থেমে যাওয়ার শঙ্কায় লবণ উৎপাদন

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২৩-০২-২৫ ১১:১৫:৪৯


উপকূলে উৎপাদিত লবণের দাম হঠাৎ পড়ে গেছে। ভরা মৌসুমে লবণ মিলমালিকরা সিন্ডিকেট করে প্রতি মণ লবণের দাম ৫০০ থেকে কমিয়ে অর্ধেকে অর্থাৎ ২৫০ টাকায় নামিয়েছেন বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। এতে লাভের আশায় লবণ চাষ করা চাষিরা লোকসানের আশঙ্কা করছেন।

কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী মিলিয়ে প্রায় ৩৮ হাজার প্রান্তিক চাষি লবণ উৎপাদনে যুক্ত। আর বিকিকিনি, প্রক্রিয়াজাতকরণ, পরিবহনসহ নানাভাবে লবণশিল্পে জড়িত আরও প্রায় এক লাখ মানুষ।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক), কক্সবাজারের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে (১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত পাঁচ মাস) কক্সবাজার সদর, ঈদগাঁও, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া, টেকনাফ ও বাঁশখালী উপজেলায় ৬৬ হাজার ২৯১ একর জমিতে লবণ উৎপাদন চলছে। এবারের লবণ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৩ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন। চলতি মাসের ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গত ৩ মাসে উৎপাদন হয়েছে প্রায় ছয় লাখ সাড়ে ৭৪ হাজার মেট্রিক টন লবণ। যা গত মৌসুমে এ সময়ের তুলনায় সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন বেশি। গত বছর এ সময় উৎপাদন হয়েছিল দুই লাখ ৯১ হাজার ৫৮ টন। তখন প্রতি মণ লবণ বিক্রি হয়েছিল ৩৫০ টাকায়।

এ বিষয়ে বিসিক সূত্র আরও জানায়, এখন কক্সবাজার উপকূলে দৈনিক ১৭ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হচ্ছে। সপ্তাহখানেক আগেও মণ প্রতি লবণ বিক্রি হয়েছিল ৪৮০-৫০০ টাকায়। কিন্তু কয়েক দিন ধরে লবণের দাম অর্ধেকে নেমেছে। এতে চাষিরা হতাশ হচ্ছেন। লোকসানের আশঙ্কায় উৎপাদন বন্ধ রাখা হলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ কঠিন হয়ে পড়বে।

কক্সবাজারের ঈদগাঁও, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় প্রতি মণ লবণ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়। কক্সবাজার সদরের কিছু এলাকায় বিক্রি করে মিলছে ২৫০-২৮০ টাকা। এতে লবণ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত প্রায় ৩৮ হাজার প্রান্তিক চাষিসহ প্রায় এক লাখ শ্রমজীবী মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

তবে লবণ মিলমালিকরা বলছেন, মাঠপর্যায়ে প্রতি মণ লবণের দাম ২৫০ টাকা হলেও তারা (মিলমালিক) কিনছেন ৩৫০-৩৬০ টাকায়। মাঝখানে শতাধিক টাকার মুনাফা চলে যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগী ও দাদন ব্যবসায়ীদের পকেটে।

কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামপুরে লবণ প্রক্রিয়াজাতকরণের কারখানা (মিল) আছে ৬৯টি। উপকূলে উৎপাদিত অধিকাংশ লবণ এখানেই বেচাবিক্রি হয়। চলতি মৌসুমে এখানকার ৩৫টি কারখানায় লবণ উঠছে।

কক্সবাজার লবণচাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি মকছুদ আহমদ কোম্পানি বলেন, অসাধু মিলমালিক সিন্ডিকেটের ষড়যন্ত্র বন্ধ ও দেশীয় লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা জরুরি। সপ্তাহ আগেও মাঠে মণপ্রতি ৫০০ আর মিল পর্যায়ে ৫৭০ টাকা পাওয়া গেছে। বর্তমানে মাঠে ২৬০ টাকা আর মিলে ৩৪০ টাকা। হঠাৎ এমন দরপতন মেনে নেওয়া যায় না। ন্যায্যমূল্য না পেলে লবণ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হবে। দেশীয় স্বয়ংসম্পূর্ণ লবণ শিল্পের বাজার ধ্বংস করতে যারা ষড়যন্ত্র করছে তাদের কঠোর শাস্তির দাবি সর্বস্তরের লবণচাষিদের।

বিসিক সূত্র মতে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে চলা জরিপ অনুযায়ী জেলায় প্রান্তিক লবণচাষির সংখ্যা ৩৭ হাজার ২৩১। চাষিদের সহযোগী হিসেবে (লবণশ্রমিক) মাঠে কাজ করেন আরও ৮৭ হাজার মানুষ। গত মৌসুমে ৫৭ হাজার একর জমিতে লবণচাষ হয়েছিল। লবণ উৎপাদন হয় ১৮ লাখ ৩২ হাজার ৩৬ মেট্রিক টন। এ বছর চাষ হচ্ছে ৬৬ হাজার ৩০০ একর জমিতে।

এনজে