ঢাবির লোগো থাকলে লাইসেন্স লাগে না!
প্রকাশ: ২০১৬-০৫-০৯ ১৮:০৫:২৩
ব্যক্তিগত যানবাহনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো ব্যবহারে চলছে যথেচ্ছাচার। লোগো ব্যবহারে প্রতিষ্ঠানের সুনির্দিষ্ট নিয়ম-নীতি থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। নিয়ম লঙ্ঘনের এ তালিকায় আছেন শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারিদের অনেকে। ক্যাম্পাসসহ রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে দিনে ও রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো সম্বলিত মাইক্রোবাস এবং মোটরবাইক হরহামেশাই দেখা যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কপিরাইট এবং ট্রেডমার্ক আইন অনুযায়ী, অনুমোদন না নিয়ে প্রতিষ্ঠানের লোগো ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
প্রশাসন বলছে, কেবল কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষর সম্বলিত সাদা স্টিকারযুক্ত লোগোই শুধু গাড়িতে ব্যবহার করতে পারেন অনুমোদনপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মকর্তারা। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বিভিন্ন রুটে চলা বাস, মিনিবাস ও মাইক্রোবাসে লোগো ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়।
কিন্তু ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, ছাত্রনেতা এবং কর্মকর্তাদের অনেকেই অনুমোদন ছাড়াই নির্বিঘ্নে ব্যক্তিগত বাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো ব্যবহার করছেন। তাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কখনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, অনুমোদনহীন লোগো সম্বলিত বাইকের সংখ্যা শতাধিক। লোগো সাঁটিয়ে চলা অধিকাংশ বাইকের বিআরটিএ লাইসেন্স কিংবা নিবন্ধন নেই। এসব বাইকের নম্বর প্লেটের স্থানে বড় করে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ লোগো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও সিনেট ভবনের সামনে পার্কিং করে রাখা হয় কর্মকর্তাদের বাইক। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পার্কিং করা বাইকের মধ্যে দুটি পালসার (ঢাকা মেট্রো-ল ২৭-৫২১৭), ঢাকা মেট্রো-ল ২১-৮৩৫৭), ওয়ালটন এর ঢাকা মেট্রো-হ ১৬-১৪৩৫), আলী বাবা ঢাকা মেট্রো-হ ৩৭-২১৭৭, ঢাকা মেট্রো এ ১১-৪১৮৬ – এ সাঁটানো লোগো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনুমোদিত নয়।
এদিকে বিভিন্ন আবাসিক হলগুলোতে ঘুরে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ লোগা সাঁটানো অসংখ্য বাইক চলতে কিংবা পার্ক করা অবস্থায় দেখা গেছে। এছাড়া টিএসসি, গ্রন্থাগার ফটক, হাকিম চত্বর, ডাচ, ক্যাম্পাস শ্যাডো, মল চত্বর, কার্জন হল ও কলাভবনসহ বিভিন্ন অ্যাকাডেমিক ভবনগুলোতে এ ধরনের অসংখ্য বাইক চলতে দেখা যায়।
নম্বর প্লেটের মধ্যে সরাসরি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লিখিত ছাত্র নেতাদের বাইক হচ্ছে বিজয় একাত্তর হলের ঢাকা মেট্রো-ল ১৭-০২৮৩, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ঢাকা মেট্রো ল-২৪৬৬৩৮। এছাড়া ক্যাম্পাসের শ্যাডো এলাকায় টিভিএস মডেলের একটি বাইক থাকে যার কোন নিবন্ধন নেই, পেছনে শুধু বড় করে সাঁটানো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ঢাবির লোগো সম্বলিত এসব বাইক চালকদের বিরুদ্ধে সড়কে ট্রাফিক আইন অমান্য করে বেপরোয়াভাবে চলাচলের অভিযোগ রয়েছে। ট্রাফিক পুলিশের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোর থাকায় মহাসড়কে উল্টো পথে বাইক নিয়ে গেলেও পুলিশ কিছুই করতে পারে না। উল্টো তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয় দিয়ে হুমকি-ধমকি দেয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো সম্বলিত বাইকের অধিকাংশই ছাত্রনেতাদের। বাইকে ‘লোগো’ ব্যবহার করেন এমন একজন হল ছাত্রলীগ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে লোগো ব্যবহারে যে নিষেধাজ্ঞা দেয়া আছে তা আমার জানা নেই। সবাই ব্যবহার করছে এজন্য আমিও ব্যবহার করছি। আমার বাইকের কোন লাইসেন্স নেই। এই লোগো থাকলে পুলিশ গাড়ি আটকায় না। পুলিশ বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এদের সঙ্গে ঝামেলা করে লাভ নাই!
বাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘লোগো’ ব্যবহার বিষয়ে জানতে চাইলে এক কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন রয়েছে। তবে পরে কপিরাইট আইনের কথা বললে তিনি সুর পাল্টে বলেন, এটি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আছে। তবে এটা থাকলে সুবিধা হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেখলে পুলিশ বাইক আটকায় না।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক এ এম আমজাদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো বাইকে ব্যবহার করা সম্পূর্ণ অবৈধ। অনুমতি না নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো ব্যক্তিগত গাড়িতে বা মোটর সাইকেলে ব্যবহার করবে, এটা তো হয় না। এটা কপিরাইট আইনে নিষিদ্ধ।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো বা নামে কেউ কোন কিছু করলে এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই অপরাধে আমরা কয়েকটা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছি যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যবসা পরিচালনা করত। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কিছু মোটর সাইকেলে ‘লোগো’ আছে সেটা খেয়াল করেছি। সম্প্রতি আমি ভিসি স্যারের কার্যালয়ের সামনে এই রকম লোগো দেখার পর তা ছিড়ে ফেলে দিই। এ ধরণের বাইক পাওয়া গেলে সেখান থেকে লোগো ছিঁড়ে ফেলা হবে। এছাড়া এ বিষয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস