বজ্রপাতে ২৪ জনের মৃত্যু
আপডেট: ২০১৬-০৫-১৩ ১৩:১৬:৪৬
বজ্রপাতে প্রাণহানির ঘটনা বেড়েই চলেছে। বৃহস্পতিবার সারা দেশে বজ্রপাতে মারা গেছে ২৪ জন। এর মধ্যে কেবল সিরাজগঞ্জে ৫ জন, রাজধানী ঢাকায় ২ জন, রাজশাহীর মোহনপুরে ৩ জন, নরসিংদীতে ৩ জন, কাপাসিয়ায় ২ জন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
রাজশাহী প্রতিনিধি জানান, মোহনপুরে বজ্রপাতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে উপজেলার ঘাষিগ্রাম ইউনিয়নে এ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়াও আহত হয়েছে আরো চারজন। নিহতরা হলেন- ঘাষিগ্রাম ইউনিয়নের আতানারায়ণপুর গ্রামের শামসুদ্দিনের ছেলে আবদুর রাজ্জাক (২৮), হাতৈড় গ্রামের আবদুর রহমানের ছেলে আবদুল আজিজ (৫০) ও ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের শ্রী সৈত্য চন্দ্র (৩০)। এ ছাড়া আহতরা হলেন- উপজেলার পুল্লাকুড়ি গ্রামের জালাল উদ্দিন (৪০), বারইপাড়া গ্রামের আবদুর রহিমের স্ত্রী আলিমন বেগম (৭০) ও মোল্লা ডায়িং গ্রামের ছমির উদ্দিনের স্ত্রী জাহানারা বেগম (২৮) আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তবে গুরুতর আহত থাকায় জালাল উদ্দিনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। অন্যদিকে বাগমারার ধামিনপুর গ্রামের রহিমা বেগম নামের আরো এক নারী বজ্রপাতে আহত হয়েছেন। তাকেও উদ্ধার করে মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। মোহনপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। নিহতদের পরিবারের খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে।
কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) প্রতিনিধি জানান, নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুড়া ইউনিয়নে ফুলের ঘাট গ্রামে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে বজ্রপাতে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, মাগুড়া ইউনিয়নের ফুলেরঘাট গ্রামের আলম হোসেনের স্ত্রী লালবী বেগম (৩৫) রান্না ঘরে রান্নার কাজ করছিলেন। এ সময় রান্নাঘরের উপর বজ্রপাত পতিত হলে তিনি ঘটনাস্থলে মারা যান। মাগুড়া ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. মাহমুদুল হাসান ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে বজ্রপাতে শরীফুল ইসলাম শুভ (১৮) নামে এক কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। শুভ আড়াইবাড়িয়া গ্রামের কৃষক রহমত আলীর ছেলে এবং হোসেনপুর ডিগ্রি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টার দিকে বাড়ি থেকে পার্শ্ববর্তী চর বিশ্বনাথপুর এলাকায় নিজেদের ধানের জমিতে ধান কাটা শ্রমিকদের খাবার স্যালাইন খাওয়াতে যায় শুভ। এ সময় বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাতে গুরুতর আহত হয়। তাকে হোসেনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বাজিতপুর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, বাজিতপুরে গত ৫ দিনে বজ্রপাতে ৩ দিনমজুর মারা গেছেন। জানা যায়, বৃহস্পতিবার উপজেলার দিলালপুর ইউনিয়নের বাহেরনগর গ্রামের মঞ্জু মিয়ার ছেলে স্বপন মিয়া (২০) মাঠে ধান কাটতে গেলে বিকাল ২টায় আকস্মিক বজ্রপাত হলে তিনি ঘটনাস্থলে মারা যান। তার মা জানু বেগম ও উক্ত ইউপির নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া নভেল জানান- উক্ত পরিবারটির ভিটে মাটি পর্যন্ত নেই। একমাত্র কর্মক্ষম ছেলে স্বপন মিয়া মারা যাওয়ায় তার অসুস্থ বাবা ও তার মায়ের আয়-রোজগারের কোনো অবলম্বন রইলো না। উল্লেখ্য, এর পূর্বে গত ৫ দিন আগে উপজেলার মাইজচর ইউপির পুরাকান্দা গ্রামের মাঠে কাজ করতে গিয়ে আবুল বাশার (২৬) ও রতন মিয়া (২৮) বজ্রপাতে মারা যায়।
