শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছে জাতি
নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২৩-০২-২১ ১০:০৩:০৬
রক্তঝরা অমর একুশে আজ। আজ জাতীয় শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায় করতে গিয়ে আত্মদানের গৌরবময় দিন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে এ দেশের রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে এক কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে প্রাণ দেন সালাম, জব্বার, রফিক, বরকত, শফিক। তাঁদের রক্তের পথ বেয়ে বাংলা এ দেশের রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি পায়।
আজ ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি’ এই গান কণ্ঠে ধারণ করে, গর্ব ও আত্মত্যাগের প্রতীক শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে, শ্রদ্ধাবনত চিত্তে ভাষাশহীদদের স্মরণ করা হচ্ছে। মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৬টা থেকে প্রভাত ফেরির কার্যক্রম শুরু হয়। পলাশী হয়ে জগন্নাথ হলের সামনে সারিবদ্ধভাবে আসছে নানা বয়সী মানুষ। যেখানে অভিভাকদের সঙ্গে রয়েছে ছোট্ট সোনামনিরাও।
আজ একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রথম শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি। এরপরই প্রধানমন্ত্রী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় অমর একুশের কালজয়ী গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ বাজানো হয়। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
এরপর রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও সংস্থার শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রাত সাড়ে ১২টার দিকে জনসাধারণের জন্য শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। পরে একে একে শ্রদ্ধা জানাতে শুরু করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের মানুষ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে প্রভাত ফেরির র্যালি শুরু হয়। যেখানে নেতৃত্ব দেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এতে অংশ নেন।
রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের দীর্ঘ লাইন ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হয়ে পলাশী মোড় ও নীলক্ষেতের দিকে চলে যায় লাইন। সকালে অসংখ্য মানুষকে ফুল হাতে শহীদ মিনারের দিকে যেতে দেখা যায়। লাইনে দাঁড়িয়ে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন তারা।
২১ ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটির দিন। অর্ধনমিত রাখা হয়েছৈ জাতীয় পতাকা। একই সঙ্গে সর্বত্র ওড়ানো হচ্ছে শোকের কালো পতাকা। সংবাদপত্র, টেলিভিশন ও বেতারে ভাষা দিবসের বিশেষ ক্রোড়পত্র ও অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা হচ্ছে।
পাকিস্তানি সরকার মায়ের ভাষা বাংলাকে কেড়ে নিয়ে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল উর্দু। কিন্তু তা মানতে পারেনি বাঙালি। ১৯৫২ সালের সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাঙালি দেখিয়েছে প্রতিবাদের স্পর্ধা। ১৪৪ ধারা ভেঙে মায়ের ভাষা বাংলাকে রক্ষায় সেদিন রাজপথে নেমেছিলেন ছাত্রছাত্রী ও অজস্র তরুণ। তাদের শাণিত মিছিল ঠেকাতে অকাতরে গুলি চালায় পাকিস্তানিরা। পলাশ ফোটার দিনে বুকের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ঢাকার রাজপথ।
প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয় মায়ের ভাষা বাংলা। তাই দিনটি যেমন গৌরবের ও অহংকারের, তেমনি শোকেরও। বাঙালি ছাড়া, পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোনো জাতিকে ভাষা রক্ষায় প্রাণ দিতে হয়নি। তারই স্বীকৃতি হিসেবে ২১ ফেব্রুয়ারি পেয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি।
বাংলাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিতে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। এতে ১৮৮টি দেশ সমর্থন জানায়। আর এর মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পায় অমর একুশে। ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোতে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে।
এএ