প্রায় ৫৮ লাখ টাকার চেক ফিরিয়ে দিল এক পুলিশ

প্রকাশ: ২০১৬-০৫-১০ ১১:০০:৪৫


bnp-44বাংলাদেশ ব্যাংকের জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা গোলাম রাব্বিকে ধরে নিয়ে পাঁচ লাখ টাকার জন্য ব্যাপক নির্যাতন চালায় মোহাম্মদপুর থানার এসআই মাসুদ সিকদার। এই ঘৃন্য কাজের তিরস্কার স্বরুপ তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে কুড়িয়ে পাওয়া ৫৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যমানের দুটি চেক রাস্তায় পেয়ে মালিককে ফিরিয়ে দিয়ে সততার দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কনস্টেবল লিটন সুতার। তাকে পুরস্কৃত করা হবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কর্মকর্তা। তবে তার আগেই সততার স্বাক্ষর রাখায় ওই কনস্টেবলের ভূয়সী প্রশংসা করলেন চেক আর মূল্যবান কাগজপত্র হারানো সামিট গ্রুপের কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ রাসেল। সেই সঙ্গে পুলিশ সম্পর্কে পাল্টে গেল তার নেতিবাচক ধারনা।

সামিট কমিউনিকেশনস এন্ড লিঃ এর এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার (ফিন্যান্স) সাইফুল্লাহ রাসেল বলেন, এতদিন শুনে এসেছি পুলিশ জনগণের বন্ধু। কিন্তু বাস্তবে সত্যিই তার প্রমাণ পেলাম। তিনি এ বিষয়ে যোগ করেন, পুলিশের মধ্যেও ভাল-মন্দ আছে। একজন পুলিশ কর্মকর্তা যেটা পারেনি, একজন কনস্টেবল সেটা করে তার সততার প্রমাণ রেখেছেন। বিষয়টি সত্যিই সকল পুলিশেল জন্য অনুকরনীয়।

আজ মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে রাজধানীর শাহবাগ থানাধীন শেরাটন মোড় দিয়ে মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন সামিট গ্রুপের কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ রাসেল। সে সময় তার কাছে থাকা একটি ল্যাপটপের ব্যাগ রাস্তায় পড়ে গেলেও তিনি কিছু বুঝতে পারেননি। মোটরসাইকেল নিয়ে ছুটে চলেন গন্তব্যে। ডিএমপি মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগে কমরত কনস্টেবল লিটন সুতার ওই সময় মোটরসাইকেলে ডিউটিতে যাওয়ার পথে ঘটনাটি কাছ থেকে দেখেন।

তিনি শেরাটন মোড়ে রাস্তার পাশে পড়ে থাকা ব্যাগটি তুলে নিয়ে ওই মোটরসাইকেলের পেছনে ছুটতে ছুটতে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত যান। পেছন থেকে অনেক ডাকাডাকি করেও ব্যাগটির মালিক মোটরসাইকেলটির মালিকের কোন সাড়া মেলেনি। এক পর্যায়ে ওই ব্যক্তিকে হারিয়ে ফেলেন তিনি। অবশেষে ব্যাগনি নিয়ে সেখান থেকে মিন্টু রোডে ডিএপির জনসংযোগ দপ্তরে চলে যান। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর ব্যাগটি খোলা হয়। তাতে ৫৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার মূল্যমানের ২টি  পে-অর্ডার ও সামিট কমিউনিকেশনস এন্ড লিঃ এর জরুরী কাগজপত্র দেখা যায়।

ডিএমপির জনসংযোগ দপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার অবগত হয়ে তত্ক্ষনাৎ ওই পে-অর্ডার ও কাগজপত্রের মালিক সাইফুল্লাহর মোবাইল ফোনের  মাধ্যমে যোগাযোগ করেন। কিছুক্ষণের মধ্যে সাইফুল্লাহ ছুটে আসেন ডিএমপি কার্যালয়ে। বেলা ২টার দিকে উপযুক্ত প্রমাণ সাপেক্ষে এডিসি জাহাঙ্গীর আলম সাইফুল্লাহর কাছে তুলে দেন তার হারিয়ে যাওয়া ৫৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার মূল্যমানের পে-অডার ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রসহ ব্যাগটি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডিএমপি মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ এর সহকারী পুলিশ কমিশনার খন্দকার রবিউল আরাফাতসহ জনসংযোগ দপ্তরের অন্যান্যরা।

ডিএমপির এডিসি এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার বলেন, পুলিশি সেবা জনগণের দ্বারে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে আমরা নিরলসভাবে ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা এই  ক্ষেত্রে জনগণের আরও কার্যকর সহযোগিতা চাই।

সহকারী পুলিশ কমিশনার খন্দকার রবিউল আরাফাত বলেন, এটি পুলিশের দৈনন্দিন কার্যক্রমের একটি খন্ডচিত্র মাত্র। আমরা এই আঙ্গিকে স্বীয় কর্তব্য পালন করি।

২০০২ সালে ডিএমপিতে কনস্টেবল হিসেবে যোগ দেন লিটন সুতার। তার গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরে। লিটন সুতার বলেন, নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করার যে ব্রত পুলিশ বিভাগ শিখিয়েছে আমি সেটা পালন করার চেষ্টা করেছি।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি অতি সম্প্রতি রাজধানীতে পুলিশের হাতে নানা হয়রানি অর্থাৎ হেনস্তার শিকার হন বাংলাদেশ ব্যাংকের জনসংযোগ দপ্তরের কর্মকর্তা  গোলাম রাব্বি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন পরিদর্শক বিকাশ চন্দ্র। এসব ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হলে অভিযুক্ত পুলিশের দুই সদস্যের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এরই মধ্যে সততার প্রমাণ দিলেন ডিএমপির আরেক সদস্য লিটন সুতার।

সানবিডি/ঢাকা/এসএস