নীলফামারী প্রতিনিধি জানান, নদীতে গোসল করতে নেমে সলিল সমাধী হয়েছে খুশি আক্তার (৭) নামের এক শিশুর। নীলফামারী সদর উপজেলার চাপড়া সরমজানী ইউনিয়নের পশ্চিম চাপড়া জুম্মাপাড়া গ্রামের এ ঘটনায় গোটা গ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে। জানা গেছে, ওই গ্রামের আবদুর রশিদের কন্যা চাপড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণির ছাত্রী খুশি আক্তার বৃহস্পতিবার দুপুরে সকলের অজান্তে বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বুড়িখোড়া নদীতে গোসল করতে নেমে ডুবে যায়। পরে অনেক খোঁজাখুঁজির পর নদী থেকে তার নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়। অপরদিকে বজ্রাঘাতে লাল বিবি (৪০) নামের দুই সন্তানের এক জননীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি কিশোরীগঞ্জ উপজেলার মাগুড়া ফুলেরঘাট গ্রামের আলম হোসেনের স্ত্রী। বৃহস্পতিবার দুপুরে বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সময় লাল বিবির কুড়ে ঘরে বজ্রপাতের ঘটনায় ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান বলে জানান, মাগুড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহামুদুল হোসেন।
নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, নরসিংদী ও রায়পুরা উপজেলায় একই দিনে বজ্রপাতে ৩ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। প্রচণ্ড দাবদাহের পর দুপুরে হঠাৎ আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে শুরু হয় ভয়াবহ বজ্রপাত। বেলা ১টায় নরসিংদী সদর উপজেলার মহিষাশুরু ইউনিয়নে মহিষাশুরা গ্রামে আবদুল করিম (৫০) নামে এক কৃষক আকাশ মেঘাচ্ছন্ন দেখে দৌড়ে গরু আনতে যায় স্থানীয় বানিয়ার খাল এলাকায়। এ সময় হঠাৎ তার ওপর বজ্রপাত ঘটলে ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়। একই সময় সদর উপজেলার নজরপুর ইউনিয়নের চম্পকনগর গ্রামে ফুলি বেগম (৩২) নামে এক গৃহবধূ বজ্রপাতে মারা যায়। ঘটনার সময় প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে গ্রামের চান্দু মিয়ার স্ত্রী এক সন্তানের জননী ফুলি বেগম পাশের জমিতে ছাগল আনতে গেলে তার ওপর বজ্রপাত ঘটে। এতে ফুলি বেগম ঘটনাস্থলেই মারা যায়। একই দিন দুপুরে রায়পুরা উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের ফকিরচর গ্রামে বজ্রপাতে নিহত হয়েছে জ্যোৎস্না বেগম (৩৮) নামে এক গৃহবধূ।
তাড়াইল (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, বৃহস্পতিবার কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে বজ্রপাতে মমতা বেগম (৪০) নামে এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার জাওয়ার ইউনিয়নের ইছাপশর গ্রামে। তিনি জাওয়ার ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল কদ্দুছের স্ত্রী। জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টার সময় ইছাপশর গ্রামের নিজ বাড়ির সামনে ধান শুকানোর কাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতে আক্রান্ত হন। পরে স্থানীয় লোকজন তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
স্টাফ রিপোর্টার, হবিগঞ্জ থেকে জানান, হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বজ্রাঘাতে ১ জন নিহত ও ৫ জন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকালে এই ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকালে হবিগঞ্জের সর্বত্র ঝড়, বৃষ্টিপাত ও বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এ সময় ধান কাটার কাজ করছিলেন বানিয়াচঙ্গ উপজেলার প্রতাপপুর গ্রামের জালাল মিয়ার ছেলে হাবিবুর রহমান (৩৫)। বজ্রপাতে হাবিব ঘটনাস্থলেই মারা যায়। বজ্রপাতে আহত বানিয়াচঙ্গ উপজেলার চিলাপাঞ্জা গ্রামের আনোয়ার, দোয়াখানীর আ. আহাদ ও তাতাড়ী মহল্লার হামদু মিয়াকে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বানিয়াচঙ্গ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি হওয়া আহত দুইজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
