বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করলেন জাতিসংঘ মহাসচিব

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২৩-০২-২৬ ১৩:১০:৫০


জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস চলমান বৈশ্বিক সংঘাত, আর্থিক, জ্বালানি ও খাদ্য সংকট এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের কারণে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রতি জাতিসংঘের অব্যাহত সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) নিউইয়র্কের জাতিসংঘের স্থায়ী মিশন এ তথ্য জানায়।

বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্ল্যাক সি গ্রেইন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে সার ও শস্য আমদানির মাধ্যমে তাদের খাদ্য সংকট মোকাবিলায় সহায়তা করে।

আন্তোনিও গুতেরেস জানান, লাটভিয়া, এস্তোনিয়া, বেলজিয়াম এবং নেদারল্যান্ডসে সারের কাঁচামালের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে যা বাংলাদেশ সাশ্রয়ী মূল্যে আমদানির কথা বিবেচনা করতে পারে। মহাসচিবকে ধন্যবাদ জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বস্ত করেন যে, বাংলাদেশ এ সুযোগ কাজে লাগানোর কথা বিবেচনা করবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের অসাধারণ উন্নয়নের গতিধারার প্রশংসা করে মহাসচিব আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশ আগামী বছরগুলোতে বিশেষ করে এসডিজি অর্জনে আরও সাফল্য অর্জন করবে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে শীর্ষ সেনা ও পুলিশ সদস্য প্রেরণকারী দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় বাংলাদেশের ধারাবাহিক নেতৃত্বেরও প্রশংসা করেন তিনি।

সম্প্রতি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমারের ওপর গৃহীত রেজুল্যুশনের পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গা সংকট এবং এর সম্ভাব্য উত্তরণের উপায় নিয়েও আলোচনা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও মহাসচিব। তারা এ সংকট সমাধানে আসিয়ানের কার্যকর নেতৃত্বের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে মহাসচিব ১.২ মিলিয়ন রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের উদারতার ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং মিয়ানমারে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফেরাতে জাতিসংঘের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।

মহাসচিবের সঙ্গে সাক্ষাতের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাধারণ পরিষদের সভাপতি সাবা কোরেসি, ডিপার্টমেন্ট অব পিসবিল্ডিং অ্যান্ড পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স (ডিপিপিএ)- এর আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল রোজমেরি ডিকার্লো এবং পিস অপারেশন বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁপিয়েরে ল্যাকরুয়ার সঙ্গেও বৈঠক করেন।

সাধারণ পরিষদের সভাপতির সঙ্গে বৈঠকের সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। বিশেষভাবে তিনি সভাপতির সঙ্গে সাউথ-সাউথ কোঅপারেশন বিষয়ে বাংলাদেশ কর্তৃক একটি মন্ত্রী পর্যায়ের নতুন ফোরাম প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেন। উপরোক্ত উদ্যোগের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভাপতি সাম্প্রতিক সময়ে জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের অসাধারণ নেতৃত্ব, কার্যকর সম্পৃক্ততা এবং উল্লেখযোগ্য অবদানের প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

ডিপার্টমেন্ট অব পিসবিল্ডিং অ্যান্ড পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স (ডিপিপিএ)-এর আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ জাতিসংঘের শান্তি বিনির্মাণ কমিশনে (পিবিসি) চেয়ারম্যান থাকাকালীন ২০২২ সালের বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রশংসা করেন আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল। পিস অপারেশন বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ভবিষ্যতে জাতিসংঘের পিসকিপিং মিশনগুলোতে যৌথ উদ্যোগে শান্তিরক্ষী মোতায়েনের জন্য সম্প্রতি বাংলাদেশ ও গাম্বিয়ার মধ্যে সমাপ্ত দ্বিপাক্ষিক চুক্তিকে স্বাগত জানান।

তিনি আশ্বস্ত করেন যে, তার বিভাগ এমন উদ্যোগকে উৎসাহিত করবে যাতে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে অন্যান্য দেশ উপকৃত হতে পারে। এ প্রেক্ষাপটে, ড. মোমেন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা অপারেশনে বাংলাদেশের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি এবং প্রয়োজনে আরও শান্তিরক্ষী ও সরঞ্জাম সরবরাহের জন্য তার প্রস্তুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

বৈঠকগুলোতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত উপস্থিত ছিলেন।

আই এইচ