শতাংশ (৮১ লাখ) এবং প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ (২৪ শতাংশ) গণপরিবহনে যাতায়াতের সময় পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। প্রায় ৬১ হাজার শিশু পরোক্ষ ধূমপানজনিত বিভিন্ন অসুখে ভোগে। তামাক ব্যবহারজনিত রোগে দেশে বছরে ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেন।

গবেষণার উপসংহারে বলা হয়, ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকা (ডিএসএ) অধূমপায়ীদের পরোক্ষ ধূমপানের ছোবল থেকে সুরক্ষা প্রদান করতে পারে না এবং এই বিধান চালু রেখে ধূমপানমুক্ত আইন বা নীতির সুফল পাওয়া সম্ভব নয়। সুতরাং শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে ডিএসএ বাতিল করা প্রয়োজন।

ভয়েস এর উপস্থাপনায় জানানো হয়, তামাক কোম্পানিগুলো নগদ টাকা ও সরঞ্জামাদি প্রদানের মাধ্যমে রেস্টুরেন্টগুলোতে ডিএসএ স্থাপনে উৎসাহিত করে থাকে। বিদ্যমান আইনের দুর্বলতার কারণেই কোম্পানিগুলো এই কূটকৌশল অবলম্বনের সুযোগ পাচ্ছে।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্বস্বাস্থ্য অনুবিভাগ) কাজী জেবুন্নেছা বেগম বলেন, আশা করি ডিএসএ বাতিলসহ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাস হবে। সেটি হলে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনের পথ সুগম হবে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে চাইলে ডিএসএ বিধান অবশ্যই বাতিল করতে হবে। এটি তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনের অন্তরায়।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল-এর সমন্বয়কারী (অতিরিক্ত সচিব) হোসেন আলী খোন্দকার, সিটিএফকে বাংলদেশ লিড পলিসি অ্যাডভাইজার মো. মোস্তাফিজুর রহমান এবং তামাকবিরোধী সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা।

এএ