নাটোর প্রতিনিধি জানান, নাটোরে লালপুরে বৃহস্পতিবার বিকালে হঠাৎ বজ্রপাতে এক নারীসহ দুইজন নিহত এবং অপর এক নারীসহ দুইজন আহত হয়েছেন। আহতদের লালপুর উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে হঠাৎ বজ্রপাতে নাটোরের লালপুর উপজেলার উত্তর লালপুরের বান্টু আলীর স্ত্রী সাহারা বানু (৪৮) ও রঘুনাথপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে মোবারক আলী (৩০) ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন। একই সময়ে উপজেলার মোহরকয়া গ্রামে আবদুস সালামের স্ত্রী পাপিয়া খাতুন (২৫) ও কাজীপাড়ার জনৈক মোহাম্মদ আলীর ছেলে সাজেদুল ইসলাম বজ্রপাতে আহত হয়েছেন। আহত দুইজনকেই লালপুর উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল হাই তালুকদার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি জানান, পাবনার চাটমোহর উপজেলার পার্শ্বডাঙ্গা ইউনিয়নে বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বৃষ্টির সময় বজ্রাঘাতে ২ জন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- পার্শ্বডাঙ্গা ইউনিয়নের রাউৎকান্দি গ্রামের আলহাজ ফকির উদ্দিন মোল্লা (৭০) ও বারকোনা গ্রামের মৃত ইমান প্রামাণিকের ছেলে ফজলু হোসেন (৪০)। পার্শ্বডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল করিম তারেক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ফকির উদ্দিন মোল্লা পার্শ্বডাঙ্গা হাট থেকে বাড়ি ফেরার পথে সজনাই মাঠ এলাকায় বৃষ্টির সময় বজ্রাঘাতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। অপরদিকে মল্লিকবাইন মাঠে ধান কেটে বাড়ি ফেরার পথে বজ্রাঘাতে ফজলু হোসেনের মৃত্যু হয়।
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ ও উল্লাপাড়া উপজেলায় বজ্রপাতে নারী ও শিশুসহ ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় ২টি গরুও মারা গেছে। নিহতরা হলেন- রায়গঞ্জ উপজেলার চকপুর গ্রামের নুর নবীর শিশুকন্যা নূপুর খাতুন (৮), বৈকণ্ঠপুর গ্রামের দারুজ্জামানের ছেলে কৃষক আব্দুল মোতালেব (৪২) ও হাসিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক আনোয়ার হোসেন (৪৫) এবং উল্লাপাড়া উপজেলার শিমলা গ্রামের আব্দুল লতিফ (৩৫) ও বেতুয়া গ্রামের গৃহবধূ শাহিনুর বেগম (৩০)।
স্থানীয় পাঙ্গাসী ইউনিয়নের সদস্য মাহে আলম জানান, বৃহস্পতিবার বিকালে শিশু নূপুর বাড়ির পাশে ইটভাটার কাছে খড়ি কুড়াচ্ছিল। এমন সময় বজ্রসহ বৃষ্টি শুরু হলে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। একই সময়ে মোতালেব গ্রামের মাঠে গরু আনতে গেলে বজ্রপাতে সেও ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এ সময় তার ২টি গরুরও মৃত্যু হয়।
এদিকে সদর উপজেলার বাগবাটি ইউনিয়নের বেজগাতি গ্রামের বাসিন্দা ও রায়গঞ্জের হাসিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বজ্রপাতে নিজ মাদরাসা মাঠের মধ্যেই মারা যায়। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যান। এ ঘটনায় ওই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে বলে ইউপি সদস্য মাহে আলম জানান।
অপরদিকে উল্লাপাড়া থানার ওসি দেওয়ান কৌশিক আহমেদ জানান, বৃহস্পতিবার বিকালে বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সময় উপজেলার শিমলা গ্রামের আব্দুল লতিফ ও বেতুয়া গ্রামের শহিনুর বেগম মারা গেছেন।
কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, কাপাসিয়ার তারাগাঁও ইউনিয়নের উত্তরখামের গ্রামে আব্দুর রশিদ ও ঘাপটিয়া ইউনিয়নের সিংগুয়া গ্রামে রুবিনা আক্তার মারা যান।